ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: একটু বিরতি নিয়ে ফের বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম। মুদি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘দাম আরও বাড়তে পারে। পণ্য সাপ্লাই কম। চাহিদা মতো অর্ডার মিলছে না। বলে দু-একদিন পর দিচ্ছি। এমন সব কথা বলে ডিলাররা সয়াবিন তেল দিতে গড়িমসি করছে। একই সঙ্গে দামও বেশি নিচ্ছে।’
রমজান মাস শুরুর পর থেকে গত এক সপ্তাহে প্রতি লিটারে বেড়েছে ৫ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল বেড়েছে কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা।
ভোজ্যতেলের দাম কমাতে বিভিন্ন পর্যায়ে ভ্যাট কমিয়েছে সরকার। এরপর নির্ধারণ করা হয় নতুন দর। তারপরও বাজারে বেশি দামে বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা।
সবচেয়ে বেশি বেড়েছে খোলা সয়াবিনের দাম। কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। আজকে ভালো মানের খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করছি ১৬৫ টাকায়। এটা গত সপ্তাহে ১৫৬ থেকে ১৫৭ টাকা ছিল।
এদিকে লাগামহীন ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে গত মাসে কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে মাত্র ৫ শতাংশ বহাল রেখে ভোজ্যতেলের আমদানি, পরিশোধন ও ভোক্তাপর্যায়ে বিক্রিতে থাকা সব ধরনের ভ্যাট তুলে নেয় সরকার। এতদিন ভোজ্যতেলের ওপর তিন স্তরে ৩৫ শতাংশ ভ্যাট ধার্য ছিল।
পরে গত ২০ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে লিটারে সয়াবিন তেলের দাম ৮ টাকা কমিয়ে নতুন দামের ঘোষণা করে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।
ওই ঘোষণা অনুযায়ী, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল প্রতিলিটার ১৩৬ টাকা, যা আগে ছিল ১৪৩ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা, আগে ছিল ১৬৮ টাকা। এ ছাড়া পাঁচ লিটারের এক বোতল তেল ৭৬০ টাকায়, আগে যার দাম ছিল ৭৯৫ টাকা।
এদিকে সরকার দাম কমালেও ব্যবসায়ীরা কৌশলে বাড়িয়ে দিচ্ছে। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যেও এর প্রমাণ মিলেছে। রাজধানীর শাহজাহানপুর, মালিবাগ, কারওয়ান বাজার, বাদামতলী, সূত্রাপুর, শ্যামপুর, কচুক্ষেত, মৌলভীবাজার, মহাখালী, উত্তরা আজমপুর বাজার, রামপুরা ও মিরপুর ১ নাম্বার বাজার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সরকারি এ সংস্থাটি।
টিসিবি তথ্য অনুযায়ী, ৯ এপ্রিল ঢাকার বাজারে খুচরা এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৬৮ টাকা। এক সপ্তহ আগে ছিল ১৬৫ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫৮ টাকা তাদের তথ্য এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৫৪ টাকা। এছাড়া প্রতি লিটার পামওয়েলের (লুজ) দাম ১৪৬ টাকা; যা আগের সপ্তাহে ছিল ১৪৩ টাকা।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিনের দাম বেড়েছে- এমন অজুহাতে দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম আরও বাড়াতে চান আমদানিকারক ও উৎপাদনকারীরা। গত বুধবার (৬ এপ্রিল) ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানিকারক ও মিল মালিকদের সঙ্গে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বৈঠকে এ দাবি করেন তারা। এ সময় মিল মালিকরা সয়াবিন তেলের দাম সমন্বয়ের (বাড়ানো) অনুরোধ জানান। বৈঠকে সিটি, মেঘনা, এস আলম, বসুন্ধরা ও টি কে গ্রুপের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তারা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে ভোজ্যতেলের বাজার সমন্বয় করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানান। দ্রুত সময়ে সমন্বয় না হলে বাজারে আবারও সমস্যা তৈরি হবে বলে জানান তারা।
তবে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঈদের পর মে মাসে এ দাম সমন্বয় নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর আগে বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই বলে সাফ জানিয়ে দেয় অধিদপ্তর। কিন্তু তারপরও বাজারে বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, আমরা জানতে পেরেছি মিলে দাম স্বাভাবিক থাকলেও পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়াচ্ছে। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে আজকে অভিযান করেছি। পাঁচ পাইকারি ব্যবসায়ীকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে যে কেউ যদি বেশি নেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। আর্থিক দণ্ড সহ সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া দেব। এছাড়া সিন্ডিকেট করে কেউ যদি দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ আইনে মামলা করা হবে। আমরা সব ব্যবসায়ীকে বলতে চাই আইনের মধ্যে থেকে ব্যবসা করুন এবং সরকারি বিধি নিষেধ মেনে চলুন।