করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ এড়াতে চলতি বছরও সরকারি-বেসরকারি স্কুলের ভর্তি কার্যক্রম লটারির মাধ্যমে সম্পন্ন করতে চায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এই লক্ষ্য নিয়ে স্কুল ভর্তি নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। চলতি সপ্তাহে এ ব্যাপারে সভা করে নীতিমালা চূড়ান্ত করা হতে পারে। তবে সব শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির পক্ষে নন রাজধানীর শীর্ষ প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন বছর সামনে রেখে নভেম্বর থেকে দেশের সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হচ্ছে। এরই মধ্যে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রস্তুতি নিয়েছে বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো। রাজধানীর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি ফরম বিতরণ হবে ডিসেম্বরের শুরুতে এবং মাসের শেষ দিকে লটারি বা ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। আবেদন কার্যক্রম চলবে অনলাইনে।
সাধারণত প্রতি বছর স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণিতে লটারি অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া দ্বিতীয় থেকে নবম শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
মাউশি সূত্রে জানা যায়, গত বছরের মতো এবারো ভর্তি পরীক্ষার পরিবর্তে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত লটারির মাধ্যমে ভর্তি সম্পন্ন করতে নীতিমালা সংশোধন করা হচ্ছে। করোনার ঝুঁকি এড়াতে সব শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। চলতি সপ্তাহে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সভা করে ২০২২ সালের স্কুল ভর্তি নীতিমালা চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে। গত সপ্তাহের বুধবার এ সভা হওয়ার কথা থাকলেও এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনের কারণে ওই সভা বাতিল হয়। চলতি সপ্তাহের যেকোনো দিন এ সভা হতে পারে। গত বছর সরকারি-বেসরকারি স্কুলে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি সম্পন্ন হয়।
জানতে চাইলে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, আগামী বছরের নীতিমালা এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। এ বিষয়ে কাজ শুরু হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নীতিমালা চূড়ান্ত করে ঘোষণা দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, করোনার মধ্যে স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তিতে কীভাবে ঝুঁকি এড়ানো যায় সে বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ কারণে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত লটারির মাধ্যমে ভর্তি করতে প্রস্তাব দেওয়া হবে। এ প্রস্তাব গৃহীত হলে আগামী বছরের শিক্ষার্থী ভর্তি লটারিতে করা হবে।
এদিকে মাধ্যমিকে লটারির মাধ্যমে ভর্তি করা হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নানা ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক কামরুন্নাহার। তিনি বলেন, লটারির মাধ্যমে সব ক্লাসে ভর্তি করা হলে শিক্ষার্থী বাছাই করে নেওয়া সম্ভব হয় না।
তিনি বলেন, অনেকে লটারিতে ভর্তি হলে পরে টিউশন ফি পরিশোধ করতে পারে না। যেহেতু শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির ওপর নির্ভর করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যয় ও বেতন-ভাতা দেওয়া হয়। তাই কেউ যদি পাওনা পরিশোধ না করে তাহলে প্রতিষ্ঠানে সংকট তৈরি হয়। তবে লটারির মাধ্যমে ভর্তি হলে তদবির কিংবা অন্য চাপ থাকে না।
অন্যদিকে রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম বলেন, সব ক্লাসে লটারিতে ভর্তি করলে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লটারিতে ভর্তি হতে পারে। কিন্তু এর পরবর্তী ক্লাসে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি করালে শিক্ষার্থী বাছাইয়ের মাধ্যমে ভর্তি করানো সম্ভব হয়।
তিনি বলেন, স্কুল পর্যায়ের বড় ক্লাসে লটারিতে ভর্তি করালে ভালো মানের শিক্ষার্থী পাওয়া যায় না। উপরের ক্লাসে শিক্ষার্থী ভর্তির বেশি চাপ থাকে না, সেখানে সহজে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব, প্রয়োজনে এক ক্লাসের পরীক্ষা ভাগ ভাগ করে কয়েকদিন আয়োজন করা যেতে পারে। পরীক্ষার মাধ্যমে ভালো শিক্ষার্থী ভর্তি না করালে প্রতিষ্ঠানের মান ধরে রাখাও কঠিন হয়ে পড়ে। সব ক্লাসে লটারিতে ভর্তি হলে তো বিশ্ববিদ্যালয়েও লটারিতে ভর্তি করানো যেতো, সেখানে কেন পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে- এমন প্রশ্ন রাখেন এই অধ্যক্ষ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (সরকারি বিদ্যালয়) সৈয়দ ইমামুল হোসেন বলেন, সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি নীতিমালার কাজ শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহে এ সংক্রান্ত নীতিমালা চূড়ান্ত করা হতে পারে। নীতিমালায় গত বছরের চেয়ে এ বছর বড় কোনো পরিবর্তন আসছে না বলে জানান তিনি।