ফার্মেসি কাউন্সিল অব বাংলাদেশের নির্ধারিত শর্ত না মানায় ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়কে ফার্মেসি বিভাগের অনার্স কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে চারটি সরকারি এবং বাকি নয়টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
সেই সঙ্গে ফার্মেসি শিক্ষার মানোন্নয়নে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সময় বেঁধে দিয়ে চূড়ান্ত নোটিশও দিয়েছে কাউন্সিল।
নোটিশে দেওয়া শর্তগুলো হলো- শিক্ষক সংকট কাটানো, পাঁচটি ল্যাবরেটরি স্থাপন, প্রয়োজনীয় রাসায়নকি সামগ্রী পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখা রাখা, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি তৈরিসহ প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে হবে। এ সময়সীমার পর ফার্মাসি বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এসব শর্ত পূরণ করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে।
যে চারটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিষেধাজ্ঞার খাঁড়ায় পড়েছে, সেগুলো হলো- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গোপালগঞ্জ এবং পাবনা বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।
আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো- আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, স্ট্যামফোর্ড, আশা ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, বরেন্দ্র ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ওয়াল্ড ইউনিভার্সিটি এবং টেস্ট ইউনিভার্সিটি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ফার্মেসি কাউন্সিল সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করে চলতি মাসে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব নির্দেশ অমান্যকারী কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি ফার্মেসি অনার্স কোর্সে (বি.ফার্স) শিক্ষার্থী ভর্তি করে তাহলে সেসব শিক্ষার্থীর রেজিষ্ট্রেশন দেবে না কাউন্সিল। এমনকি শিক্ষার্থী পাস করার পর ‘পেশাগত সনদ দেওয়া হবে না’ বলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে সংস্থাটি।
ফার্মেসি কাউন্সিল ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সূত্র জানা গেছে, সারাদেশে ৪৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল। সংস্থাটির প্রতিনিধিরা চলিতি বছর ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করে ল্যাব সংকট, ল্যাবের যন্ত্রপাতি অকেজো, শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ সংকটসহ নানা কারণে সরকারি-বেসরকারি ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের বি.ফার্স কোর্সের অ্যাক্রেডিটেশন নবায়ন স্থগিত করেছে।
এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি শিক্ষার মান উন্নয়নে বেশ কিছু সুপারিশ ও নির্দেশনা দিয়েছে। দুই থেকে তিনমাসের মধ্যে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হলে আগামী ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে বি.ফার্ম কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে হবে।
এর মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে আগামী ৩১ অক্টোবর ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সুপারিশ ব্যস্তবায়নে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তবে মানবিক দিক বিবেচনা করে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি শিক্ষার্থীদের রেজিষ্ট্রেশন দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ফার্মাসি কাউন্সিলের সচিব মোহাম্মদ মাহবুবুল হক বলেন, এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সতর্কমূলক চিঠি দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তারা কর্ণপাত করেনি। এবার চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ- উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম মোস্তফা কামাল খান বলেন, কাউন্সিল কিছু শর্ত দিয়েছে। রুম বড় বড় লাগবে, কিছু ইকুইপমেন্ট থাকতে হবে। এসব সঠিক ভাবে না হওয়ায় তারা ভর্তি আপাতত স্থগিত করেছে। এটা ঠিক নিষেধাজ্ঞা নয়।
এর আগে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থীরা শিক্ষক সংকটের কারণে বিভাগে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে ২০০ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন মাত্র দু’জন।
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের রেজিস্ট্রার এ এফ এম আক্তারুজ্জামান কায়সার বলেন, ‘ফার্মেসি কাউন্সিল পরিদর্শন করে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়েছে। আমরা চিঠি পেয়েছি। তারা কিছু বিষয়ে আমাদের গুরুত্ব দিতে বলেছে, আমরা সেসব বিষয়ে নজর দেব।’
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, অ্যাক্রেডিটেশন বডি হিসেবে ফার্মাসি কাউন্সিলের পূরণীয় শর্ত প্রতিপালন করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাধ্য। পর্যাপ্ত ল্যাব, শিক্ষক, বই ছাড়া কখনও প্রকৃত জ্ঞানার্জন সম্ভব হবে না। ডিগ্রি প্রাপ্তির চেয়েও জ্ঞানার্জন ও দক্ষতা অর্জন জরুরি। আশা করছি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ বিষয়ে যথাযথ গুরুত্ব দেবে।