বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪১২৫ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: বন্যার কারণে দেশে চার হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও উত্তরবঙ্গের ১৭টি জেলার ৮৩টি উপজেলায় অবস্থিত। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান সংস্কার ও মেরামতে প্রায় ১০০ কোটি টাকার মতো লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বন্যায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আংশিক আবার কোনোটি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদীগর্ভে চলে গেছে বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান ব্যবহার হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে। পানিবন্দি হয়ে পড়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আসবাবপত্র, বই-খাতাসহ প্রয়োজনীয় জিনিস নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে স্কুলের রাস্তা, খেলার মাঠ ও আশপাশের স্থান।

এদিকে বন্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে সেল গঠন করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। এর মাধ্যমে মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য দেওয়া হচ্ছে।

ডিপিই সূত্র জানায়, মঙ্গলবার (২৮ জুন) পর্যন্ত বন্যায় দেশের পাঁচ বিভাগের ৮৩টি উপজেলায় চার হাজার ১২৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জে এক হাজার ৪৭৫টি, মৌলভীবাজারে ১২৪, হবিগঞ্জে ৩৭০ ও সিলেটের ৮৮৬টি বিদ্যালয়। এক হাজার ৭৯৮টি বিদ্যালয়কে তৈরি করা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে।

এছাড়া প্লাবিত হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুরে ২৭টি, নেত্রকোনায় ৫৭৮, শেরপুরে ১৮ ও ময়মনসিংহের ৫৭টি বিদ্যালয়।

রংপুর বিভাগে লালমনিরহাটে ১৪টি, কুড়িগ্রামে ২৯৪, গাইবান্ধায় ১১১, নীলফামারীতে ১১ ও রংপুরে একটি বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে।

অন্যদিকে বন্যায় ডুবেছে ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ ও মানিকগঞ্জে ১৭২টি এবং চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী ও খাগড়াছড়িতে সাতটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

ডিপিই’র পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের উপ-পরিচালক মো. নুরুল আমিন বলেন, প্রাথমিকভাবে সারাদেশে বন্যাকবলিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত চার হাজার ১২৫টি প্রতিষ্ঠানের তথ্য মিলেছে। তবে চূড়ান্তভাবে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনো করা হয়নি। পানি নেমে গেলে পাওয়া যাবে চূড়ান্ত হিসাব।

ডিপিই’র আরেক কর্মকর্তা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান মেরামত ও সংস্কার এবং ক্ষেত্রবিশেষে নতুন ভবন নির্মাণে অন্তত ১০০ কোটি টাকা লাগতে পারে। এটা প্রাথমিক হিসাব। পরিপূর্ণ হিসাব তৈরি করতে আরও দুই সপ্তাহ সময় লাগবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বন্যায় একাডেমিক ক্ষয়ক্ষতি পূরণে অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি কোনো শিক্ষার্থীর বই নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তাকে দেওয়া হবে নতুন বই। জেলায় বাফার (দুর্যোগকালীন মজুত) স্টকে চাহিদার ২ শতাংশ বই সংরক্ষিত আছে। যদি কোনো জেলায় এতেও চাহিদা পূরণ না হয়, তাহলে পার্শ্ববর্তী জেলা বা ঢাকা থেকে বইয়ের ব্যবস্থা করা হবে।

জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মুহিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সবশেষ হিসাব অনুযায়ী এ পর্যন্ত চার হাজারের অধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান সংস্কার ও মেরামতের জন্য বরাদ্দ রয়েছে পর্যাপ্ত অর্থ। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠান পাঠদানের উপযোগী করে তোলা হবে।

তিনি বলেন, বন্যায় কোনো প্রতিষ্ঠান বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলে জরুরিভাবে তা মেরামত করা হবে।