ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয় গত ৩০ ডিসেম্বর। ৯টি সাধারণ বোর্ড, মাদরাসা এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে মোট ২২ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেন ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৬ জন। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ শিক্ষার্থী। পাসের হার ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। গত বছর এ হার ছিল ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। সেই হিসাবে এবার পাসের হার বেড়েছে ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ।
এরই মধ্যে গত ৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির অনলাইন আবেদন। শেষ হবে ১৫ জানুয়ারি। তবে চার্চ পরিচালিত কলেজগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে নিজস্ব পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে। এবারও ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে কলেজ পাবে শিক্ষার্থীরা। ক্লাস শুরু হবে ২ মার্চ থেকে।
জানা গেছে, এসএসসিতে ভালো ফল করলেও ভালো কলেজে ভর্তি হওয়া নিশ্চিত নয় শিক্ষার্থীদের। একইসঙ্গে আসন সংকটের বিষয়টিও বারবার সামনে আসছে।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে স্কুল ও কলেজের সংখ্যা (যেখানে একাদশ শ্রেণি রয়েছে) ২ হাজার ৭৭৮টি। এছাড়া ডিগ্রি, অনার্স ও মাস্টার্স কলেজসহ সব মিলিয়ে সরকারি-বেসরকারি কলেজ রয়েছে ৪ হাজার ৬৯৯টি। এর বাইরে আড়াই হাজারের বেশি মাদরাসা ও দুই হাজারের বেশি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সব মিলিয়ে সারাদেশে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কলেজে একাদশ শ্রেণিতে আসন রয়েছে ২৬ লাখ ৯ হাজার ২৪৯টি। অন্যদিকে এবার পাস করেছে ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৬ জন। সে হিসেবে কলেজগুলোতে আসন খালি থাকবে পাঁচ লাখ ১২ হাজার ৭০৩টি।
জানা গেছে, জিপিএ-৫ এর বাইরে এবার উত্তীর্ণদের মধ্যে প্রায় সোয়া ছয় লাখ শিক্ষার্থীর ফল জিপিএ-৪ থেকে জিপিএ-৫ এর মধ্যে। যেহেতু শুধু ফলাফলের ভিত্তিতেই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ থাকছে, ফলে এসব শিক্ষার্থীদেরও চাওয়া থাকবে তুলনামূলক ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া। এতে নামিদামি কলেজগুলোতেও তুলনামূলকভাবে ভর্তির চাপ বাড়বে।
যদিও বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসএসসি-সমমানে পাস করা শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও আসন নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। সবাই মেধাক্রম অনুযায়ী নির্বিঘ্নে ভর্তি হতে পারবে। তবে ভালো কলেজের সংখ্যা সারাদেশে পাঁচশ’র বেশি নয়। এবার যে সংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে, তার তুলনায় ভালো কলেজগুলোতে মোট আসন সংখ্যা এক লাখেরও কম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক আবু তালেব মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, মেধাবীরা যে প্রতিষ্ঠানে যায়, সেই প্রতিষ্ঠানই ভালো করে। অজপাড়াগাঁয়ের কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করালেও তারা খারাপ রেজাল্ট করবে না। এরপরও অনেক শিক্ষার্থী সেরা বিবেচিত হাতেগোনা কয়েকটি কলেজে ভর্তির চেষ্টা করে। এর ফলে ভালো কলেজে ভর্তির জন্য প্রতিযোগিতা তৈরি হয়।
তিনি বলেন, কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিং হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীর চাপে তারা অন্যত্র শাখা খুলছে। সেসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা ভর্তির জন্য পাগলের মতো হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। কিন্তু সেখানে ভর্তির পর বাস্তব চিত্র কি হয়? আমাদেরই দেখাশোনা করতে হয়, প্রাইভেট পড়াতে হয়, কোচিং করাতে হয়। তারপর তারা ভালো করে। কিন্তু নাম হয় প্রতিষ্ঠানের।
মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, প্রযুক্তির বদৌলতে গ্রাম আর শহরের অসমতা অনেক কমে আসছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের কলেজ থেকেও শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করছে। শিক্ষকদের অনেকেই রাজধানীর ভালো একটি প্রতিষ্ঠান থেকে বদলি হয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাচ্ছেন আবার প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক শিক্ষক বিভিন্ন মাধ্যমে রাজধানীর সেরা কোনো প্রতিষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। তাই আমার মনে হয়, দেশের সব কলেজেই ভালো শিক্ষক রয়েছেন। কিন্তু তাদের প্রচার নেই। তাই এসব কলেজে শিক্ষার্থীদের আবেদন কম। আমরা কলেজের বিচারে শিক্ষকদের বিবেচনা করি, সেজন্য এই দশা। কাজেই দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।