ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: পিএসসি বলছে, নন-ক্যাডার নিয়োগের ক্ষেত্রে যে সমস্যা শুরু হয়েছে ও আন্দোলন চলছে, এ সমস্যা সমাধানে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) নয়; বরং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে। কেননা, বিধিমালা সংশোধন বা বিয়োজন করার এখতিয়ার জনপ্রশাসনের। পিএসসি কেবল সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে।
তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, আন্দোলনকারীদের সমস্যা সমাধানে তারা বিধিমালা বাস্তবায়নেই সমাধান দেখছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রথম আলোকে এসব কথা জানানো হয়েছে। তবে বিশেষ কারণে কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।
জানতে চাইলে পিএসসির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিধিমালা সরকার করেছে। পিএসসি কেবল পরীক্ষা নেওয়া ও নিয়োগের সুপারিশ করার দায়িত্বে। এর বাইরে পিএসসির কিছু করার নেই। আন্দোলনকারীদের এটা বুঝতে হবে। তাঁরা পিএসসির ওপর চাপ দিলেই পিএসসি কিছু করতে পারবে না। যদি এ বিষয়ে সরকারের যে নির্দেশনা বা সংযোজন-বিয়োজন পিএসসি বাস্তবায়ন করবে।
পিএসসির এ বক্তব্য নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নন-ক্যাডার নিয়োগের সঙ্গে যুক্ত একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা যে ইস্যুতে আন্দোলন করছে, তা আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। তাদের জন্য যা ভালো হয়, সেটিই আমরা করার চেষ্টা করছি।’
নীতিমালা বাস্তবায়ন হলেই সবাই লাভবান হবে বলে দাবি করেন ওই কর্মকর্তা।
ছয় দফা দাবিতে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সামনে নন-ক্যাডার চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি চলছেই। গত সোমবার বিকেলে পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন অফিস থেকে বের হওয়ার সময় তাঁর গাড়ি যেতে বাধা দেওয়া হয়। একপর্যায়ে কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। রোববার (৩০ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের কর্মসূচি চলবে। আগের পদ্ধতিতে নন-ক্যাডার নিয়োগসহ তাঁদের দাবিগুলো মেনে নিতে পিএসসির প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
এর আগে একই দাবিতে গত ০৬ অক্টোবর পিএসসির সামনে, ১৬ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন করেছিলেন তাঁরা। একজন চাকরিপ্রার্থী মঙ্গলবার (০১ নভেম্বর) বলেন, ‘তিন দিন ধরে টানা পিএসসির সামনে আমরা আন্দোলন করছি, কিন্তু এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান বা আর কেউ আমাদের সঙ্গে কথাই বলেননি। আমরা পিএসসির ডাকের অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু তাঁরা বেকারদের হতাশ করেছেন।’
আরেক চাকরিপ্রার্থী বলেন, আগের নিয়মে নন-ক্যাডার নিয়োগে কোন সমস্যা হয়নি। অনেকে নন-ক্যাডার থেকে চাকরি পেয়েছেন। আগের বছরগুলোয় নন-ক্যাডার নিয়োগে পিএসসি যে নিয়ম অনুসরণ করেছে, তাতে পিএসসি বেকারবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু সেই নিয়ম থেকে সরে এসে পিএসসি তরুণদের বেকারত্ব বাড়ানোর মতো কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন এই চাকরিপ্রার্থী। সে জন্য ৪৪তম বিসিএস পর্যন্ত আগের নিয়মে নন-ক্যাডার নিয়োগের পদ্ধতি বহাল চান তাঁরা।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে নতুন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন-ক্যাডার পদের সংখ্যাও উল্লেখ থাকবে। তবে চলমান ৪০, ৪১, ৪৩ ও ৪৪তম বিসিএসের ক্ষেত্রে কোন বিসিএসের সময় কোন শূন্য পদের চাহিদা এসেছে, তা পর্যালোচনা করে মেধার ভিত্তিতে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হবে।
চাকরিপ্রার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞপ্তির পর ৪০ থেকে ৪৪তম বিসিএস পর্যন্ত বিজ্ঞপ্তির তারিখ অনুসারে পদসংখ্যা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত বাতিল, ৪০তম বিসিএসে উত্তীর্ণ নন-ক্যাডার অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা প্রার্থীদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক প্রার্থীকে নন-ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ, যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পিএসসি ৩৪ থেকে ৩৮তম বিসিএস নন-ক্যাডার তালিকা প্রকাশ করেছে, সেই একই প্রক্রিয়ায় উদ্ভূত সমস্যার সমাধান এবং গত এক যুগে পিএসসি যে স্বচ্ছ, নির্ভরযোগ্য ও বেকারবান্ধব প্রতিষ্ঠান ছিল, সে ধারা অব্যাহত রাখা।
চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পিএসসি নিজেদের কোন সিদ্ধান্ত চাকরিপ্রার্থীদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে না বরং সরকারের বিধিতে যা বলা আছে, সেটিই বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। নীতিমালা অনুসারে নিয়োগ দেওয়া না-দেওয়া পিএসসির ইচ্ছা অনুসারে হবে না। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলতে আন্দোলনকারীদের পরামর্শ দেন তিনি। প্রথম আলো।