ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে বরাবরের মতোই হিমশিম খেতে হয়েছে সরকারকে।
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে নিত্যপণ্যের দাম। করোনাভাইরাসের (কোভিড ১৯) প্রভাবে মানুষের আয় কমার পাশাপাশি বছরজুড়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্তরা। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণে বছর পার করলেও খুব একটা সফল হয়নি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বছরের শেষ সময়েও প্রতি সপ্তাহের ব্যবধানে হুট-হাট বাড়ছে পেঁয়াজ, চিনি, আলু, তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে সঙ্গে ইভ্যালিসহ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা, চামড়া-শিল্পের সংকটসহ নানা প্রতিকূলতায় বছর পার করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
নিয়ন্ত্রণহীন নিত্যপণ্যের বাজার
করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের উপর। আয় কমার পাশাপাশি নিত্যপণ্যের বাজারের লাগামহীন দামে নাভিশ্বাস উঠেছে নিম্নআয়ের মানুষের। বছরজুড়ে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। চলতি বছরও অক্টোবরে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি দাম বেড়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকায় ওঠে। সেজন্য বাজারে দাম স্বাভাবিক রাখতে পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয় সরকার। ফলে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে।
তবে সেটি খুব বেশি সময় স্থায়ী হয়নি, বছরের শেষে এসে আবারও কিছুটা বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম। একই অবস্থা ছিল চাল, ডাল, তেল, লবণ, শাকসবজি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পণ্যের দামেও। এছাড়া চলতি বছর স্বস্তি ছিল না মুরগির বাজারেও। পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগি, লাল লেয়ার মুরগির দামও ছিল বেশি।
আদা-রসুন ও গরম মসলার বাজারও ছিল চড়া
অন্য বছরের মতো চলতি বছরও ঈদসহ বিভিন্ন দিবস কেন্দ্র করে বেড়েছে আদা-রসুন ও গরম মসলার দাম। মহামারি করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারঘোষিত বিধিনিষেধের কারণে মসলার বাজারেও এর প্রভাব পড়ে।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, স্বাভাবিক সময়ে গরম মসলা যে পরিমাণ বিক্রি হয়, বিভিন্ন উৎসবের আগে এ জাতীয় পণ্য তার চেয়ে বেশি বিক্রি হয়। তবে এবার করোনাসহ মানুষের আর্থিক সংকটে এমনকি স্বাভাবিক সময়ে যে মসলা বিক্রি হয়, এখন বিক্রি তার ২০-৩০ শতাংশ মতো আছে। অর্থাৎ স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৭০ শতাংশের মতো বিক্রি কমে গেছে। করোনার কারণে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর মসলা বিক্রি অনেকটা কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
নিত্যপণ্য বিক্রিতে টিসিবির উদ্যোগ
করোনা মহামারির মধ্যে সবচেয়ে সংকটময় সময় পার করেছে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্তরা। এসময়ে তাদের ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য। এর ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মতো সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও সমাধান পেয়েছে নিম্নআয়ের মানুষ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, চলতি বছর টিসিবির পণ্য বিক্রি বাড়ানো ও মনিটরিং জোরদার করায় দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়ায় দেশের দুর্যোগের এসময়ে নিত্যপণ্য সাধারণ মানুষের জন্য যৌক্তিক মূল্যে বিক্রি করা সম্ভব হয়। ভবিষ্যতে টিসিবির মাধ্যমে আরও পণ্য বিক্রি বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিতে পরিকল্পনা করছে সরকার।
টিসিবির ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রিতে ব্যাপক সাড়াও মিলেছে। চিনি, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল ও পেঁয়াজ- এ চারটি পণ্য কিনতে ট্রাক সেল কেন্দ্রে ভিড় করেছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষ। ব্যয় কমাতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনেছেন ক্রেতারা। সম্প্রতি বৃষ্টির উপেক্ষা করে রাজধানীতে টিসিবির বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে ভিড় দেখা গেছে।