ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: দেশের শিক্ষার গুণগত মান-ব্যবস্থা নির্ধারণসহ শিক্ষাক্রম পরিমার্জন ও আইনগত স্বীকৃতির জন্য ‘ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশন্স ফ্রেমওয়ার্ক’ চূড়ান্ত করা হয়েছে। এটি অনুসরণ করে শিক্ষার মান ও ব্যবস্থা নির্ধারণসহ শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনা হবে।
রোববার (১২ মার্চ) এটি চূড়ান্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এর ফ্রেমওয়ার্কটি প্রকাশ করা হয়েছে।
দেশের শিক্ষা, দক্ষতা, যোগ্যতা বা সক্ষমতার স্বীকৃত কোনো কাঠামো না থাকার কারণে অনেকসময় আমাদের দক্ষতা বা অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন দেশে-বিদেশে কর্মক্ষেত্র বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সঠিকভাবে হয় না। বৈশ্বিক মানের সঙ্গে ভারসাম্যের সীমাবদ্ধতা দূর করতে বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি অনুধাবন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ২০২১ সালের ৩ জুন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত এক বৈঠক করা হয়। এরপর এটির রূপরেখা তৈরিতে কাজ শুরু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কর্তৃক আয়োজিত আন্তর্জাতিক দক্ষতা সম্মেলনে বাংলাদেশের জন্য একটি জাতীয় যোগ্যতা কাঠামো (বিএনকিউএফ) থাকা অত্যাবশ্যক বলে উল্লেখ করেন।
ফ্রেমওয়ার্কের প্রক্রিয়া-
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের উদ্যোগে আইএলও পরিচালিত ‘স্কিলস-২১’ প্রকল্পের কারিগরি সহযোগিতা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে তিন বছর ধরে বিএনকিউএফ প্রস্তুত করা হয়। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সমন্বয়ের মাধ্যমে বিএনকিউএফের কাঠামো চূড়ান্তকরণের কাজটি সম্পন্ন হয়। ২০১১ সালে আইএলও এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকার কারিগরি শিক্ষার জন্য যে কাঠামো তৈরি করেছিল, তার ভিত্তিতেই বিএনকিউএফের কাঠামো প্রস্তুত করা হয়। কারিগরি শিক্ষার সেই কাঠামোটি জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি-২০১১-এ উল্লেখ আছে।
২০২১ সালের ৩ জুন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত এক বৈঠকে বাংলাদেশ ‘ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশন্স ফ্রেমওয়ার্ক’ চূড়ান্ত করা হয়। গুণগত মান-ব্যবস্থা নির্ধারণসহ শিক্ষাক্রম পরিমার্জন ও আইনগত স্বীকৃতির মাধ্যমে এটি পর্যায়ক্রমে কার্যকর করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
বিএনকিউএফ কি?
বাংলাদেশ কোয়ালিফিকেশনস ফ্রেমওয়ার্ক মূলত: আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি সমন্বিত দক্ষতার মানদণ্ড/ রূপরেখা- যেখানে জ্ঞান, দক্ষতা ও সক্ষমতার উন্নয়ন, শ্রেণিবিন্যাস ও স্বীকৃতিকে সর্বসম্মতভাবে কয়েকটি আপেক্ষিক স্তরে সমন্বয় করা হয়েছে। এ কাঠামোর ১০টি স্তরে উচ্চশিক্ষা, সাধারণ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষার কার্যকর সমন্বয় ও আন্তঃসংযোগের ব্যবস্থাও রয়েছে।
ফলে কেউ চাইলে একটি শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে আরেকটিতে তার অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতাকে অক্ষুণ্ণ রেখেই স্থানান্তরিত হতে পারবে। এ কাঠামোটি আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে যেসব শিক্ষা- তার স্বীকৃতি ও জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগও নিশ্চিত করবে। যোগ্যতাভিত্তিক প্রশিক্ষণ, মূল্যায়ন, সনদায়নের পাশাপাশি পূর্ব অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার স্বীকৃতি এবং যোগ্যতা কাঠামো অনুযায়ী স্থানান্তরের ব্যবস্থাও এতে বিদ্যমান।
বিএনকিউএফে যা যা আছে-
(ক) কাঠামো : সাধারণ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষায় স্তরভেদে যোগ্যতার পরিমাপক এবং এক শিক্ষাধারা থেকে আরেক শিক্ষাধারায় কোন স্তর থেকে কোন স্তরে যাওয়া যাবে তার রূপরেখা।
(খ) জীবনব্যাপী শিক্ষা : আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে সারা জীবনব্যাপী অর্জিত যে শিক্ষা ও দক্ষতার স্বীকৃতি।
(গ) মড্যুলার বা ইউনিটাইজড সিস্টেম : যোগ্যতাভিত্তিক উপকরণ তৈরি, প্রশিক্ষণ, মূল্যায়ন, সনদায়ন এবং সেইসঙ্গে পূর্ব অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার স্বীকৃতি এবং যোগ্যতা কাঠামো অনুযায়ী একটি ব্যবস্থা থেকে অন্য ব্যবস্থায় গমনাগমন।
(ঘ) গুণগত-মান ব্যবস্থা : জাতীয় নিবন্ধীকরণ পদ্ধতি, ইনস্টিটিউট ও কার্যক্রম এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের স্বীকৃতি।
১৮ নভেম্বর ২০২১ কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আয়োজনে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশনস ফ্রেমওয়ার্কের চূড়ান্তকৃত রিপোর্টটি মন্ত্রী পরিষদে অনুমোদিত হয়। অনুমোদনের পর নানাবিধ পদক্ষেপের মাধ্যমে এটি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।