মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের হাট-বাজারসমূহে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব পণ্য কিনতে গিয়ে ক্রেতাদের দম বন্ধ হওয়ার জোগাড় হচ্ছে।
তবে এ বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ধরনের তদারকি লক্ষ্য করা যায়নি।
শনিবার উপজেলার ভানুগাছ বাজার, শমসেরনগর, আদমপুর ,রানীবাজার, মুন্সিবাজার ও পতনউষারের কাঁচাবাজার ঘুরে ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বস্তা চাল পূর্বে ছিল ২৪০০ টাকা বর্তমানে ২৫০০ টাকা, গুড়া মরিছ প্রতি কেজি পূর্বে ছিল ২৫০ টাকা, বর্তমানে ২৮০ টাকা, হলুদ প্রতি কেজি পূর্বে ছিল ১২৫ টাকা বর্তমানে ২শ টাকা, আলু প্রতি কেজি পূর্বে ছিল ১২ টাকা বর্তমানে ১৫টাকা, পেয়াজ প্রতি কেজি পূর্বে ছিল ৩০ টাকা বর্তমানে ৪০ টাকা।
রসুন প্রতি কেজি পূর্বে ছিল ৪০ টাকা, বর্তমানে ৬০ টাকা, মুশুড় ডাল পূর্বে ছিল ৯৫ টাকা বর্তমানে ১০৫ টাকা, ছানার ডাল পূর্বে ছিল ৬০ টাকা বর্তমানে ৬৫ টাকা, চিনি পূর্বে ছিল ৭৭ টাকা বর্তমানে ৯৫ টাকা, আদা প্রতি কেজি পূর্বে ছিল ৮০ টাকা বর্তমানে ১০০ টাকা, ঢেরশ প্রতি কেজি পূর্বে ছিল ২০ টাকা বর্তমানে ৫০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি পূর্বে ছিল ২০ টাকা বর্তমানে ৫০ টাকা, পুঁই শাক পূর্বে ছিল ২০ টাকা বর্তমানে ৩০ টাকা, ঝিঁঙ্গা পূর্বে ছিল ২০ টাকা বর্তমানে ৬০ টাকা।
বেগুন প্রতি কেজি পূর্বে ছিল ১০০ টাকা বর্তমানে ৫০ টাকা, লেবু প্রতি হালি পূর্বে ছিল ২০ টাকা বর্তমানে ১০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি পূর্বে ছিল ১০০ টাকা বর্তমানে ৮০ টাকা, সয়াবিন তেল প্রতি লিটার পূর্বে ছিল ১৬০ টাকা বর্তমানে ২০৫ টাকা, ছানা পূর্বে ছিল ৬০ টাকা বর্তমানে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গরু ও মহিষের মাংস ৭০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, বয়লার মুরগী কেজি প্রতি ১৪০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, লাল মুরগী ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি কেজি মাছে আগের তুলনায় ৮০ থাকে ১৫০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।
বাজার করতে আসা গৃহকর্মী রুনা বেগম, পরশ, রাকেল অভিযোগ করে বলেন, আমরা আর খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারবো না। বাজারে কোন পণ্যেরই সংকট নেই। তবুও ১৫ দিন আগে যে জিনিস যে দাম দিয়ে কিনেছি আজ বাজারে এসে দেখি প্রতিটি পণ্যেরই দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি চাওয়া হচ্ছে।
দিনমজুর রহমত আলী ও উমেশ দেবনাথ বলেন, এমনিতেই প্রায় প্রতিদিন বৃষ্টির কারণে কাজ করতে পারছি না। ফলে আয়-রোজগার কমে গেছে। বাজার করতে গেলে জিনিসের দাম শুনে আর মাথা ঠিক থাকে না। পরিবার নিয়ে খেয়ে-পড়ে বাঁচতে পারবো কি-না বুঝতে পারছি না।
কাঁচামাল ব্যবসায়ী শামিম আহমদ বলেন, ‘আমরা যে সময় যে দামে ক্রয় করি তার চেয়ে একটু লাভ করেই বিক্রি করে থাকি। এখানে আমাদের কোন হাত নেই। বাজারে সব পণ্যই আছে, তবে আগের চেয়ে বেশ কিছু সবজির দাম একটু বেড়েছে।’
পাইকারী ব্যবসায়ী কেশব পাল বলেন, ‘বাজারে পণ্যের কোন কমতি নেই। আমরা শ্রীমঙ্গলের পাইকারী বাজার থেকে পণ্য কিনে আনি। তারা যে সময় যে দাম দরে দেয়, আমরা সেই দামেই বিক্রি করি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গণমাধ্যম কর্মী বলেন, ‘মানুষ ও সমাজের কথা আমরা তুলে ধরি কিন্তু আমাদের বাস্তব চিত্র কেউ দেখেনা। দ্রব্যমূল্য যেভাবে বৃদ্ধি হচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে আমরা অনাহারে একদিন মারা যাবো। শুধু দ্রব্যমূল্য নয় প্রতিটি জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।’
জেলা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আল আমীন বলেন, ‘নিয়মিত ভাবে প্রতিদিনই ভোক্তা অধিকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রতিটা বাজারগুলো জনস্বার্থে অভিযান চলিয়ে যাচ্ছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে নিয়মিত বাজারগুলো তদারকি করা হচ্ছে।’