ঈদের পর থেকে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা করবে ভোক্তা অধিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

যেসব ব্যবসায়ী ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেন এবং ভোক্তা আইন মেনে ব্যবসা করেন না তাদের বিরুদ্ধে শুধু জরিমানা নয় ঈদের পর থেকে মামলা করবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

শনিবার এ তথ্য জানিয়েছেন ভোক্তা অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।

ভোক্তা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠা করার পর থেকে ভোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে বিভিন্ন ধরনের প্রচার-প্রচারণা, বাজার অভিযান পরিচালনা করেছে, বিভিন্ন অপরাধে ব্যবসায়ীদের আর্থিক দণ্ড বা জরিমানা করেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ভোক্তা আইনে মামলা করেনি।

ভোক্তা অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, ব্যবসায়ীদের ধর-পাকর করা ভোক্তা অধিকারের কাজ নয়। আমরা সব সময় ব্যবসায়ী এবং ভোক্তাদের আইন সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করি। বাজার অভিযানের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আর্থিক দণ্ড করা হয়েছে। তবে ঈদুল ফিতরের পর যেসব ব্যবসায়ী ভোক্তা আইন মানবে না তাদের বিরুদ্ধে শুধু জরিমানা নয়, ভোক্তা আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজার, টোকিও স্কয়ার শপিং মল ও শ্যামলী এলাকার বাস কাউন্টারগুলোতে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিদপ্তর।

এ সময় বিভিন্ন অপরাধে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

রাজধানীর অন্যান্য বাজারে গরুর মাংসের দাম ৬৫০ টাকা হলেও টাউন হল বাজারে দাম নেয়া হচ্ছে ৭০০ টাকা কেজি। এ সময় গরুর মাংস ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে হ্যান্ড মাইকে ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ফাহমিনা আক্তার বলেন, কারওয়ান বাজারসহ রাজধানীর অন্যান্য বাজারে গরুর মাংসের দাম ৬৫০ টাকা, এই বাজারে ৭০০ টাকা কেন? এই বাজারের গরুর মাংস কি আলাদা? ভোক্তাদের কাছ থেকে কোনভাবেই দাম বেশি রাখা যাবে না। ৬৫০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করতে হবে। এছাড়া মহিষের মাংস গুরুর মাংস বলে এবং ছাগলের মাংস খাসির মাংস বলে চালানো যাবে না। ওজনে কম দেয়া যাবে না। ভোক্তা আইন মেনে ব্যবসা করতে হবে। অন্যথায় আইনের আওতায় আনা হবে।

টোকিও স্কয়ার শপিং সেন্টারে কসমেটিক দোকানে অনিয়ম পেলেও দণ্ড না দিয়ে প্রাথমিক ভাবে সচেতন করা হয়। সঙ্গে হ্যান্ড মাইকে সকল ব্যবসায়ীদের ভোক্তা আইন সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়। ভোক্তা আইন মেনে ব্যবসা করার জন্য ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানানো হয়।

অভিযানের বিষয়ে মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, আজ আমরা কারওয়ান বাজার, টাউন হল বাজার, টোকিও স্কয়ার শপিং সেন্টার এবং শ্যামলীর কয়েকটি বাস কাউন্টারে অভিযান চালিয়েছি। ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে ভোক্তা আইন সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।

তিনি বলেন, কোন পণ্য বা সেবা ক্রয়ে প্রতারিত হলে অথবা বাসের টিকিট ক্রয়ের সময় বেশি ভাড়া নিলে ভোক্তা হটলাইন ১৬১২১ নাম্বারে জানানোর ভোক্তাদের প্রতি অনুরোধ জানানো হলো।

তিনি আরও বলেন, ভোক্তারা আগের থেকে এখন অনেক সচেতন হয়েছেন। আগে ভোক্তারা শুধু পানির দাম নিয়ে অভিযোগ জানাতো। তবে এখন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তারা প্রতারিত হলেই অভিযোগ করছেন। আমরা সেসব অভিযোগ আমলে নিয়ে দ্রুত সমাধান করছি। ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রচারণায় ব্যবসায়ীরাও সচেতন হতে শুরু করেছে। তবে এটা চলমান প্রক্রিয়া। ইনশাআল্লাহ সকলেই ভোক্তা আইন মেনে ব্যবসা করবেন।

উত্তরায় ভোক্তা অধিকারের অভিযান
ভোক্তা অধিকারের আরেকটি টিম রাজধানীর উত্তরার বিভিন্ন কাপড়ের দোকান, জুতার দোকান, কসমেটিক্সের দোকান, ইফতার সামগ্রী তৈরির রেস্টুরেন্ট ও আব্দুল্লাহপুরে অবস্থিত বিভিন্ন পরিবহনে তদারকি করেছে।

তদারকিকালে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ইফতার সামগ্রী প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণ করার অপরাধে জন খাবার বিরানি হাউজকে ৫ হাজার টাকা, হাজী বাংলা খাবার হোটেলকে ৫ হাজার টাকা, আশা বেকারীকে ৫ হাজার টাকা এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গী বাজার এলাকার জান্নাত এন্টারপ্রাইজকে ৫ হাজার টাকা, মেসার্স পাটোয়ারী এন্টার প্রাইজকে ৫ হাজার টাকা এবং মেসার্স তানিশা এন্টারপ্রাইজকে ৫ হাজার টাকাসহ ৬ প্রতিষ্ঠানকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ভোক্তা অধিদপ্তরের ঢাকা জেলার প্রধান ও সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, নির্ধারিত মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রি করা, পবিত্র ঈদকে কেন্দ্র করে ঘরমুখো মানুষ যেন কষ্ট না পায় সেজন্য বিআরটিএ কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়া অপেক্ষা অধিক টাকায় বাসের টিকিট বিক্রি না করা, বাসের ভাড়ার তালিকা সহজে দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করা, নকল ও ভেজাল কসমেটিক্স বিক্রি না করার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই।

কোন পণ্য বা সেবা ক্রয়ে প্রতারিত হলে ভোক্তা হটলাইন ১৬১২১ নাম্বারে জানানোর জন্য অনুরোধ করেন তিনি। এছাড়া প্রমাণসহ [email protected] ইমেইলে অভিযোগ জানালে প্রতিকার দেয়া হবে বলে ভোক্তাদের আশ্বস্ত করেন এই কর্মকর্তা।

আরইউ