রাজশাহীতে জেলা প্রশাসন থেকে আম পাড়ার সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। তাই চলতি সপ্তাহ থেকে রাজশাহীর বাঘা-চারঘাট থেকে আম আসতে শুরু করেছে। এর ফলে চাঙা হয়ে উঠেছে রাজশাহীর আমের বাজারগুলো। তবে, এবার রাজশাহীতে আমের বাজার চড়া বলেই জানাচ্ছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের মোকাম পুঠিয়ার বানেশ্বর হাটে দেখা যায়, রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের পাশেই পুরোনো কাচারি মাঠকে ঘিরে ধুলোবালি ও প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে এখন আমের হাট এরই মধ্যে জমতে শুরু করেছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা আমবোঝাই ভ্যানগাড়ি ও নসিমনগুলোর জটলা করে থাকছে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সবাই গাদাগাদি করে আমের পসরা সাজিয়ে বসছেন। আর প্লাস্টিকের ক্যারেটে করে থরে থরে সাজানো থাকছে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন জাত ও স্বাদের কাঁচা-পাকা আম।
প্রথম দিকে ঘন কুয়াশা ছিল। এরপর মার্চে অসময়েও কুয়াশা পড়েছে এবার। এতে আমের মুকুলের ক্ষতি হয়েছে। এরপর এপ্রিল থেকে আবার শুরু হয় দাবদাহ। এর ওপর ঝড়-ঝঞ্ঝা ও শিলাবৃষ্টি রয়েছে। এমন নানান কারণে চলতি মৌসুমে আমের উৎপাদন কম হয়েছে। ফলে ভরা মৌসুমে বাজারে আমের সরবরাহ কম থাকায় এবার শুরুতেই আমের দাম বেশি। এ কারণে এবার নির্ধারিত সময়ের আগেই রাজশাহী অঞ্চলের বাজার থেকে ফুরিয়ে যেতে পারে আম। এমনটাই ধারণা করছে আম চাষিরা।
এবার চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় আমের বাজার চড়া। তাই আমের দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ লক্ষ্য করা গেছে। প্রতিদিন বানেশ্বর হাটে গড়ে ৪০-৪৫ লাখ টাকার আম কেনাবেচা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের পর দাম বেড়েছে। আগামী সপ্তাহে বাজার থেকে বিদায় নেবে গোপালভোগ আম। এরই মধ্যে তার দাম সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকা মণ পর্যন্ত উঠবে। গুটি জাতের আম প্রায় শেষের দিকে। আজ খিরসাপাত আম হাটে আসতে শুরু করেছে। তবে, বিক্রি হচ্ছে গোপালভোগের দামেই! সুস্বাদু ও সুমিষ্ট এই আম দুইটির পাইকারী দর ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা মণ। এছাড়া লক্ষণভোগসহ বিভিন্ন গুটি জাতের আম ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। পুঠিয়ার বানেশ্বর হাটের আম ব্যবসায়ীরা বলেন, মৌসুমের প্রথম দিকে হাটে গোপালভোগ, গুটি, রাণীনিপছন্দ এই তিন জাতের আম বিক্রি শুরু হয়। শুরুতে গোপালভোগ প্রতি মণ ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় এবং গুটি জাতের ও রানিপছন্দ আম বিক্রি ৯০০ থেকে শুরু করে ১ হাজার ৬০০ টাকায় পাইকারী বিক্রি হয়েছে।
রাজশাহী আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বলেন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরও আমের গুণগত মান ভালো আছে। দাবদাহের কারণে কেবল আকারে কিছুটা ছোট হয়েছে। আর চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কিছুটা কম। এজন্য আগামীদিনে আমের দাম আরও বাড়তে পারে।
চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ৩৭৩ হেক্টর বাড়িয়ে ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর ১৭ হাজার ৫৭৩ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ১১ দশমিক ৯ মেট্রিক টন। মোট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা দুই লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন। তাপদাহ কেটে গেলে আর নতুন কোনো প্রকৃতিক দুর্যোগ না এলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো সমস্য হবে না বলেও মতামত রাজশাহী কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তার। এদিকে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১৫ মে থেকে গুটি আম নামান চাষিরা। উন্নতজাতের মধ্যে গোপালভোগ ২০ মে, রানিপছন্দ ২৫ মে থেকে নামানো শুরু হয়। খিরসাপাত (হিমসাগর) ২৮ মে থেকে নামানোর সময় নির্ধারণ করা হলেও আজ ১ জুন থেকে এই আম ভাঙা শুরু হয়েছে। তাই পুরোদমে হিমসাগর আম এখনও বাজারে আসেনি। এছাড়া ল্যাংড়া আম ৬ জুন থেকে আম্রপালি এবং ফজলি আগামী ১৬ জুন থেকে নামানো শুরু হবে জানান, রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কে জে এম আব্দুল আওয়াল।