ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: জ্বালানি রুপান্তর ও ক্যাব প্রস্তাবিত জ্বালানি রুপান্তর নীতি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)- এর সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
‘ক্লিন এনার্জি ফর এ ক্লিন ওয়াল্ড’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে শনিবার রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে তিন পর্বে দিনব্যাপি এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা কলেজ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিসহ দেশের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী এবং পরিবেশবাদী সংগঠন ‘গ্রীণ ভয়েস’র সদস্যরা অংশ করেন।
সংলাপে শিক্ষার্থীদের মাঝে কুইজ প্রতিযোগিতা এবং জ্বালানি বিষয়ক উপস্থিত বক্তব্যের মাধ্যমে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
ক্যাব প্রস্তাবিত জ্বালানি রুপান্তর নীতির গুরুতর বিষয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে শুরুতে বক্তব্য রাখেন ক্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম।
তিনি বলেন, ‘আধুনিক পৃথিবীর নেপথ্যে রয়েছে জ্বালানির রুপান্তর। অতীতে আমাদের দেশে জ্বালানি বলতে বোঝাতো কেরোসিন তেলের মাধ্যমে বাতি জ্বালানো এবং পাট কাঠি পুড়িয়ে আগুন জ্বালানোকে। আর যোগাযোগ বলতে ঘোড়ার গাড়ি অথবা পায়ে হেঁটে চলাচলকে বোঝাতো। কিন্তু বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। জ্বালানি ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে জ্বালানি ব্যবস্থার রুপান্তরের মাধ্যমে। তবে বর্তমানে জীবাশ্ম জ্বালানির (তেল, গ্যাস ও কয়লা) ব্যবহারের কারণে পৃথিবীটা ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। তাই ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’
দেশের খ্যাতিমান এ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘বর্তমানে জ্বালানি খাতে দুর্নীতি এবং লুণ্ঠনমূলক ব্যবস্থা বিরাজমান থাকার কারণে জ্বালানি রুপান্তর নীতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। যার ফলে ভোক্তার অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে। তাই আগামীতে তোমরা যাতে ক্লিন এনার্জি তৈরির এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে পারো, তোমরা যাতে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ করতে পারো, তোমরা যাতে পরিবেশ রক্ষা করতে পারো, সে জন্যেই আজকের এই সেমিনার। তোমারদের নিয়ে (পরিবেশবাদী) একটি পার্লামেন্ট গঠন করা হবে। যে পার্লামেন্টে তোমরা জ্বালানি রুপান্তর নীতির বিষয়ে কাজ করতে পারো।’
সভাপতির বক্তব্যে ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট হুমায়ূন কবীর ভূঁইয়া বলেন, ‘ভোক্তা তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পণ্যের মালিকরা ইচ্ছেমতো পণ্যের দাম নিচ্ছে, ঔষধ কোম্পানিগুলো তাদের খেয়াল খুশি মতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ প্রতিযোগীতা কমিশন আইনে বলা হয়েছে- ব্যবসায়ীরা ইচ্ছা করলেই মন মতো দাম বাড়াতে পারেন না। তাহলে এখানে ভোক্তা প্রতারিত হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে ভোক্তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ভোক্তা যেন তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়, সে বিষয়ে তোমাদের কাজ করতে হবে।’
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ক্যাবের রিসার্চার শুভ কিবরিয়া এবং গ্রীণ ভয়েসের প্রতিষ্ঠাতা আলমগীর কবির।
সঞ্চালন বক্তব্যে তারা জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ফলে দৈনন্দিন জীবন তথা বিশ্বের ক্ষতির প্রভাব, জ্বালানি রুপান্তর নীতির অভাবে দেশের জ্বালানি খাতে লুণ্ঠনমূলক ব্যয়ের পরিমাণ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের ফলে দৈনন্দিন জীবনের উপকারিতা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করেন।
টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) গত বছরের অক্টোবর মাসের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৯০৯ দশমিক ১৯ মেগাওয়াট, যা দেশে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের চার শতাংশেরও কিছু কম। এর মধ্যে শুধু সৌর শক্তি থেকেই উৎপাদন হচ্ছে ৬৭৫ দশমিক ২ মেগাওয়াট, যা মোট নবায়নযোগ্য জ্বালানির ৭৪ শতাংশ।