ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক:
বিগত ২১-২৪ মার্চ ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবসমূহের ওপর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কর্তৃক আয়োজিত গণশুনানি হলো। তাতে ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্যহার পেট্রোবাংলা ভারিত গড়ে ১১৭% বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। বিইআরসি’র কারিগরি কমিটি ২০% বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। ক্যাব ১.৬৫% (প্রতি ঘনমিটারে ০.১৭ টাকা) কমানোর প্রস্তাব করেছে এবং সকল শ্রেণির ভোক্তাদের জন্য বিদ্যমান মূল্যহার ৯.৬৯ টাকা বহাল রাখতে বলেছে। তবে গ্যাস তছরুপ প্রতিরোধে মাসিক ৭৭ ঘনমিটারের পরিবর্তে ৪০ ঘনমিটার ব্যবহার ধরে মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহকদের চুলাপ্রতি গ্যাসের মূল্যহার কমানোর এবং কস্ট প্লাস-এর পরিবর্তে আগামী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত জিটিসিএল-এর সঞ্চালন চার্জ ও তিতাসের বিতরণ চার্জ মুনাফা ব্যতীত শুধুমাত্র কস্ট-এর ভিত্তিতে নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে ক্যাব।
পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে এসওসি’র (দেশি কোম্পানি) গ্যাস ক্রয় মূল্যহার ৬০% এর অধিক এবং লাইসেন্সিগণের প্রস্তাবে সঞ্চালন ও বিতরণ চার্জহারযথাক্রমে ১২৯% ও ১২০%-৪০০% বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। গণশুনানিতে পেট্রোবাংলাসহ কোনো লাইসেন্সিই তাদের কোনো প্রস্তাব ন্যায্য ও যৌক্তিক বলে প্রমাণ করতে পারেনি। ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্যহার ২০% বৃদ্ধির ব্যাপারে কারিগরি কমিটির প্রস্তাবও ন্যায্য ও যৌক্তিক বলে প্রমাণ হয়নি। এরপরও ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির আদেশ হবে। বিইআরসি’তে সেইপ্রস্তুতি চলছে। ভোক্তারা আশংকা করে, বরাবরের মতো মূল্যবৃদ্ধির আদেশে গণশুনানি ‘প্রহসনে’ পরিণত হবে। তবে ব্যতিক্রমও হতে পারে, এমন আশায় আমরা আজ আপনাদের সামনেউপস্থিত হয়েছি।
গণশুনানিতে জানা যায়, ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে নির্ধারিত চাহিদা অনুযায়ী এলএনজি সরবরাহ না হওয়ায় উভয় বছরে যথাক্রমে ৭,২৮৪.৩ ও ৭,৬৪৮.৮ কোটি টাকা রাজস্ব উদ্বৃত্ত থাকে। সে-সব উদ্বৃত্ত রাজস্ব পেট্রোবাংলার প্রস্তাবেসমন¦য় করা হয়নি এবং ভর্তুকিও বিবেচনায় আসেনি।কারিগরি কমিটি তার প্রস্তাবে ভর্তুকি কিংবাউদ্বৃত্ত রাজস্ব এলএনজি ক্রয়ে রাজস্ব চাহিদায় সমন্বয় করেনি। তবে ভতুর্কি বাবদ ৭,০০০ কোটি টাকা এবং উদ্বৃত্ত রাজস্ব বাবদ ২,৫৩৭.৯১ কোটি টাকা পেট্রোবাংলার আয় হিসেবে গণ্য করেছে।কিন্তু ক্যাবের প্রস্তাবে ভতুর্কি বাবদ বিদ্যমান ভর্তুকি ১০,৭৯২ কোটি টাকা ও উদ্বৃত্ত রাজস্ব বাবদ ২,৫৩৭.৯১ কোটি টাকা এলএনজি ক্রয়ে রাজস্ব চাহিদায় সমন্বয় করা হয়েছে। ফলে এলএনজি ক্রয়ে প্রতি ঘনমিটারে নিট রাজস্ব চাহিদা পেট্রোবংলা, কারিগরি কমিটি ও ক্যাবের প্রস্তাবে যথাক্রমে ৫০.৩৪, ৪৮.০৮, এবং ২৭.০০ টাকা এবং এর বিপরীতে এলএনজি ক্রয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে যথাক্রমে ৮৫০ এমএমসিএফডি (চুক্তিভিত্তিতে ৭৫৭.৬৮ এবং স্পটমার্কেট থেকে ৯২.৩১ এমএমসিএফডি), এবং ৬৮৪.৮৫ এমএমসিএফডি (চুক্তিভিত্তিতে ৫৮৫.৫৭ এবং স্পটমার্কেট থেকে ১০০.২৮ এমএমসিএফডি), এবং ৬৭৬.৮৮ এমএমসিএফডি (চুক্তিভিত্তিতে ৫৮৫.৫৭ এবং স্পটমার্কেট থেকে ৯২.৩১ এমএমসিএফডি)।
পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে প্রতি ঘনমিটার এসওসি, আইওসি, চুক্তিভিত্তিক এলএনজি, এবং স্পটমার্কেট এলএনজি’র ক্রয় মূল্যহার ২০২১-২২ অর্থবছরে ধরা হয় যথাক্রমে ১.০৩, ২.৭৮, ৩১.৫৪, এবং ৮৩.৪৭ টাকা। অথচ ২০২০-২১ অর্থবছরে চুক্তিভিত্তিক ও স্পটমার্কেট এলএনজি’র ক্রয় মূল্যহার ছিল যথাক্রমে ২০.৫০, এবং ২৬.১৭ টাকা। তখন এলএনজি কম আমদানি হওয়ায় রাজস্ব উদ্বৃত্ত থাকে। যে-গ্যাস এক টাকায় পাওয়া সম্ভব, সে-গ্যাস উৎপাদন ও মজুদ বৃদ্ধিতে মনোযোগী না হয়ে বর্তমান অর্থবছরে অধিক মূল্যে এলএনজি আমদানি বৃদ্ধিতেমনোযোগী হওয়ায় রাজস্ব ঘাটতি বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা সমন্বয়ে মূল্যবৃদ্ধি করা হবে। তাতে ক্যাবের আপত্তি রয়েছে। কারণ নিজস্ব গ্যাস উৎপাদন ও মজুদ বৃদ্ধির পরিবর্তে চাহিদার তুলনায় এত অল্প পরিমাণে অতি উচ্চ মূল্যের স্পটমার্কেট-এলএনজি আমদানি দ্বারা গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত তৈরি করা সেবার স্বার্থে নয়, অসাধু ব্যবসার স্বার্থে। এমন অসাধু ব্যবসা প্রতিরোধ করার ব্যাপারে আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও বিইআরসি নিষ্ক্রিয়। ভোক্তা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন। বিইআরসি’র এই নিষ্ক্রিয়তা গ্যাস সংকট মোকাবেলায় এক বিরাট বাধা। মূল্যবৃদ্ধি না করেও নানা ধরনের অভ্যন্তরীণ সমন্বয় দ্বারা ভর্তুকি কমানো সম্ভব। অথচ মূল্যবৃদ্ধি ব্যতীত অন্য কোনো কিছু বিইআরসি’র বিবেচনায় নেই।
এসওসি’র গ্যাস ক্রয়মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য বিবেচিত না হওয়ায় কারিগরি কমিটি বিদ্যমান ক্রয়মূল্যহার ১.০৩ টাকা বহাল রাখার প্রস্তাব করেছে। ক্যাবের প্রস্তাবেও বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। পেট্রোবাংলা প্রস্তাবে বর্ণিত আইওসির গ্যাস ক্রয় মূল্যহার ২.৭৮ টাকা উভয় পক্ষই গ্রহণ করেছে।
এসওসিসহ সঞ্চালন ও বিতরণ লাইসেন্সিদের রাজস্ব চাহিদায় ‘ডাবলিউপিপিএফ’ ও ‘কর্পোরেট কর’ সমন্বয় হবে না। কারণ তা লাইসেন্সিদের নিট মুনাফা হতে প্রদেয়। তাই সঞ্চালন ও বিতরণের রাজস্ব চাহিদা নির্ধারণে ‘ডাবলিউপিপিএফ’ ও ‘কর্পোরেট কর’ ক্যাবের প্রস্তাবে বিবেচনা করা হয়নি। কিন্তু কারিগরি কমিটি ও লাইসেন্সিদের প্রস্তাবে বিবেচনা করা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যমান সঞ্চালন ক্ষমতার উল্লেখযোগ্য অংশ অব্যবহৃত থাকে বা স্বল্প ব্যবহার হয়। ২০১৫ সালে সঞ্চালন চার্জহার ছিল ০.১৫৬৫ টাকা। ২০১৯ সালের আদেশে তা হয় ০.৪৩৩৫ টাকা, প্রায় ৩ গুণ। জিটিসিএল প্রস্তাব করেছে ০.৭৩১৮ টাকা। কারিগরি কমিটি প্রস্তাব করেছে ০.৪৮৯০ টাকা। তবে ঋণের আসল ও নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়বায়ন বাবদ ব্যয়হার ০.২৪০৫ টাকা সমন্বয় হলে, তা হবে ০.৯৭ টাকা। অর্থাৎ ৫ গুণেরও বেশি। ক্যাবের প্রস্তাবে জিটিসিএল এর রাজস্ব চাহিদায় ‘ডাবলিউপিপিএফ’ ও ‘কর্পোরেট কর’ সমন্বয় হয়নি। ফলে বিদ্যমান চার্জহারে জিটিসিএল-এর রাজস্ব উদ্বৃত্ত থাকে ৪৫.১৩ কোটি টাকা।
২০২১-২২ অর্থবছরে কারিগরি কমিটি জিটিসিএল-এর নিট মুনাফা ও অবচয় প্রস্তাব করেছে যথাক্রমে ৪৫৬.৭৩ ও ৪৪২.৬১ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের আদেশে জিটিসিএল-এর নিট মুনাফা ও অবচয় ব্যয় ছিল যথাক্রমে ১১৩.৪৮ ও ১৪৮.৬৫ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের আদেশে নিট মুনাফা ও অবচয় ব্যয় ছিল যথাক্রমে ৬২০.৬০ ও ৪৬৭.৪০ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের তুলনায় ২০২২ সালে জিটিসিএল-এর সঞ্চালন ও অবচয় ব্যয়, এবং নিট মুনাফা বৃদ্ধি পায় যথাক্রমে ৫১৯.৮১% ও ২১৪.৪৩% এবং ৬৯১.৬০%। অথচ সঞ্চালনে ইনটেক গ্যাস ছিল ২০১৫ সালে ২৬ হাজার ৫২২.৪৯ ঘনমিটার এবং ২০২২ সালে হবে ২৬ হাজার ৩৯৩.০৪ ঘনমিটার। অর্থাৎ ২০২২ সালে জিটিসিএল কর্তৃক ২০১৫ সালের তুলনায় ০.৪৯% গ্যাস কম সঞ্চালন হবে। মুনাফা ও অবচয় তথা সঞ্চালন ক্ষমতা অব্যাহত বৃদ্ধি গ্যাস সঞ্চালন বৃদ্ধির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং সঞ্চালন খাত উন্নয়নে অস্বচ্ছতার প্রমাণ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিইআরসি আইনের ২২(ঘ) উপ-ধারা মতে লাইসেন্সির সামগ্রীক পরিকল্পনার ভিত্তিতে গৃহীত স্কিম অনুমোদনের একক এখতিয়ার বিইআরসি’র। অথচ জিটিসিএল কর্তৃক গৃহীত কোনো স্কিম/প্রকল্পে বিইআরসি’র কোনো অনুমোদন নেই। সঞ্চালন ক্ষমতা উন্নয়নে গৃহীত কোনো প্রকল্পে গ্যাস প্রাপ্তিও অনিশ্চিত।
তাই বিইআরসি’র জন্য সঞ্চালন ও অবচয় ব্যয়, এবং মুনাফা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা কেবল সঞ্চালনেই জরুরি নয়, আমদানি, অনুসন্ধান, উৎপাদন এবং বিতরণেও সে-সব ব্যয়বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ জরুরি। গণশুনানিতে সঞ্চালন ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সঞ্চালন ক্ষমতা যে অনুপাতে ব্যবহার হবে, সে অনুপাতে অবচয় ব্যয় রাজস্ব চাহিদায় সমন্বয় করে সঞ্চালন চার্জহার নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত জিটিসিএল-এর মুনাফার মার্জিন স্থগিত রেখে ব্রেক-ইভেনে পরিচালিত হবার আদেশ চাওয়া হয়েছে।
এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের পণ্য আমদানিতে ১,১৯,৩৮,৪৮৫ ডলার পরিমাণ অর্থের কাস্টমস সার্টিফাইড বিল অব এন্ট্রি জমা হয়নি বিধায় ওই পরিমান অর্থ রি-গ্যাসিফিকেশন চার্জহার নির্ধারণে সমন্বয় না করা এবং শেয়ারহোল্ডারদের বিনিয়োগের ওপর ১৮% সুদ প্রদানের পরিবর্তে অন্যান্য ক্ষেত্রের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রেখে ৭% এর বেশি সুদ গ্যাসের মূল্যহারে সমন্বয় না করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২১ সালে এলএনজি রি-গ্যাসিফিকেশন এবং পেট্রোবাংলার এলএনজি অপারেশনাল চার্জহার ছিল যথাক্রমে ১.২৭ টাকা ও ০.১৬ টাকা। কারিগরি কমিটি প্রস্তাব করে যথাক্রমে ২.১৭ ও ০.২৯ টাকা। উভয় ক্ষেত্রেই চার্জবৃদ্ধির এমন অসামঞ্জস্য প্রস্তাব ন্যায্য ও যৌক্তিক নয় বিধায় তাতে ক্যাবের আপত্তি রয়েছে। এই আপত্তি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উভয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমানচার্জহার বলবৎ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিতরণ লাইসেন্সিদের বিতরণ চার্জ শূন্য হলেও, তাদের প্রত্যেকের ব্যয় অপেক্ষা আয় এত বেশি যে, আয় দ্বারা ব্যয় সমন্বয় হওয়ার পরও প্রত্যেকেরই কম-বেশি রাজস্ব উদ্বৃত্ত থাকে। তারপরও কারিগরি কমিটি তাদের প্রত্যেককে ০.২৫ টাকা হারে বিতরণ চার্জ প্রদানের প্রস্তাব করেছে। ক্যাবের প্রস্তাবে বিতরণ চার্জ ০.২৫ টাকা ধরা হয়েছে এবং তা রাজস্ব চাহিদা বহির্ভূত। তথা উদ্বৃত্ত রাজস্ব হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ক্যাবের হিসাবে বিতরণে উদ্বৃত্ত রাজস্ব হবে ১,৬০৯.৬৬ কোটি টাকা। সকল লাইসেন্সির উদ্বৃত্ত রাজস্ব সমন্বয়ে বিইআরসি’র অধীনে ‘এনার্জি প্রাইস স্ট্যাবিলিটি ফান্ড’ (জ্বালানি মূল্যস্থিতি তহবিল) গঠনের জন্য ক্যাব প্রস্তাব করেছে।
কারিগরি কমিটি তিতাসকে অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে বিনিয়োগকৃত মূলধনের ওপর ১০% মুনাফা এবং শুধুমাত্র তিতাসকেই ২% সিস্টেমলস সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব করেছে। অতীতেও তিতাসকে অনুরূপ অন্যায় ও অযৌক্তিক সুবিধা দেয়ায় বিইআরসি’র নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। সরকরি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তিতাসের বিতরণ এলাকাসমূহে অবৈধ গ্যাস সংযোগ চলছে। মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহকদের নিকট থেকে মাসে ৭৭ ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য নেয়া হয়, দেওয়া হয় গড়ে ৪০ ঘনমিটারেরও কম। উদ্বৃত্ত গ্যাস একদিকে তছরুপ হয়, অন্যদিকে ভোক্তা প্রতারিত হয়। তাই তিতাসের বিরুদ্ধে বিইআরসি আইনের ৪৩ ও ৪৬ ধারা মতে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
গ্যাস উন্নয়ন তহবিল (জিডিএফ) ও জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল (ইএসএফ)-এর অর্থ রাজস্ব চাহিদা বহির্ভূত। তাই তা বাদে লাইসেন্সিদের রাজস্ব চাহিদা নির্ধারণ হবে। ক্যাবের প্রস্তাবে ভোক্তাপর্যায়ে বিক্রয়কৃত গ্যাসে প্রদত্ত ১৫% ভ্যাটে আমদানি পর্যায়ে এলএনজির ওপর প্রদত্ত ভ্যাট সমন্বয় করা হয়েছে। পেট্রোবাংলা ও কারিগরি কমিটির প্রস্তাবে তা করা হয়নি।
প্রতি ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহে বিদ্যমান ভর্তুকি ২.৯০ টাকা। এলএনজি কম সরবরাহের কারণে রাজস্ব উদ্বৃত্ত থাকে ২০২১-২২ অর্থবছরে ২,৫৩৭.৯১ কোটি টাকা। মূলত বিদ্যমান ভর্ভুকি ১০,৭৯২ কোটি টাকা ও উদ্বৃত্ত রাজস্ব ২,৫৩৭.৯১ কোটি টাকা এলএনজি আমদানি পর্যায়ে সমন্বয় করে, ডাবলিউপিপিএফ ও কর্পোরেট কর লাইসেন্সিদের রাজস্ব চাহিদায় সমন্বয় না করে, এলএনজি আমদানি পর্যায়ে প্রদত্ত ভ্যাট ভোক্তা পর্যায়ে প্রদত্ত ভ্যাটে সমন্বয় করে এবং সঞ্চালন ও বিতরণ পর্যায়ে উদ্বৃত্ত রাজস্ব সমন্বয় না করে ক্যাব ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্যহার ভারিত গড়ে ৯.৫৩ টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছে। বিদ্যমান মূল্যহার ১২.৬০ টাকা। অর্থাৎ গ্যাসের মূল্যহার ০.১৭ টাকা কমানোর প্রস্তাব করেছে। শুনানিতে বিইআরসি অনুমোদিত ৫ বছর মেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনা অনুযায়ী গৃহীত এসওসির গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন প্রকল্পসমূহে জিডিএফ থেকে বিইআরসি’র কর্তৃত্বে সরাসরি অর্থ বরাদ্দ ও বণ্টনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
গ্যাস সংকটের মূল কারণ গ্যাস খাত সুশাসন সংকটের শিকার। সুশাসন নিশ্চিত না হলে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না। ভোক্তার জ্বালানি ও পরিবেশ সংরক্ষণের অধিকার খর্ব হবে। গ্যাসে সেবা নয়, অসাধু ব্যবসা হবে। সে-ব্যাপারে সরকারি সংস্থা/প্রতিষ্ঠানসমূহ সহায়ক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। তাই ক্যাব নিম্নে বর্ণিত ২৫ দফা গ্যাস খাত সংস্কার প্রস্তাব করেছে:
জ্বালানি অধিকার সুরক্ষায় অসাধু ব্যবসা প্রতিরোধের লক্ষ্যেক্যাবের ২৫ দফা গ্যাস খাত সংস্কার প্রস্তাব:
(১) যেহেতু স্পটমার্কেট থেকে ৮৩.৪৭ টাকা মূল্যহারে আমদানিকৃত এলএনজির কারণে উদ্ভূত রাজস্ব ঘাটতি ভোক্তা পর্যায়ের গ্যাসের মূল্যহারে সমন্বয়ে ভোক্তাদের আপত্তি রয়েছে, এবং যেহেতু ওপরে বর্ণিত অসংগতির কারণে লুণ্ঠনমূলক ব্যয়বৃদ্ধিতে মূল্যবৃদ্ধি, সেহেতু মূল্যবৃদ্ধি ব্যতীত গ্যাস সরবরাহের নানা পর্যায়ের অযৌক্তিক ব্যয়বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ এবং ট্যাক্স-ভ্যাট ও মুনাফার অংশ বিশেষ সমন্বয় করে ঘাটতি সমন্বয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।
(২)বিদ্যমান ভর্তুকি ১০,৭৯২ কোটি টাকা ও উদ্বৃত্ত রাজস্ব ২,৫৩৭.৯১ কোটি টাকা এলএনজি আমদানি পর্যায়ে সমন্বয় করে, ডাবলিউপিপিএফ ও কর্পোরেট ট্যাক্স লাইসেন্সিদের রাজস্ব চাহিদায় সমন্বয় না করে, এলএনজি আমদানি পর্যায়ে প্রদত্ত ভ্যাট ভোক্তা পর্যায়ে প্রদত্ত ভ্যাটে সমন্বয় করে এবং সঞ্চালন ও বিতরণ পর্যায়ে উদ্বৃত্ত রাজস্ব লাইসেন্সির রাজস্ব চাহিদায় সমন্বয় না করে ভোক্তা পর্যায়ে ভারিত গড়ে গ্যাসের মূল্যহার ৯.৫৩ টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হলো। অর্থাৎ বিদ্যমান মূল্যহার অপেক্ষা গ্যাসের মূল্যহার ০.১৭ টাকা কমানোর প্রস্তাব করা হলো।
(৩) সব শ্রেণির গ্রাহকদের গ্যাসের বিদ্যমান মূল্যহার বলবৎ রেখে গ্যাস তছরুপ প্রতিরোধের লক্ষ্যে কেবলমাত্র আবাসিক গ্রাহকদের চুলায় মাসিক ৭৭ ঘনমিটারের পরিবর্তে ৪০ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার ধরে চুলা প্রতি গ্যাসের বিদ্যমান মূল্যহার কমানোর প্রস্তাব করা হলো।
(৪)গেইনে থাকায় কোনো গ্যাস বিতরণ লাইসেন্সির চার্জ নির্ধারণে সিস্টেম লস বিবেচিত হয়না। মিটারবিহীন যে পরিমাণ গ্যাস তছরুপ হয়, সে গ্যাস সমন্বয় করা হলে তিতাসও সিস্টেম গেইনেই থাকবে। তিতাসের বিতরণ চার্জ নির্ধারণে ২% সিস্টেম লস সমন্বয়ের প্রস্তাবে ক্যাবের আপত্তি রয়েছে।
(৫)তিতাসকে ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগকৃত মূলধনের ওপর ১০% মুনাফা প্রদানেক্যাবের আপত্তি রয়েছে। ক্যাবের মতে, উক্ত মুনাফা ব্যক্তিখাত এলপিজি লাইসেন্সিদের তুলনায় অবশ্যই কম হতে হবে।
(৬)বিইআরসি’র আদেশ প্রতিপালনে ছাড় দিয়ে গ্যাস তছরুপ ও অবৈধ সংযোগের সুযোগ বজায় রাখার দায়ে তিতাসকে পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত কস্ট প্লাসের পরিবর্তে শুধুমাত্র কস্ট বেসিসে পরিচালনার আদেশ প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই সাথে তিতাসের বিরুদ্ধে বিইআরসি আইনের ৪৩ ও ৪৬ ধারা মতে ব্যবস্থা গ্রহণেরও প্রস্তাব করা হয়েছে।
(৭)সঞ্চালনে অন্যায় ও অযৌক্তিক ব্যয়বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ না হওয়া পর্যন্ত জিটিসিএল এর মুনাফার মার্জিন স্থগিত রেখে ব্রেক-ইভেনে পরিচালনার আদেশ প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে।
(৮)সঞ্চালন ও বিতরণ ক্ষমতা যে অনুপাতে ব্যবহার হবে, সে অনুপাতে অবচয় ব্যয় রাজস্ব চাহিদায় সমন্বয় করে সঞ্চালন ও বিতরণ চার্জ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
(৯)মিটারযুক্ত গ্রাহকদের মিটার ভাড়া আলাদাভাবে আদায়ের পরিবর্তে গ্যাস বিতরণ লাইসেন্সিদের স্ব-স্ব রাজস্ব চাহিদায় সমন্বয় করে বিতরণ চার্জ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
(১০)পেট্রোবাংলা ও জ্বালানি বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে বিইআরসি’র নিয়ন্ত্রণে পক্ষসমূহের প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত কমিটি দ্বারা ‘গ্যাস উন্নয়ন তহবিল’ পরিচালনার প্রস্তাব করা হয়েছে। উক্ত তহবিলের অর্থ বিইআরসি’র কর্তৃত্বে এসওসির গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন প্রকল্পসমূহে বিইআরসি অনুমোদিত ৫ বছর মেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনা অনুযায়ী সরাসরি ভোক্তা পক্ষের ইক্যুইটি বিনিয়োগ হিসেবে বিনিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে।
(১১) বিইআরসি অনুমোদিত কৌশলগত পরিকল্পনা ব্যতীত অর্থাৎ বিইআরসি’র আদেশ ও আইন লংঘন করে এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে ‘গ্যাস উন্নয়ন তহবিল’ এর অর্থ ব্যয়ের দায়ে পেট্রোবাংলার বিরুদ্ধে বিইআরসি আইনের ৪২, ৪৩ এবং ৪৬ ধারা মতে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
(১২) গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে পেট্রোবাংলা ও জ্বালানি বিভাগ উভয়ের বিরুদ্ধেই আনীত অদক্ষতা ও ব্যর্থতার অভিযোগ তদন্তের জন্য ভোক্তা পক্ষের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কারিগরি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
(১৩) রি-গ্যাসিফিকেশন চার্জ, পেট্রোবাংলার চার্জ এবং বিইআরসি’র চার্জ (লাইসেন্সিদের নিকট থেকে গৃহীত ফিসসমূহ) শুনানির ভিত্তিতে নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান স্ব-স্ব চার্জসমূহ বহাল রাখার প্রস্তাব করা হেেয়ছে।
(১৪) রি-গ্যাসিফিকেশন চার্জ নির্ধারণে ঋণ বা বিনিয়োগকৃত মূলধনের ওপর মুনাফা ১৮% পরিবর্তে ৭% এবং এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে আমদানিকৃত পণ্যের কাস্টমস সার্টিফাইড বিলই কেবলমাত্র গ্যাসের মূল্যহারে সমন্বয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।
(১৫) এলএনজি ক্রয়ে বিনিয়োগ ও ভতুর্কি, সঞ্চালন ও বিতরণ অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ এবং জ্বালানি খাতে সুশাসন উন্নয়নের লক্ষ্যে রাজস্ব চাহিদা বহির্ভূত উদ্বৃত্ত রাজস্ব ও ভোক্তা অনুদানে ‘জ্বালানি মূল্যস্থিতি তহবিল’ গঠনের প্রস্তাব করার হয়েছে। অতীতের পুঞ্জিভূত উদ্বৃত্ত রাজস্ব লাইসেন্সিদের নিকট থেকে সংগ্রহ করে উক্ত তহবিলে আনারও প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই সাথে জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল বিলুপ্ত করে উক্ত তহবিলের সাথে একীভূত করারও প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকার ও লাইসেন্সিদের প্রাপ্য লভ্যাংশের ৫০% উক্ত তহবিলে নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই তহবিলের অর্থ বিনিয়োগকৃত মূলধন হিসেবে এলএনজি ক্রয়, নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন এবং সঞ্চালন ও বিতরণ ক্ষমতা উন্নয়নে গৃহীত বিইআরসি অনুমোদিত প্রকল্পসমূহে বিনিয়োগকারীর ‘ইক্যুইটি বিনিয়োগ’ হিসেবে বিনিয়োগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
(১৬) মূল্যহার বৃদ্ধি না করে গ্যাসের বিদ্যমান মূল্যহার বহাল রেখে সকল পর্যায়ের ট্যাক্স-ভ্যাট, লাইসেন্সিদের মুনাফা এবং অযৌক্তিক (লুণ্ঠনমূলক) ব্যয় কমিয়ে ভর্তুকি কমানোর কৌশল গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। সে জন্য পক্ষসমূহের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
(১৭) গ্যাস চুরি ও পরিমাপে কারচুপি এবং অস্বাভাবিক ব্যয়ে চাহিদার অতিরিক্ত সম্পদ অর্জনের মাধ্যমে ভোক্তাদের নিকট থেকে অর্থ লুণ্ঠন হচ্ছে। তার জন্য পেট্রোবাংলাসহ গ্যাস সরবরাহে নিয়োজিত সকল কোম্পানির স্ব স্ব পরিচালনা বোর্ডকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই অভিযোগ মন্ত্রী পরিষদ বিভাগে নিষ্পত্তির জন্য প্রেরণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
(১৮) গ্যাস খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য পক্ষসমূহের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিশন গঠন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
(১৯) ইতোপূর্বে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির আদেশসমূহে প্রদত্ত বিইআরসি’র আদেশাবলী পালন না করার দায়ে এবং গ্যাসখাত বিপর্যস্ত করা জন্য দায়ী সংশ্লিষ্ট লাইসেন্সিদের বিরুদ্ধে বিইআরসি আইনের ৪৩ ও ৪৬ ধারা মতে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত লাইসেন্সিদের মুনাফা মার্জিন স্থগিতের আদেশ প্রদানেরও প্রস্তাব করা হয়েছে।
(২১) তাছাড়া গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে ভোক্তা অনুদান কমিয়ে সে-অর্থে রাজস্ব চাহিদা বহির্ভূত গবেষণা তহবিল গঠনে আপত্তি দেওয়া হয়েছে।
(২২) তিতাসে অবৈধ গ্যাস সংযোগকারীদের শনাক্ত করার জন্য সিআইডি, ডিজিএফআই ও এনএসআই’কে দায়িত্ব প্রদানের জন্য তিতাসকে আদেশ প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে।
(২৩) শুরু থেকে হাল নাগাদ তিতাসের শেয়ারহোল্ডারদের নামের তালিকা এবং বছরভিত্তিক তাদের প্রত্যেকের প্রাপ্ত লভ্যাংশ ওয়েবসাইটে প্রকাশের আদেশ প্রদানের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
(২৪) গ্যাস বিতরণ ও বণ্টনে বিস্ফোরণ/দুর্ঘনাজনিত ক্ষতিপূরণ প্রদানের লক্ষ্যে ডাবলিউপিপিএফ ও লাইসেন্সিদের নিট মুনাফা হতে কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত অর্থে একটি তহবিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। উক্ত তহবিল কমিশন অনুমোদিত গাইডলাইন দ্বারা পরিচালিত হবে।
(২৫) গ্যাস সেবাকে স্বার্থসংঘাত মুক্ত করার লক্ষ্যে লাইসেন্সিদের পরিচালনা বোর্ডকে আমলামুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে এবংএ-প্রস্তাব গণশুনানির প্রস্তাব হিসেবে সরকারের নিকট প্রেরণেরও প্রস্তাব করা হয়েছে।
২০১৯ সালে বিইআরসি কর্তৃক গ্যাসের মূল্যহার পরিবর্তন আদেশের ৭.১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে:
“গণশুনানিতে এবং গণশুনানি পরবর্তী মতামতে দেশীয় গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সমুদ্রবক্ষে গ্যাস অনুসন্ধানে ব্যবস্থা গ্রহণ, দেশীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স-এর সক্ষমতা বাড়িয়ে স্থলভাগে ও সমুদ্রবক্ষে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের ওপর জোর দেওয়া, ছাতক (পূর্ব) গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলনে গুরুত্ব আরোপ করা, গ্যাসের চাহিদা না থাকায় ভোলা গ্যাসক্ষেত্রের স্বল্প ব্যবহৃত উৎপাদনক্ষমতার ব্যবহার বৃদ্ধি নিশ্চিত করা, বাপেক্স সম্পর্কিত বিষয়ে বিভিন্ন পক্ষের প্রতিনিধি সমন্বয়ে কমিটি গঠন, জ্বালানি মনিটরিং কমিটি গঠন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সংস্কার প্রস্তাব ও অন্যান্য বিষয়ে বক্তব্য এসেছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ২০০৩ অনুযায়ী এ সকল বিষয় কমিশনের আওতাভুক্ত নয়।”
বিইআরসি’র উক্ত বক্তব্যে ভোক্তাদের ভিন্ন মত রয়েছে। বিইআরসি আইনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সে লক্ষ্যে যা কিছু করা দরকার, তন্মধ্যে আইনের ২২(ট) উপধারা মতে ভোক্তা বিরোধ নিষ্পত্তি ও অসাধু ব্যবসার প্রতিকার করা। তাছাড়া, ২২(ঝ) উপধারা মতে সরকারকে সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া। তাইক্যাবের মতে বিইআরসি’র উক্ত বক্তব্যবিইআরসি আইনের সাথে সাংঘর্ষিক এবং অগ্রহণযোগ্য।
(ড. এম শামসুল আলম)
জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও জ্বালানি উপদেষ্টা, ক্যাব।