ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: জ্বালানি তেলের বিক্রয় কমিশন সাড়ে ৭ শতাংশ বৃদ্ধি করা না হলে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশের সব ডিপাে থেকে জ্বালানি তেল উত্তোলনে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছে পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন এ ঘোষণা দেয় সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম কাবুল, মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান রতন, সিনিয়র সহ-সভাপতি এম এ মোমিন, সহ-সভাপতি আব্দুল আওয়াল জ্যোতি, মাহবুবুল আলম, যুগ্ম মহাসচিব শেখ ফরহাদসহ সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও বিপিসি কর্তৃপক্ষ একক সিদ্ধান্তে বিবেচনাহীনভাবে জ্বালানি তেল বিক্রির ওপর কমিশন লিটারপ্রতি মাত্র ২০ পয়সা বাড়িয়েছে। যেখানে আমরা জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির অনেক আগে থেকেই বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি, সরকারি বিভিন্ন সংস্থার লাইসেন্স ফি বৃদ্ধি, সর্বোপরি ঊর্ধ্বমূল্যের বাজারে কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধিতে জ্বালানি তেল বিক্রির ওপর কমিশন ১.৬০ টাকা বৃদ্ধি করার জন্য দাবি করে আসছি। সেখানে সরকার গত ২০২১ সালে ৪ নভেম্বর ডিজেলের মূল্য এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৫ টাকা বৃদ্ধি করলেও জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের জন্য কোনো কমিশন বৃদ্ধি করেনি।
তারা বলেন, গত ৬ জানুয়ারি বিপিসির ডাকা মিটিংয়ে আমাদের একটি সম্মানজনক কমিশনের আশ্বাস প্রদান করা হয়। কিন্তু কার্যত দুঃখজনকভাবে বিপিসি ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের প্রতি চরম উদাসীনতা দেখিয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, জ্বালানি তেল বিক্রিতে তাদের লােকসান ঠেকাতে লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধি করেছে। অথচ যাদের মাধ্যমে এই পুরাে তেল বিক্রি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে তাদের ব্যবসার প্রতি বিন্দুমাত্র সুবিচার করা হয়নি। ফলে সব জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করেন।
‘বাংলাদেশের অধিকাংশ পেট্রলপাম্পই প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার লিটারের নিচে ডিজেল বিক্রি করে থাকে। ফলে দশমিক ২০ পয়সা দিয়ে গড়ে তাদের মাসিক ১২ হাজার টাকা আয় বৃদ্ধি পায়। যা দিয়ে অতিরিক্ত মূলধন বিনিয়ােগ এবং সব বৃদ্ধি পাওয়া খরচ চালানাে কঠিন হয়ে পড়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি সব বিভাগীয় প্রতিনিধির উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় তেল উত্তোলন, বিপণন ও পরিবহন বন্ধের মতো কর্মসূচি ঘােষণা রেখে কঠোর কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
সংগঠনটির সভাপতি সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম কাবুল বলেন, করোনার কারণে আমরাও ব্যবসায়িক দিক দিয়ে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। ইদানিং ফিলিংস্টেশনের ওপর আরোপিত বিভিন্ন সংস্থার অমীমাংসিত লাইসেন্স গ্রহণের ব্যাপারে হয়রানি শুরু হয়েছে। সঙ্গে বিপুল অংকের টাকা (অফিড খরচ হিসেবে) তারা দাবি করছে, যা আমাদের কমিশনের সীমিত আয় দিয়ে প্রদান করা সম্ভব না।
সংগঠনের মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান রতন বলেন, আমরা দাবি বাস্তবায়নে হরতাল-ধর্মঘটে কখনই যেতে চাইনি। আমরা আলাপ-আলােচনা ও বৈঠকের মাধ্যমে সব সমস্যা সমাধান করতে চেয়েছি। গত ৩ বছর ধরে দাবি-দাওয়া নিয়ে বহু পত্র দিয়েছি ও আলােচনা করেছি, বৈঠক করেছি। অথচ বৈঠক হচ্ছে ঠিকই কিন্তু দাবি বাস্তবায়ন করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত অ্যাসােসিয়েশনের মতামতকে উপেক্ষা করে একক সিদ্ধান্তে সরকার ডিজেলে ০.২০ পয়সা বিক্রয় কমিশন ধার্য করে। যা জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের আশাহত করেছে।
‘আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আন্দোলন ছাড়া দাবি আদায় সম্ভব নয় বিধায় সব জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের সিদ্ধান্তক্রমে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দাবি-দাওয়া বাস্তবায়ন ও জ্বালানি তেলের বিক্রয় কমিশন সাড়ে ৭ শতাংশ বৃদ্ধি করা না হলে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশের সব ডিপাে থেকে জ্বালানি তেল উত্তোলনে বিরত থাকবো।
এসময় তারা বেশ কিছু দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে-
১. জ্বালানি তেল বিক্রির প্রচলিত কমিশন কমপক্ষে সাড়ে ৭ শতাংশ করতে হবে।
২. জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা কমিশন এজেন্ট, যা পেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে।
৩. সড়ক ও জানপথ বিভাগ কর্তৃক পেট্রলপাম্পের প্রবেশদ্বারের ভূমির জন্য ইজারা গ্রহণের প্রথা বাতিল করতে হবে।
৪. ট্রেড লাইসেন্স ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ব্যতীত অন্য দপ্তর বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক লাইসেন্স গ্রহণের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।
৫. মালিক কর্তৃক প্রিমিয়াম পরিশােধ সাপেক্ষে ট্যাংকলরি শ্রমিকদের ৫ লাখ টাকা দুর্ঘটনা বীমা প্রথা চালু করার জন্য বীমা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করা।
৬. প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মােতাবেক সব জ্বালানি ডিপাে সংলগ্ন ট্যাংকলরি শ্রমিকদের জন্য পর্যাপ্ত শৌচাগার ও বিশ্রামাগার নিশ্চিত করতে হবে।