- পণ্যের ওজন কম দিলে দায় বাজার কমিটির
পণ্য, ওজন, কম দিলে, দায়, বাজার, কমিটি, ক্যাব
জেলা প্রতিনিধি চট্টগ্রাম
ওজনে কম বা অনিয়মের দায় বাজার কমিটিকেই নিতে হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (৩ জুন) চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে পবিত্র রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের অবাধ সরবরাহ ও দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ হুশিয়ারি বার্তা দেন।
তিনি বলেন, ওজনে কম পাওয়া, ভেজাল বা অনিয়ম পেলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। এছাড়া এর দায় বাজার কমিটিকেই নিতে হবে। তাই বাজার কমিটিকে বাজারের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। অভিযানে ক্যাব, সাংবাদিক ইউনিয়ন, বিজিবি, র্যাব, বিএসটিআই, ভোক্তা অধিকারসহ সব প্রতিষ্ঠানের একজন করে প্রতিনিধি থাকবে বলেও জানান তিনি।
মমিনুর রহমান বলেন, পবিত্র রমজান মাসে ইফতারসামগ্রী ঠিকমত বানানো হয়েছে কিনা, খোলা অবস্থায় বিক্রি হচ্ছে কিনা তা দেখতে অভিযান চালানো হবে। এ ব্যাপারে আমরা কঠোর থাকব। রোজায় ফুটপাতে ইফতারসামগ্রী বিক্রি করা যাবে না। রেস্টুরেন্টের বাইরে বিভিন্ন দোকানে বানানো খাবার মনিটরিং করা হবে।
রেশন কার্ডের মাধ্যমে টিসিবি পণ্য বিক্রি করা হবে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, চলতি মাসে এবং আগামী মাসে মোট দুই পর্বে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হবে। তবে এবারের প্রক্রিয়াটা একট ভিন্ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক লাখ মানুষকে টিসিবির পণ্য দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে বোঝাই যাচ্ছে আমাদের সক্ষমতা এখন বেড়েছে। তবে চট্টগ্রাম মহানগর ও বিভিন্ন উপজেলা মিলিয়ে মোট ৫ লাখ ৩৫ হাজার মানুষের কাছে রোজার আগে ও রোজার সময় রেশন কার্ডের মাধ্যমে ন্যায্য দামে ছোলা, ডাল, তেল, চিনি বিক্রি করা হবে। টিসিবির রির্ধারিত মূল্যে ২ কেজি করে পণ্য নিতে পারবেন ক্রেতারা; তবে দেখাতে হবে কার্ড। তাছাড়া চট্টগ্রামের বিভিন্ন ব্যক্তি, কাউন্সিলর ও ব্যবসায়ীরা নিজ নিজ উদ্যোগে ভর্তুকি দিয়ে পণ্য বিক্রি করে থাকেন। এতে সাধারণ মানুষও উপকৃত হয়। তাই আমরা টিসিবির সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের পণ্যগুলো বিক্রির ব্যবস্থা করব।
রমজান মাস উপলক্ষে বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রমজান মাসে প্রতিটি মার্কেটের প্রবেশমুখে সভাপতি, সেক্রেটারির নাম, মোবাইল নম্বর রাখতে হবে যাতে করে তাদের নিয়ে আমরা অভিযানে যেতে পারি। বড় বড় বাজারগুলোতে ডিজিটাল ডিসপ্লের মাধ্যমে বাজার তালিকার ব্যবস্থা করব। বড় বড় শপিংমল ও মার্কেটে অভিযোগ বক্স রাখতে হবে। পাশাপাশি ছোলা, তেল, চিনি ও পেঁয়াজ কয়েকটি বাজারে একেবারে আমদানি মূল্যে খুচরা বিক্রেতারা কিনতে পারবেন সেটার ব্যবস্থা করা হবে।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, আজ বাজারে দোকানে গেলাম। তেলের খোঁজ নিলাম। দোকানদার বলল তেল নাই। কারণ জানতে চাইলে বলে তেলের সরবরাহ কম। কেন বাজারে তেল নাই সেটার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। ক্যাব কারো শত্রু নয়। আমরা চাই ব্যবসায়ীরা সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা করুক। জনগণ ভোগান্তি থেকে বাঁচুক।
সভায় চট্টগ্রাম চেম্বার প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বলেন, পবিত্র রমজান মাসে আমাদের বাজারখাত যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। পণ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। আমরা সবাইকে অনুরোধ করব, যারা আমদানিকারক আপনারা পণ্য আমদানি করেন। চাহিদা অনুযায়ী যোগান ঠিক রাখেন। বিশেষ করে তেল, পেঁয়াজের দামগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার। ভেজাল খাদ্য বিভিন্নভাবে তৈরি হচ্ছে। এটা যেন কেউ করতে না পারে সেজন্য তদারকি বাড়াতে হবে। যে পণ্য কিনবেন আপনি কত দিয়ে কিনছেন আর কত দিয়ে বিক্রি করছেন তা পরিস্কারভাবে তুলে ধরতে হবে। সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। যতটুকু দরকার ততটুকুই কিনতে হবে। অল্প অল্প করে পণ্য কিনলে বাজারের উপর চাপ পড়ে না। বেশি পণ্য কিনে মজুদ গড়ার অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। আমরা এবারও চট্টগ্রাম চেম্বারের পক্ষ থেকে ভর্তুকি দিয়ে পণ্য দিচ্ছি। আমি সবাইকে বলব যারা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী বা ব্যক্তি আছেন আপনারা নিজেরা ভর্তুকি দিয়ে কম দামে পণ্য বিক্রি করে সাধারণ মানুষের পাশে থাকবেন।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগির আহমেদ বলেন, দাম বাড়লেই মানুষ চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের দিকে আঙ্গুল তোলেন। আমরা চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা পরিস্কারভাবে বলতে চাই রোজার মাসে আমরা দাম বাড়াব না। আর আপনারাও মেমো ছাড়া পণ্য কিনবেন না। অন্য বাজার দর যাচাই করবেন। তাহলে আপনারা বাজারদরের তারতম্য বুঝতে পারবেন।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারি পরিচালক (সিএম) নুর মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, আমরা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে অভিযান পরিচালনা করছি। আমরা রমজানের সময় বিভিন্ন পণ্য বিশেষ করে মশলা, তেল, লবণ, মুদি পণ্যের নমুনা নিই। তবে আমাদের দাবি থাকবে অভিযানের সময় প্রশাসনের আরো বেশি সহযোগিতা খুব প্রয়োজন।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের জেলা কার্যালয়ের নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তার প্রতিনিধি আবদুল কাদির বলেন, আমাদের প্রশাসনিক যে কার্যক্রম তা পরিচালনার ক্ষেত্রে পুলিশি সহায়তা প্রয়োজন। উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমাদের সহায়তা করতে হবে। তাহলে আমরা নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের বিষয়ে যথাযথভাবে কাজ করতে পারবো।
ভোক্তা অধিকারের সহকারি পরিচালক দিদার হোসেন বলেন, আমরা প্রতিদিন অভিযান চালাই, আজও গিয়েছি। আমরা বাজারদর তদারকি করছি। অনিয়ম, অভিযোগ পেলেই আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি। অন্যায়কারী যেই হোক আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। আমরা রোজার মাসেও সঠিকভাবে বাজার তদারকি করে পণ্যে বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবো বলে আশা করছি।
এছাড়া সভায় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম চাল মিল ব্যবসায়ী সমিতির সহ সম্পাদক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর, কেয়ারি পরিচালক বেবি হাসান, নিউমার্কেট দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, চট্টগ্রাম ড্রিংকিং ওয়াটার এসোশিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ফয়সাল আবদুল্লাহ আদনানসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মালিক ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।