২০২০ সালে রাজধানী ঢাকায় জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং সেবা-সার্ভিসের দাম বেড়েছে ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। ২০১৯ সালে এটি ছিল যথাক্রমে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ ও ৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। এর আগের বছর তা ছিল ৬ শতাংশ ও ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ।
অর্থাৎ তিন বছর ধরে ঢাকায় টিকে থাকতে বেশি টাকা খরচ করতেই হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। তবে ২০২০ সালে ব্যয় বেড়েছে সবচেয়ে বেশি।
আজ বুধবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ‘জীবনযাত্রার ব্যয় ও ভোক্তা স্বার্থসংশ্লিষ্ট কয়েকটি প্রাসঙ্গিক বিষয়ে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে প্রতিবেদন-২০২০’ শীর্ষক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সে প্রতিবেদনেই এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ক্যাব রাজধানীর ১৫টি খুচরা বাজার ও বিভিন্ন সেবা-সার্ভিসের মধ্য থেকে ১১৪টি খাদ্যপণ্য এ ২২টি নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী এবং ১৪টি সেবা-সার্ভিসের সংগৃহীত মূল্য বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তবে এই হিসাবে শিক্ষা, চিকিৎসা ও প্রকৃত যাতায়াত ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
ক্যাবের সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোক্তাকণ্ঠের সম্পাদক কাজী আবদুল হান্নান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত তিন বছরের মধ্যে ২০২০ সালে রাজধানীতে জীবনযাত্রার ব্যয় সর্বাধিক বেড়েছে। অন্যদিকে, এ সময়ে করোনা মহামারির প্রভাবে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের আয়রোজগার ব্যাপকভাবে কমেছে। ফলে, ২০২০ সালে এ শ্রেণির ভোক্তাদের জীবনমান বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে কোনো পণ্যের দাম গড়ে কত শতাংশ বেড়েছে, তা উল্লেখ করা হয়েছে ক্যাবের আজকের প্রতিবেদনে। তাতে বলা হয়েছে, চালের দাম ২০ শতাংশ, মসুরের ডাল ১৪ দশমিক ১৮ শতাংশ, মসলা ২৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ, শাকসবজি ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ, গরু-খাসির মাংস ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ ও মুরগির দাম বেড়েছে ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এ ছাড়া ডিমের দাম ৫ দশমিক ৩২ শতাংশ, মাছের দাম ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ ও গুঁড়া দুধের দাম বেড়েছে ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
ওদিকে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তের বাড়িভাড়া গড়ে ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ক্যাবের প্রতিবেদনে। এ ছাড়া ওয়াসার পানির দাম প্রতি হাজার লিটারে ২৫ শতাংশ, আবাসিকে বিদ্যুতের দাম ৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ এবং বাণিজ্যিকে বিদ্যুতের দাম ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ বেড়েছে।
ক্যাবের দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, শর্ষের তেলের দাম কেজিতে ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ, ডালডার দাম ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ ও খোলা আটাতে দাম কমেছে ২ দশমিক ২৩ শতাংশ। আর স্থিতিশীল অথবা অপরিবর্তিত ছিল লবণ, চা-পাতা, দেশি-বিদেশি কাপড়, গেঞ্জি, তোয়ালে ও গামছার দাম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত মানুষের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। বিশ্বব্যাংকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আইএফসির সমীক্ষা অনুযায়ী করোনার কারণে এসব খাতে কর্মরত ৩৭ শতাংশ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। অন্যান্য খাতেও কর্মসংস্থান কমেছে। অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী ছাঁটাই এবং বেতন কমানো হয়।
সরকার বিদ্যুৎ খাতে বার্ষিক যে কয়েক হাজার টাকা ভর্তুকি দিয়েছে, তা মূলত বেসরকারি অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্য হিসেবে ব্যয় হয়েছে। এর সুফল অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকেরা পেলেও ভোক্তারা এর সুফল পাননি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ব্যাংকিং ও বিনিয়োগ খাত নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা-বাণিজ্যে ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। সরকারনির্ধারিত হারে ঋণ বিতরণের ফলে বৃহৎ শিল্প ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন তবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ও ব্যবসার ক্ষেত্রে তা হিতে বিপরীত হয়েছে এবং ঋণপ্রবাহ ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রীর দেওয়া পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে ক্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, এটা স্পষ্ট যে করোনাকালে বিত্তবানেরা আরও বিত্তশালী হয়েছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের আয়রোজগার কমেছে। এ ছাড়া কর্মহীন হয়ে পড়েছে—এমন মানুষের সংখ্যাও অনেক বেড়েছে বলে উল্লেখ করেছে ক্যাব।
সুত্র: প্রথম আলো/এমএস