ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: স্বপ্নের পদ্মা সেতু দিয়ে জাজিরা প্রান্ত থেকে দেশের ২১টি জেলায় যাওয়া যাবে। দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ছয় কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে পদ্মা সেতু।
দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাসের এই সেতুর উপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫০ কিলোমিটার। ভায়াডাক্ট (স্থলভাগে সেতুর অংশ) সহ দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। প্রস্থ ১৮ দশমিক ১০ মিটার। সেতুর আকৃতি ইংরেজি এস (S) অক্ষরের মতো।
পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ৪২টি পিলার ও ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যানের মাধ্যমে মূল অবকাঠামো তৈরি করা হয়। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। স্প্যানগুলোর মোট ওজন এক লক্ষ ১৬ হাজার ৩৮৮ টন। প্রতিটি পিলারে নিচে পাইলের সংখ্যা ছয়টি (কিছু কিছু পিলারে সাতটি পাইলও দেওয়া হয়েছে)। পাইলের ব্যাস ৩ মিটার। পাইলের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ১২৮ মিটার। মোট পাইলের সংখ্যা ২৬৪টি (ভায়াডাক্টের পিলারের পাইলসহ ২৯৪টি)।
জমি অধিগ্রহণ ৯১৮ হেক্টর। ব্যবহৃত স্টিলের পরিমাণ এক লক্ষ ৪৬ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৪ সালের ০৭ ডিসেম্বর সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মাওয়া প্রান্তে ৬ নম্বর পিলারের কাজ দিয়ে মূল সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
এই সেতু দিয়ে দৈনিক ৭৫ হাজার যানবাহন পারাপার হতে পারবে। পানির স্তর থেকে সেতুর উচ্চতা ১৮ মিটার। সেতুটি রিকটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীল।
পদ্মা সেতুর এপ্রোচ রোডের দৈর্ঘ্য ১২ কিলোমিটার। নদী শাসন করা হয়েছে ১৬ দশমিক ২১ কিলোমিটার। সেতুর আয়ুষ্কাল ১০০ বছর। এই সেতুতে মোট ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা।
পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকার সঙ্গে ২১টি জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের তিন কোটি মানুষ সরাসরি উপকার ভোগ করতে পারবেন।
যেসব দেশের বিশেষজ্ঞ ও প্রকৌশলীরা কাজ করেছেন : চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, অট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ন্যাদারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, জাপান, ডেনমার্ক, ইতালি, মালয়েশিয়া, কলম্বিয়া, ফিলিপাইন, থাইওয়ান, নেপাল ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
প্রকল্পের অঙ্গভিত্তিক ব্যয় বিভাজন:
ক) মূল সেতুর ব্যয়: ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন টাওয়ার ও গ্যাস লাইনের ব্যয়সহ ১১ হাজার ৯৩৮ দশমিক ৬৩ কোটি টাকা (বরাদ্দ ১২ হাজার ১৩৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকার বিপরীতে)।
খ) নদীশাসনের কাজ: ৮ হাজার ৭০৬ দশমিক ৯১ কোটি টাকা (৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকার বিপরীতে)।
গ) অ্যাপ্রোচ রোড: দুটি টোল প্লাজা, দুটি থানা বিল্ডিং ও তিনটি সার্ভিস এরিয়াসহ এক হাজার ৮৯৫ দশমিক ৫৫ কোটি টাকা (এক হাজার ৯০৭ দশমিক ৬৮ কোটি টাকার বিপরীতে)।
ঘ) পুনর্বাসন ব্যয়: এক হাজার ১১৬ দশমিক ৭৬ কোটি টাকা (এক হাজার ৫১৫ কোটি টাকার বিপরীতে)।
ঙ) ভূমি অধিগ্রহণ: দুই হাজার ৬৯৮ দশমিক ৭৩ কোটি টাকা।
চ) পরিবেশ: ২৬ দশমিক ৭২ কোটি (১২৯ দশমিক ০৩ কোটি টাকার বিপরীতে)।
ছ) বেতন ভাতা, পরামর্শক, সেনা নিরাপত্তা ইত্যাদি: এক হাজার ৩৪৮ দশমিক ৭৮ কোটি টাকা (দুই হাজার ৪০৯ দশমিক ৫৬ কোটি টাকার বিপরীতে)।
প্রকল্পের মোট অনুমোদিত ব্যয়: ২৭ হাজার ৭৩২ দশমিক ০৮ কোটি টাকা (৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকার বিপরীতে)।
সেতুর উদ্বোধন: ২৫ জুন ২০২২।
তথ্যসূত্র: পদ্মা সেতু প্রকল্প অফিস, ক্যাবিনেট ডিভিশন, সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতার কপি; ২৩ জুন ২০২২।