ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: মহামারির মৃত্যু নেই, তবে ভয়াবহ সব মহামারিও এক সময় নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। আর ২০২২ সালে করোনা মহামারির ক্ষেত্রেও একই ধরনের ঘটনা ঘটবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। আর তখন করোনার এতো দাপট হয়তো একদমই থাকবে না এবং এটা সত্যি যে, স্থানীয় বা মৌসুমীভিত্তিক ফ্লুর মতোই দেখা যাবে। বিশেষ করে যেসব দেশে ভ্যাকসিনের হার কম সেখানে হয়তো এর প্রকোপ কিছুটা কমবে।
তবে করোনার নতুন ধরনের দিকেও বিশেষজ্ঞদের নজর রাখতে হবে। বিশেষজ্ঞ এবং বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস ভ্যাকসিনের মাধ্যমে আমরা হয়তো করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যু কমিয়ে আনতে সক্ষম হবো। বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিনের হার বাড়তে থাকলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে আসবে বলে আশাবাদী তারা।
করোনা যখন অন্যসব ফ্লু অথবা সাধারণ ঠাণ্ডাজনিত রোগের মতো হয়ে যাবে তখন বিশ্বের মানুষ আবারও স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে পারবেন, অন্তত করোনা পূর্ববর্তী স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন বলেই আশা করা যায়।
এই সম্ভাবনার পেছনে একটি অসাধারণ সাফল্য এবং হতাশাজনক ব্যর্থতা দুই-ই আছে বলা যায়। সফলতা বলা যায় যে, এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশই ভ্যাকসিন নিয়েছে। কেউ এক ডোজ নিয়েছে, কেউ দুই ডোজই নিয়েছে আবার অনেক দেশ ঝুঁকিপূর্ণ এবং বয়স্ক লোকজনকে ভ্যাকসিনের তৃতীয় ডোজ বা বুস্টার ডোজ দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিন এবং নতুন নতুন ওষুধের কারণে সংক্রমণের প্রতিটি পর্যায় অর্থাৎ মৃদু লক্ষণ থেকে ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিট পর্যন্ত রোগীদের গুরুতর অসুস্থতা এবং মৃত্যুর ঝুঁকি কমছে। এটা একটি সহজ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এসব ভ্যাকসিন নিজেদের কার্যকারিতার প্রমাণও দিয়েছে। একটি নতুন রোগের জন্য এতগুলো ভ্যাকসিন আবিষ্কার, অনুমোদন এবং চিকিৎসার নতুন পদক্ষেপকে বৈজ্ঞানিক সফলতা বা বিজয়ই বলা যায়।
পোলিও ভ্যাকসিনের আমেরিকার অনুমোদন পেতে ২০ বছর সময় লেগেছিল। কিন্তু ২০২১ সালের শেষের দিকে অর্থাৎ সার্স-কোভ-২ বা করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হওয়ার দুই বছরের মাথায় বিশ্বে প্রতি মাসে প্রায় ১৫০ কোটি ডোজ কোভিড ভ্যাকসিন তৈরি হচ্ছে।
এয়ারফিনিটি নামের একটি ডাটা ফার্ম বলছে, ২০২২ সালের জুনের শেষের দিকে আড়াই হাজার কোটি ডোজ ভ্যাকসিন তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে এক সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশ্বের ৭০ শতাংশ দেশকে এক বছরের মধ্যে পরিপূর্ণ ভ্যাকসিনের আওতায় আসার আহ্বান জানান। এক্ষেত্রে সরবরাহে কোনো বাঁধা থাকবে না বলে জানানো হয়েছে।
করোনা মহামারিতে আরও একটি বড় সাফল্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন। করোনার ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন পুরোপুরি সুরক্ষা দিতে সক্ষম নয়, বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে। তবে এক্ষেত্রে বিভিন্ন ওষুধও ভালো সফলতা দেখিয়েছে।
উদাহরণস্বরুপ বলা যায়- প্রাথমিক লক্ষণগুলোর ক্ষেত্রে করোনার মুখে খাওয়ার ওষুধ মোলনুপিরাভির ব্যবহার করা হয়েছে। এই ওষুধের কারণে মৃত্যু ঝুঁকি কমেছে এবং হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও অর্ধেকে নেমে এসেছে।
গুরুতর অসুস্থরা ডেক্সামেথাসোন গ্রহণ করতে পারেন। একটি একটি সস্তা কর্টিকোস্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ। এটি মৃত্যু ঝুঁকি ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমাতে সক্ষম।
তবে এসব সফলতার বাইরেও কিছু ব্যর্থতা রয়েছে। ভবিষ্যতে করোনাভাইরাস কম ক্ষতি সাধন করবে কারণ এটি অতীতে যথেষ্ট তাণ্ডব চালিয়েছে এবং বহু মানুষের প্রাণ কেড়েছে। আর মহামারির দুই বছরে মানুষ অনেকটাই এই প্রাণঘাতী ভাইরাসকে সঙ্গে নিয়েই বসবাস করা শিখে গেছে।
বর্তমানে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে যার নাম রাখা হয়েছে ওমিক্রন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার বর্তমান এই ধরন থেকে বেশিরভাগ মানুষই সুরক্ষিত রয়েছেন কারণ তারা আগের ধরনগুলো দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওমিক্রন বা পরবর্তীতে করোনার যে নতুন ধরনই আসুক না কেন তা হয়তো ডেল্টার চেয়ে বেশি গুরুতর হবে না। এরই মধ্যে বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, ডেল্টার চেয়ে ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা কম।
এছাড়া করোনার আগের ধরনগুলোর ক্ষেত্রে যেসব চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল সেগুলো পরবর্তীতেও কার্যকর থাকবে। এছাড়া ভাইরাসের মিউটেশনের ওপর নির্ভর করে বর্তমান ভ্যাকসিনগুলোতেও পরিবর্তন আনা সম্ভব।
এছাড়া অতিরিক্ত বয়স্ক, ভ্যাকসিন নেননি বা ওষুধ কেনার সামর্থ্য নেই এমন লোকজনের হয়তো মারা যাওয়ার ঝুঁকি বেশি। করোনা এখনও শেষ হয়নি। তবে এটা বলা যায় যে, উন্নত বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের মানুষের কাছেই ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ হয়তো তা আর জীবনের জন্য ঝুঁকি হতে পারে এমন কোনো রোগ হিসেবে থাকবে না। তবে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, কোভিড হয়তো তখন অন্য কোনো রোগে পরিণত হওয়ার পথে থাকবে।