আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ফেসবুক এটি নিয়ে এবার নতুন তথ্য সামনে এনেছেন সংস্থাটির সাবেক কর্মকর্তা ফ্রান্সেস হাউজেন। তিনি বলেছেন, কোম্পানির বিভিন্ন সাইট ও অ্যাপগুলো শিশুদের ক্ষতি করছে, (মানুষের মাঝে) বিভক্তি সৃষ্টি করছে এবং বিশ্বের দেশে দেশে গণতন্ত্রকে দুর্বল করছে। তারা (ফেসবুক) মানুষের নিরাপত্তার আগে একচেটিয়া ব্যবসায়িক মুনাফাকে বেশি প্রাধান্য দেয়।’
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের উপকমিটির সামনে একথা বলেন ফেসবুকের সাবেক এই কর্মকর্তা। বুধবার (৬ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ফেসবুকের সিভিক ইন্টেগ্রিটি গ্রুপের প্রোডাক্ট ম্যানেজার ছিলেন ফ্রান্সেস হাউজেন। গত মে মাসে সংস্থাটির চাকরি থেকে বিদায় নেন তিনি। তবে এর আগেই ফেসবুকের কিছু গোপন নথিপত্র নিজের সংরক্ষণে রেখেছিলেন হাউজেন। সেগুলোই একের পর এক সামনে আনছিলেন নিজের পরিচয় প্রকাশ না করেই।
সম্প্রতি মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল সিবিএস টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসেন ৩৭ বছর বয়সী ফ্রান্সেস হাউজেন। সেখানে তিনি ফেসবুক ও এর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিলে সিনেটের উপকমিটির সামনে দেওয়া বক্তব্যেও নিজের সাবেক প্রতিষ্ঠানের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি।
তবে ফেসবুক বলছে, হাউজেনের অভিযোগ বিভ্রান্তিকর এবং তিনি এমন সব বিষয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য দিচ্ছেন; যেসব বিষয়ে আসলে তার কোনো জ্ঞান নেই।
মঙ্গলবার ক্যাপিটল হিলে ফ্রান্সেস হাউজেন বলেন, ‘ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামকে কিভাবে আরও নিরাপদ করা যায়, সেটি ভালো করেই জানে কোম্পানিটি। কিন্তু প্রয়োজনীয় সেসব পরিবর্তন ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আনতে চায় না। কারণ তারা (ফেসবুক) মানুষের নিরাপত্তার আগে একচেটিয়া ব্যবসায়িক মুনাফাকে বেশি প্রাধান্য দেয়।’
ফেসবুকের ওপর বিস্তৃত ও একক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান মার্ক জাকারবার্গেরও সমালোচনা করেন সাবেক এই নারী কর্মকর্তা। তার ভাষায়, কেবল নিজের কাছে ছাড়া বর্তমানে জাকারবার্গ আর কারও কাছেই জবাবদিহি করেন না।
এদিকে সোমবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রামের সার্ভার ৬ ঘণ্টার বেশি সময় ডাউন ছিল। এতে দীর্ঘসময় ধরে ভোগান্তিতে পড়েন বিশ্বব্যাপী ৩৫০ কোটি ব্যবহারকারী। অন্য সকল কিছুর সমালোচনা করলেও ফেসবুকের সার্ভার ডাউন থাকার প্রশংসা করেন হাউজেন।
সিনেটে তিনি বলেন, ‘গতকাল আমরা দেখলাম, ফেসবুক অল্প সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে গেল। আমি জানি না এর কারণ কি! তবে আমি এটা জানি যে, এই পাঁচ বা ছয় ঘণ্টা (মানুষের মাঝে) বিভক্তি সৃষ্টি করতে, বিশ্বের দেশে দেশে গণতন্ত্রকে দুর্বল করতে এবং নিজেদের শরীর নিয়ে কিশোরী ও নারীদের খারাপ অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারেনি ফেসবুক।’
ফ্রান্সেস হাউজেনের দাবি, এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে ফেসবুককে কংগ্রেসের তত্ত্বাবধানে আনতে হবে। তার ভাষায়, ‘আমাদেরকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’