ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
মোবাইল ফোনে কলড্রপ, নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হওয়া, কথা শুনতে না পাওয়া ইত্যাদি সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গ্রাহক। এ কারণে গ্রাহকদের ক্ষতিপূলন দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিটিআরসি। সম্প্রতি এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানাগেছে।
সূত্র জানায়, টিআরসি দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করলেও গ্রাহক কোনও সুফল পাচ্ছিলেন না। শিগগিরই কলড্রপ সমস্যার সমাধান না হলেও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক যাতে এ কারণে ক্ষতিপূরণ পান, সে বিষয়ে এবার বিটিআরসির উদ্যোগ ফলপ্রসূ হতে পারে বলে মনে করেন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টরা। কমিশন বৈঠকে তেমনই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, বিটিআরসির ২৫৫তম কমিশন বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিটিআরসি যে নির্দেশনা জারি করেছে তাতে গ্রাহক যত সংখ্যক কল মিনিট প্রাপ্য হবেন, তার সবটুকুই গ্রাহককে প্রদান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের প্রাপ্য মিনিটের কোনও ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করা যাবে না। নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিদিনের কলড্রপের ফলে ফেরতযোগ্য মিনিট একসঙ্গে গ্রাহককে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দিতে হবে। কলড্রপের ফলে প্রাপ্য মিনিট গ্রাহককে এসএমএসের মাধ্যমে জানাতে হবে। কলড্রপের ফলে প্রাপ্ত মিনিট পরের দিনের প্রথম কল থেকেই ব্যবহারযোগ্য হবে, তথা ফেরতপ্রাপ্ত মিনিট সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার হওয়ার আগে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে কোনও টাকা কাটা যাবে না। কলড্রপের ফলে ফেরত প্রাপ্ত মিনিট ব্যবহারের জন্য ৩০ দিন মেয়াদ প্রযোজ্য হবে। এছাড়া অন-নেট কলের জন্য উপরে যেসব পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো প্রযোজ্য হবে।
কলড্রপের বিষয়ে নিজেই অতিষ্ঠ বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার। তিনি জানান, এই সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা। কমিশনের বৈঠক করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। কেন এটা এত বেশি হচ্ছে, সে বিষয়েরও সন্ধান করা হবে, বলেন তিনি।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আগে গ্রামীণফোনের কলড্রপ বেশি হতো, এখন কিছুটা কমেছে। অন্যান্য অপারেটরেরও হচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না। এর সমাধান হতে হবে।’
বিটিআরসির একজন কমিশনার বলেন, শুধু তরঙ্গের (স্পেক্ট্রাম) কথা বললেই হবে না। আরও অনেক বিষয়ের ওপর কলড্রপ, নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হওয়া, কথা শুনতে না পাওয়া ইত্যাদি সমস্যা, মোবাইলফোনের সক্ষমতা (কনফিগারেশন), ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি হওয়া, সুউচ্চ ভবনের প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদি সমস্যার কারণেও কলড্রপ হতে পারে। ভালো কনফিগারেশন বা বেশি দামের মোবাইলফোনের পারফরমেন্স ভালো হবে। সেক্ষেত্রে কম দামের মোবাইলের চেয়ে বেশি দামের মোবাইল ফোনে কলড্রপ কম হবে, নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হবে না। তরঙ্গের বিপরীতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি হলেও সমস্যা হবে। টাওয়ার ও ব্যবহারকারীর মাঝখানে উঁচু ভবন থাকলেও মোবাইলে কথা বলার সময় সমস্যা হতে পারে।
জানা যায়, আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) স্ট্যান্ডার্ড হলো— প্রতি এক মেগাহার্টজে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা হতে হবে ৫ লাখ। সেক্ষেত্রে দেশে এক মেগাহার্টজ তরঙ্গে গ্রামীণফোনের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৭ লাখ, রবির ১২ লাখ এবং বাংলালিংকের ৯ লাখ। অপরদিকে কলড্রপের বেলায় আইটিইউ’র স্ট্যান্ডার্ড ২ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি ১০০টি কলে ২টি কলড্রপ হতে পারবে। মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো বিভিন্ন সময়ে দাবি করেছে— তাদের কলড্রপের সংখ্যা আইটিইউ’র স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী আছে। যদিও এই দাবি মানতে নারাজ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেছেন, অপারেটরগুলোর দাবি সঠিন নয়। কলড্রপের হার অনেক বেশি।
বাংলাদেশ মোবাইল ফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘বলা হয়েছিল অপারেটররা নতুন তরঙ্গ (স্পেক্ট্রাম) কিনলে কলড্রপ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এতদিন হয়ে গেলো অপারেটরগুলো এখনও মোট কেনা তরঙ্গের ৫০ শতাংশের বেশি ব্যবহার করতে পারেনি। আমাদের প্রশ্ন হলো— কেন পারেনি? তাদের তরঙ্গ ব্যবহারের জন্য তাগাদা দেওয়া হোক, বিটিআরসি তা ব্যবহারের সুযোগ করে দিক। তাহলে কলড্রপ সমস্যার উন্নতি হবে বহুলাংশে।’