ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: সাতক্ষীরায় তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার বই বিতরণের পর তা ফেরত নেওয়া হয়েছে। বইটির প্রচ্ছদে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় এমন বিষয়বস্তু পাওয়ায় বুধবার বেলা ১১টার মধ্যে তা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে উপজেলা শিক্ষা অফিসে ফেরত পাঠানো হয়।
একইসঙ্গে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ০১ জানুয়ারি উৎসবমুখর পরিবেশে সারাদেশে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়। তবে তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের কিছু বইয়ের মলাটের নিচের অংশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দেবী দুর্গার ছবি রয়েছে। এটি হিন্দু ধর্ম শিক্ষার ইংরেজি ভার্সনের বইয়ের মলাট। দ্রুত বইটির ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল সমালোচনা। বিষয়টি নজরে আসার পর পরই তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বই তুলে নিতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে এনসিটিবি।
জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘এটা ছাপাখানার ভুল। ভুলটা হলো- ইসলাম শিক্ষা বইয়ের উল্টো পাশে হিন্দু ধর্ম শিক্ষা বইয়ের ইংরেজি ভার্সনের মলাট রয়ে গেছে। এটা জানার পর পরই আমরা বই তুলে নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। শুনেছি ৪০টি বইয়ে এমন ভুল হয়েছে। সাতক্ষীরার একটি স্কুলে এমন ভুল ছাপা বই পাওয়া গেছে। নতুন করে বই ছাপিয়ে দ্রুত শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তবে এনসিটিবির বিতরণ শাখার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, এখন ওয়েব মেশিনে বই ছাপা হয়। যদি ভুল হয়ে থাকে, তাহলে কয়েক হাজার বইয়ে একই রকম ভুল হওয়ার কথা। কিন্তু অল্প কিছু বইয়ে এ ধরনের ভুল হওয়ায় সন্দেহ বাড়ছে। এটা প্রেসের ভুল না কি অন্য কোনো কিছু আছে, সেটা তদন্ত করা প্রয়োজন।
সদর উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ০১ জানুয়ারি বই উৎসব হয়েছে। ওই দিনই সব বই বিতরণ করা হয়। রাত ১১টার দিকে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হোয়াটসঅ্যাপে একটি ম্যাসেজ দেন। যেখানে ২ তারিখ বেলা ১১টার মধ্যে তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার বই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফেরত নিয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে পাঠাতে বলা হয়। আমরা পর দিন দ্রুত স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বই ফেরত নিয়ে ১১টার মধ্যে শিক্ষা অফিসে পাঠিয়ে দিই। তৃতীয় শ্রেণির ক্লাস বেলা ১২টা থেকে শুরু হয় বিধায় আমরা শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বইগুলো ফেরত আনি।
প্রত্যাহার করা বইয়ে আসলে কী সমস্যা ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রণজনিত ত্রুটি দেখা গিয়েছিল। আমরা আসলে অতো দেখিনি, তড়িঘড়ি করে বইগুলো সংগ্রহ করে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।
অভিভাবক আলমগীর হোসেন বলেন, আমার মেয়েকে ০১ তারিখে বই দেওয়া হয়েছিল। ০২ তারিখ সকালেই তা ফেরত নেওয়া হয়। শুনেছি বইয়ের মলাটে উল্টাপাল্টা কি যেন ছিল। আমি দেখিনি।
তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, সব সময় শুনি প্রশ্নে ভুল, বইয়ে ভুল! আসলে দায়িত্বপ্রাপ্তরা কী করে, তাদের শাস্তি হয় না কেন? বিষয়গুলো খুবই অস্বস্তিকর। মানুষের বিশ্বাসে আঘাত লাগে, এমন ঘটনা ঘটায় কারা? তাদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। আর এগুলো বিতরণের আগে চেক করা যায় না?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাতক্ষীরায় তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার বই বিতরণের পর ৩১ হাজার ৪৭২টি বই ফেরত নেওয়া হয়েছে।
সদর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল গণি বলেন, সদর উপজেলায় আট হাজার ১৫০টি বই বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে ২৩৩টি বইয়ের মলাটের ভেতরে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় এমন বিষয়বস্তু পাওয়া যায়। তবে, সব বই প্রত্যাহার করা হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসনে আরা কারিমি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো কিছু বলা সম্ভব না।