নিজস্ব প্রতিবেদক:
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানের কথা শুনেই দোকান বন্ধ করে পালাতে শুরু করেন চাল ব্যবসায়ীরা। পরে মোবাইল করে ডেকে এনে দোকানে অভিযান চালায় ভোক্তা কর্মকর্তারা।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর পাইকারী চালের আড়তে এমন ঘটনা ঘটে।
বুধবার দুপুরে নিয়মিত বাজার তদারকির অংশ হিসেবে যাত্রাবাড়ীতে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিদপ্তর। এসময় মেসার্স খাদ্য ভান্ডার নামের একটি চালের আড়তে তদারকি শুরু করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়ে পুরো বাজারে। এতে মুহুর্তের মধ্যেই সব চালের আড়ৎ বন্ধ করে পালিয়ে যায় ব্যবসায়ীরা।
চালের দাম বেশি রাখা, মূল্য তালিকা সঠিকভাবে না টানানো এবং পাকা রশিদ না থাকায় মেসার্স খাদ্য ভান্ডারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
পরে মেসার্স হাজী মুছা রাইস এজেন্সির মালিককে ফোন করে দোকানে ডেকে আনা হয়। এর পর এই ব্যবসায়ীর দোকানে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিদপ্তর। সেখানে দেখা যায়, কম দামে চাল কিনে মজুত করে রাখা হয়েছে। এছাড়া এক বস্তা চাল লাভ সহ বিক্রি করার কথা ছিল ৩০৫০ টাকা। চালের দাম বৃদ্ধির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অধিক মুনাফা লোভী এই ব্যবসায়ী প্রতি বস্তা চাল বিক্রি করছে ৩৭৫০ টাকা। এতে তিনি প্রতি বস্তায় ৭০০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে।
এই ব্যবসায়ীকেও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যাওয়া মেসার্স কাজী ট্রেডার্সের তালা উপস্থিত জনগণের সামনে ভাঙ্গার নির্দেশ দেয় ভোক্তা কর্মকর্তারা। তালা ভাঙ্গার চেষ্টাকালের ঘটনাস্থলে উপস্থিত হোন মেসার্স কাজী ট্রেডার্সের মালিক সজিব। এসময় তিনি দোকান খুলে দিলে অভিযান শুরু করে ভোক্তা কর্মকর্তারা। অভিযানে দেখা যায়, দোকানে টানানো মূল্য তালিকায় সকল পণ্যের দাম লিখা নেই। নামেমাত্র কয়েকটি পণ্যের দাম লিখে রেখেছেন। এ অপরাধে এই প্রতিষ্ঠানটিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
পরে কলাপট্টি এলাকার মেসার্স হাজী নয়ন ট্রেডার্সকে ৫০ হাজার এবং মেসার্স করিম রাইস এজেন্সিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা জানান, ম্যাজিস্ট্রেটরা অভিযানে আসলেই যেকোন ছোটখাট ভুল পেলেই জরিমানা করে। এই ভয়ে দোকান বন্ধ করে পালিয়েছি।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান, সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডলের নেতৃত্বে এই অভিযানে উপস্থিত ছিলেন, প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম।
অভিযানে বিষয়ে জব্বার মণ্ডল ভোক্তাকণ্ঠকে বলেন, নিয়মিত বাজার তদারকির অংশ হিসেবে আজ যাত্রাবাড়ীতে চালের আড়ৎগুলোতে অভিযান চালানো হয়েছে। চালের মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, মূল্য তালিকায় প্রদর্শনকৃত মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্যে চাল বিক্রি করা, ক্যাশ মেমো সংরক্ষণ না করা, পূর্বের দরের ক্রয়কৃত চালে ১ দিনের ব্যবধানে মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করা ইত্যাদি অপরাধে কাজলা এলাকার কুতুবদিয়ার মেসার্স খাদ্য ভান্ডারকে ৫০ হাজার টাকা, মেসার্স মুছা রাইস এজেন্সিকে ৫০ হাজার টাকা, মেসার্স কাজী ট্রেঢার্সকে ২০ হাজার টাকা এবং কলাপট্টি এলাকার মেসার্স হাজী নয়ন ট্রেডার্সকে ৫০ হাজার টাকা এবং মেসার্স করিম রাইস এজেন্সিকে ৫০ হাজার টাকাসহ ৫ প্রতিষ্ঠানকে সর্বমোট ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
তিনি বলেন, প্রাথমকিভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। তবে পরবর্তীতে এমন ভুল করলে আরও বড় ধরনের শাস্তির আওতায় আনা হবে।
মিল মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক সারাদেশের জেলায় জেলায় ভোক্তা কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। যারা ভোক্তা স্বার্থ বিরোধী কার্যক্রম করবেন তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিবে ভোক্তা অধিদপ্তর।
এমন অভিযান নিয়মিত অব্যহত থাকবে বলে জানান তিনি।
আরইউ