নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
আমার বাবা একটা এনজিওতে কাজ করেন, করোনা সময়ে মেলেনি স্যালারি। কৃষি কাজে তখন সংসার চলেছে। বাবা আমার ফের চাকুরী ফিরে পেয়েছে। আগের স্যালারিতেই যোগদান করেছেন। কিন্তু বাড়েনি স্যালারি। এদিকে আমার হলে খাবারের দাম বেড়ে গেছে। এমন করে নিজেদের অসহায়ত্বর কথা বলছিলেন ঢাকা কলেজের দক্ষিণ ছাত্রাবাসের আবাসিক শিক্ষার্থী আনিসুর রহমান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অসহায়ত্বে দিন কাটাচ্ছে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা শহরের শিক্ষার্থীরা। নিত্যদিনে বাড়ছে প্রতিটি জিনিসের মূল্য, বৃদ্ধি পাচ্ছে খাবারের সাথে সম্পৃক্ত পণ্যও। চাল, ডাল, মুরগী, মাংস এবং কাঁচা বাজারে সবজির বেড়েছে মূল্য, বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের খাবারের মূল্যও বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানান হল প্রভোস্ট।
ঢাকা কলেজের হল গুলো ঘুরে দেখা গেছে, এখনো খাবারের মান তুলনামূলক সাধ্যের মধ্যে থাকলেও খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। পূর্বের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে মিল প্রতি পাঁচ থেকে দশ টাকা। হলের ছাত্রনেতারা খাবারের মান বাড়াতে দাবী জানিয়েছেন।
যেখানে একজন শিক্ষার্থীকে খাবারের জন্য করোনার পূর্বে খরচ করতে হয়েছে প্রতিদিন ১০০টাকা, সেখানে করোনার পরবর্তী সময়ে এসে খরচ করতে হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকা এবং মাসিক হিসেবে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫০০-৫০০০ টাকা যা পূর্বে ৩০০০টাকার মধ্যে ছিল। যা একটি দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ।
হলে থাকা একাধিক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হলের খাবারে পাঁচ থেকে দশ টাকা বৃদ্ধি করলেও আনুষাঙ্গিক খরচের কারণে চরম সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের। যেহেতু সকালে হল থেকে কোনো খাবারের ব্যবস্থা নেই, তাই সকালে বাহিরে গিয়ে একটু ভালো মানের নাস্তা করতে গেলে খরচ করতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা যা বহন করার মতো ক্ষমতা অনেকেরই নেই।
কথা হয়েছে ঢাকা কলেজ ‘আন্তর্জাতিক হলে’র শিক্ষার্থী শরীফুলের সাথে। তার মতে, পূর্বের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে মিল রেট কিন্তু বাড়েনি খাবারের মান। পাশাপাশি বাড়তি খরচ বহন করতে হচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসে। এতে মারাত্মক সমস্যা পড়তে হচ্ছে অর্থনৈতিকভাবে।
শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, বাবার স্যলারি বাড়েনি কিন্তু খাবারের দাম থেকে শুরু করে সকল নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে। বেড়েছে বই থেকে শুরু করে সকল শিক্ষা উপকরণ কিংবা প্রতিষ্ঠানিক খরচ।
ঢাকা কলেজ উত্তরা ছাত্রাবাসের হল প্রভোস্ট ওবায়দুল করিম জানা, শিক্ষার্থীদের খাবারের মান কিভাবে আরো বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে নজর রাখছি। তিনি জানান, একটা সময় হলের খাবারের দায়িত্ব আমাদের হলের ছাত্রদের উপরই ছিলো। তারা সম্পূর্ণ বিষয়টা মডিফাই করে আয়োজন করতো৷ আমরা পুনরায় সেই নিয়মে হল পরিচালনার পরিকল্পনা করছি। এই বিষয়ে এরই মধ্যে হলে থাকা শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা হয়েছে।
দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, বাজারে প্রতিটি জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে খাবারের দাম না বাড়ানো হলে, খাবারের মান ঠিক রাখা যাবে না, তাই এক প্রকার বাধ্য হয়ে বাড়ানো হয়েছে এবং এই বিষয়টাতে শিক্ষার্থীরাও অবগত রয়েছে।