।। নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর যেমন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করেন, বাস্তব বিপদের শঙ্কা তার চেয়ে অনেক বেশি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগের সব হিসাব বাদ। মানবজাতির বিপদ ঘনিয়ে আসছে ধারণার চেয়েও বহুগুণ দ্রুতবেগে। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃসরকারি প্যানেলের (আইপিসিসি) বলছে, গত আড়াই দশকে প্রতিবছর সমুদ্রগুলো যে পরিমাণ তাপ শোষণ করেছে, তা বিশ্বজুড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত তাপের প্রায় ১৫০ গুণ। এটি আগের ধারণার চেয়েও ৬০ শতাংশ বেশি।
গবেষকরা বলছেন, চলতি শতকের জন্য বিজ্ঞানীরা বৈশ্বিক উষ্ণতার যে নিরাপদ মাত্রা নির্ধারণ করে রেখেছিলেন, সমুদ্রের এ বাড়তি তাপ শোষণের তথ্য জানার ফলে ওই মাত্রা এখন বাতিল করতে হবে। আগের নির্ধারিত নিরাপদ মাত্রাকে এখন আর নিরাপদ বলা যায় না। তাছাড়া তাপমাত্রা কমানোর যে লক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা বাতিল হয়ে যাচ্ছে, ফলে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে।
নতুন এ গবেষণা কেবল সমুদ্রেরই বেশি তাপ শোষণের তথ্য জানাচ্ছে না, মানুষের নিঃসরিত উষ্ণ গ্যাস যে আমাদের ধারণার চেয়েও বেশি তাপ উৎপন্ন করছে, তাও বোঝাচ্ছে। এটা বলছে, পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইডের যে ঝুঁকিতে আছে বলে আমরা মনে করি, বাস্তব চিত্র তার চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহ। গবেষকরা বলছেন, এ অবস্থায় তাপমাত্রার গড় বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে ওঠা আটকাতে মানুষের কর্মকাণ্ডজনিত কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ পুর্বের হিসাবের চেয়েও ২৫ শতাংশ বেশি কমাতে হবে।
সমুদ্রের অধিক তাপ শোষণের কারণে সেখানকার পানি থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড ও অক্সিজেন বেশি নির্গত হচ্ছে, যা সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানের ভয়াবহ ক্ষতি করছে বলে জানিয়েছেন আইপিসিসির গবেষক দলের প্রধান নিউ জার্সির প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. লরে রেসপ্লেনডি। “উষ্ণ সমুদ্র কম অক্সিজেন ধরে রাখে, যার প্রভাব পড়ে সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানে। এরপর আছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, আপনি যদি সমুদ্রকে বেশি উষ্ণ করেন, তাহলে এর তাপস্ফীতি বাড়তে থাকবে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও বাড়বে,” বলেছেন তিনি।
অনেকদিন পর বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা হ্রাস পেলে সমুদ্র এ বাড়তি উষ্ণতা ছেড়ে দেবে বলে জানিয়েছেন তিনি। “সত্যিটা হচ্ছে, সমুদ্র এখন যে পরিমাণ তাপ ধরে রাখছে তা বায়ুমন্ডলে স্থানান্তরিত হলে আমাদের পক্ষে ভবিষ্যতে পৃথিবী পৃষ্ঠের তাপমাত্রা একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রার নিচে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে,” বলেন রেসপ্লেনডি।
তাদের এ গবেষণার ফলে অন্য বিজ্ঞানীরাও বেশ উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছে বিবিসি। আইপিসিসির এই “গবেষকদের এ বিষয়ে বেশ সুখ্যাতি আছে, যে কারণে একে বেশ বিশ্বাসযোগ্যই মনে হচ্ছে,” বলছেন যুক্তরাজ্যের সাউথ্যাম্পটনে অবস্থিত ন্যাশনাল ওশেনগ্রাফি সেন্টারের অধ্যাপক সিবরেন দ্রিজফৌট।
।