ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক
২০১৫ সালে জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার অধীনে যাত্রা শুরু সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির। সে সময় থেকেই সরকারি খরচে অসচ্ছল, অসহায় ও দরিদ্রদের উচ্চ আদালতে আইনি পরামর্শ ও মামলা পরিচালনাসহ বিভিন্ন সেবা দিয়ে আসছে সংস্থাটি। এই ছয় বছরে প্রায় চার লাখ মানুষকে আইনি সেবা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শুধু করোনা মহামারির সময়েই আইনি সেবা পেয়েছেন দুই হাজার ৯৯০ জন অসচ্ছল ব্যক্তি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লিগ্যাল এইড কমিটির মাধ্যমে আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে কম খরচে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে মামলা পরিচালনা করতে পারায় মানুষের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে মামলা পরিচালনার খরচ নিয়ে ধারণা পাল্টেছে। এতে উচ্চ আদালতের প্রতি বিচারপ্রার্থীদের আস্থা আরও বাড়ছে। এসব কাজ করে প্রশংসায় ভাসছে লিগ্যাল এইড কমিটি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসে নিয়মিত লোকজন আসছেন। তাদের হাসি মুখে বিভিন্ন আইনি পরামর্শ ও সেবা দিচ্ছেন লিগ্যাল এইড অফিসের কর্মকর্তারা।
এ অফিসের সেবা নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেন, সুপ্রিম কোর্টের লিগ্যাল এইড অফিস আইনজীবী নিয়োগ করে দেওয়ার কারণে ফিরে পেয়েছি আমার স্বামী, সন্তান ও ঘর সংসার। আশাকরি এভাবে তাদের সেবা অব্যাহত থাকবে। যাতে আমার মতো অসহায় মানুষ এখান থেকে সেবা নিতে পারে।
এইড অফিসে কথা বলে জানা যায়, সবশেষ গত ৩০ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতে একটি পারিবারিক মামলা নিষ্পত্তি হয়। যেখানে ভিকটিমকে ভরণপোষণ দেওয়ার বিষয়ে মৌলভীবাজারের পারিবারিক আদালতের দেওয়া রায়ের আদেশ হাইকোর্ট বিভাগ বহাল রেখেছেন। ফলে আসামিকে ৫ লাখ ৭৯ হাজার ৪৫৫ টাকা দিতেই হবে।
মামলা সংশ্লিষ্টরা জানান, মৌলভীবাজারের বড়লেখার খলিলুর রহমানের সঙ্গে তার স্ত্রীর ১৯৮২ সালের ৮ এপ্রিল বিয়ে হয়। এরপর তাদের ঘরে ছয় সন্তানের জন্ম হয়। চার সন্তান জন্মের পর পারিবারিক কলহের কারণে স্ত্রী অন্যত্র বসবাস শুরু করেন। এক পর্যায়ে ১৯৯৯ সালের ১২ মে মৌখিক তালাক দেন স্বামী। পরে ২০০০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি লিখিত তালাক দিয়ে তার কপি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং ওই নারীর বাবার কাছে পাঠান।
ওই নারীর স্বামী ২০০১ সালের ২৫ জানুয়ারি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এভাবে পর্যায়ক্রমে ওই ব্যক্তি আরও দুটি বিয়ে করেন। এসব ঘটনায় ওই নারী ২০১৩ সালে মামলা করেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর মৌলভীবাজারের পারিবারিক আদালতের বিচারক মো. ফরহাদ রায়হান ভূঁইয়া তার সন্তানের খরচ ও ভরণপোষণ দিতে রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে বলা হয়, বাদী আসামির কাছ থেকে বকেয়া ভরণপোষণ বাবদ মাসিক তিন হাজার টাকা হারে ৪০ মাসে এক লাখ বিশ হাজার টাকা, দেনমোহর বাবদ বাইশ হাজার এক টাকা ২৫ পয়সা, নাবালক পুত্র সিকান্দার আলী সাবালক হওয়া পর্যন্ত মাসিক তিন হাজার টাকা হারে মোট এক লাখ ৫৩ হাজার টাকা পাবেন।
রায়ে তাদের কন্যার বিষয়ে বলা হয়, ফাতেমা মরিয়ম ও সুলতানা জাহান ২০১৩ সালের ২০ জুলাই থেকে বিয়ে হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মাসিক চার হাজার টাকা ও তিন হাজার টাকা হারে মোট দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা পাবেন।
বিবাদী খলিলুর রহমান ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল হাইকোর্টে আপিল করেন। ওই আপিলের দীর্ঘ শুনানি শেষে গত ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর একক বেঞ্চ বিচারিক আদালতের দেওয়া রায় বহাল রাখেন। ফলে খলিলুর রহমানের কাছ থেকে তার স্ত্রী বাকি দেনমোহর ও সন্তানের ভরণপোষণসহ মোট ৫ লাখ ৭৯ হাজার ৪৫৫ টাকা ২৫ পয়সা পাবেন।
দীর্ঘ এ ঘটনায় আদালতে স্ত্রীর পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন লিগ্যাল এইড থেকে নিয়োজিত আইনজীবী অ্যাডভোকেট প্রজ্ঞা পারমিতা রায়। অন্যদিকে আসামির পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট জয়া ভট্টাচার্জ।
এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির কো-অর্ডিনেটর রিপন পৌল স্কু বলেন, ২০১৫ সাল থেকে বিভিন্ন আইনি সেবা দিয়ে আসছে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি। এর মধ্যে ২০২০ সালে লকডাউনের শুরু থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নতুন করে ১৩২টি মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে জেল আপিল আবেদন ১৬০টি এবং মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে ৩৫টি। এছাড়া আপিল আবেদন করা হয়েছে ২৮টি।
‘এর মধ্যে ২০২০ সালের ১৯ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করোনাকালে সরকারি খরচে আর্থিকভাবে অসচ্ছল, অসহায় ও দরিদ্র ২৯৯০ জনকে আইনি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
করোনাকালে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির কাজ ও মামলা নিষ্পত্তির বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মনির জাগো নিউজকে বলেন, করোনাকালে তিন হাজারের মতো মানুষকে আইনি সেবা দেওয়া মানুষের জন্য খুবই মঙ্গলজনক। এটা (লিগ্যাল এইড) যারা অর্থের অভাবে মামলা পরিচালনা করতে পারেন না, তাদের জন্য। এর পরিধি আরও বাড়ানো হলে বিচারপ্রার্থী গরিব, অসহায়, দরিদ্র মানুষ আরও বেশি সেবা পাবেন।
করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে আইন সহায়তা প্রত্যাশীরা অফিসের নির্ধারিত নম্বরে (০১৭০০-৭৮৪২৭০) যোগাযোগ করে বা জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার নির্ধারিত হটলাইন ১৬৪৩০ নম্বরে (টোল ফ্রি) কল করে আইনি সেবা পাচ্ছেন।
খবর: জাগোনিউজ