ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স আহরণ বেড়েছে। উল্লেখিত মাসে ১৭০ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। যা আগের মাস ডিসেম্বরের চেয়ে ৭ কোটি ৩৮ লাখ ডলার বেশি। মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিট্যান্স সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সেখান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোভিডের কারণে প্রবাসীরা এক ধরনের অনিশ্চয়তা থেকে অনেকে জমানো টাকা দেশে পাঠিয়েছেন। কেউ চাকরি হারিয়ে কিংবা ব্যবসা বন্ধ করে সব অর্থ পাঠিয়ে দেশে ফিরেছেন। করোনার প্রার্দুভাবের ওই সময় অবৈধ চ্যানেলগুলো বন্ধ ছিল তাই বাধ্য হয়ে সবাই ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠিয়েছেন। ফলে গত বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবাহ বেশি ছিল। এখন ব্যবসা-বাণিজ্য সচল হয়েছে। শিক্ষা, চিকিৎসা, ভ্রমণসহ বিভিন্ন বহির্বিশ্বের সঙ্গে যাতায়াত বাড়ছে। ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে চাহিদা বেড়েছে। এছাড়া জমানো টাকা না পাঠিয়ে অনেকে আবার জমাতে শুরু করেছেন। আবার সশরীরে যাওয়া-আসা শুরু হওয়ায় অনেকে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসছেন। ফলে চলতি অর্থবছরে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, বৈধ পথে ব্যাংকিং চ্যানেলে চলতি অর্থবছরের সাত মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ১৯৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ লাখ ২ হাজার ৭১৮ কোটি টাকার বেশি; (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ধরে)। রেমিট্যান্সের এ অংক আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৯৬ কোটি ডলার বা প্রায় ২০ শতাংশ কম। এর আগের অর্থবছরের একই সময় এসেছিল ১ হাজার ৪৯০ কোটি ডলার।
এদিকে টানা পাঁচ মাস কমার পর ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে প্রবাসী আয়ের গতি কিছুটা বেড়েছে। তবে গত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ এখনো কম রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, একক মাস হিসাবে সব শেষ জানুয়ারিতে ১৭০ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। যা আগের মাস ডিসেম্বরের চেয়ে ৭ কোটি ৩৮ লাখ ডলার বেশি। তবে আগের বছরের জানুয়ারির চেয়ে ২৫ কোটি ৭৫ লাখ ডলার বা ১৩ শতাংশ কম।
গত মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, রেমিট্যান্স সংগ্রহের লক্ষ্য অর্জনে নগদ প্রণোদনা দুই শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। প্রণোদনা দেওয়ার আগে বৈধ পথে মাত্র ৪৯ শতাংশ রেমিট্যান্স দেশে আসত। আমরা চেষ্টা করছি, প্রবাসীরা যত টাকা আয় করেন, তার পুরোটাই যেন বৈধ পথে আসে।
তবে বর্তমানে রেমিট্যান্স আহরণের হার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে যেখানে রেমিট্যান্সে এসেছে ১১৯৪ কোটি ডলার। এ হারে রেমিট্যান্স আসলে অর্থবছর শেষে রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়াবে ২১ বিলিয়ন ডলারের মতো। যা অর্থমন্ত্রীর লক্ষ্যের চেয়েও ৫ বিলিয়ন ডলার কম।
এদিকে বৈধ পথে দেশে রেমিট্যান্স বাড়াতে গত মাসে নগদ সহায়তার আওতা বাড়িয়েছে সরকার। এখন থেকে বিদেশি সংস্থায় কাজ করেছেন এমন ব্যক্তিদের ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত পেনশন ফান্ড, প্রভিডেন্ট ফান্ড, লিভ সেলারি, বোনাস ও অন্যান্য গ্র্যাচুইটি এবং অবসর সুবিধার অর্থ দেশে আসলে রেমিট্যান্স হিসাবে আড়াই শতাংশ নগদ সহায়তা পাবেন।
রেমিট্যান্সের নগদ সহায়তা ও আওতা বাড়ালেও দীর্ঘ মেয়াদি সুফল আসবে না বলে মন্তব্য করেছে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) এর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, নগদ সহায়তা দিয়ে রেমিট্যান্সের দীর্ঘ মেয়াদি সুফল আসবে না। এ ধরনের সুবিধা দিয়ে কোনো দেশের অর্থনীতি সুফল পেয়েছে তার নজিরও খুব একটা নেই। তাই রেমিট্যান্স বাড়াতে হলে খোলা বাজারের সঙ্গে ব্যাংকের ডলারের রেটের পার্থক্য কমাতে হবে। রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজ করার পরামর্শ দেন তিনি।
২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ, আগস্টে ১৮১ কোটি, সেপ্টেম্বর মাসে ১৭২ কোটি ৬৭ লাখ, অক্টোবরে ১৬৪ কোটি ৬৮ লাখ, নভেম্বর ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ, ডিসেম্বরে ১৬৩ কোটি এবং সবশেষ জানুয়ারিতে এসেছে ১৭০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার।
অর্থবছরভিত্তিক প্রবাসী আয়
২০২০-২১ অর্থবছরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্সের উল্লম্ফন ছিল। ওই অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা, যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। ওই অর্থবছরের ১২ মাসের মধ্যে সাত মাসেই ২০০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসে। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ। তারও আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণে রেকর্ড হয়। ওই সময়ে প্রবাসীরা ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরের রেমিট্যান্স আসে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার। যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আসে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ১১ লাখ মার্কিন ডলার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ মার্কিন ডলার।