বর্তমান সময়ে অসুস্থ হলে আমরা নিজেরাই অনুমান করার চেষ্টা করি যে কি অসুখ হয়েছে এবং অসুখটা কেন হয়েছে। ডাক্তারের কাছে যাওয়া নিয়েও আমাদের অনিহার শেষ নেই। বাসার পাশেই কোনো ওষুধের ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাওয়া শুরু করি।
একজন ওষুধ বিক্রেতার ওষুধ সেবন সম্পর্কে সীমিত পরিসরে ধারণা থাকে। কারণ উপকার সম্পর্কে জানলেও, দীর্ঘমেয়াদী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা সঠিক ডোজ সম্পর্কে ওই ব্যক্তির জ্ঞান বেশ সীমিতই থাকে। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলেজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান জানান, পৃথিবীতে আজ অবধি কোনও ওষুধ আবিষ্কার হয়নি যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। অনিয়ন্ত্রিত অ্যান্টিবায়োটিকের কারণে গোটা বিশ্ব এখন অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের মতো আরেক মহামারির ঝুঁকিতে আছে। অন্যদিকে ব্যথার ওষুধ খেয়ে মানুষ দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি করছে তার ভেতরের অঙ্গগুলোর।
তিনি আরও বলেন, মুখে খাওয়ার অ্যান্টিবায়োটিক কিংবা পেইন কিলার-এ ধরনের ওষুধগুলোতে সেলফ মেডিকেশন বেশি হচ্ছে। তাতে ক্ষতির পরিমাণও বেশি।’
ডা. রাশেদুল বলেন, মানুষজন অতিমাত্রায় গ্যাস্ট্রিকের ওষুধও কিনছে। গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বেশি খেলে অ্যানিমিয়া হতে পারে। পাকস্থলীর ইনফেকশনও হতে পারে। অন্য যে কোনও ইনফেকশনও বাড়বে। শরীর থেকে ক্যালসিয়ামও বের হয়ে যাবে।
‘অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া হজমের সামান্য সমস্যা হলেই পিপিআই বা অ্যান্টি আলসারেন্ট ওষুধ (যেমন ওমিপ্রাজল, ইসোমিপ্রাজল, ল্যান্সোপ্রাজল, রাবিপ্রাজল, ডেক্সল্যান্সোপ্রাজল ইত্যাদি) খেতে থাকে। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে রোগ চিহ্নিত করতে হবে আগে। শুধু পিপিআই খেলে কাজ হয় না। কারণ, দীর্ঘদিন অ্যাসিডিটির ব্যথা, হজমের সমস্যা, গ্যাস বা পেট ফাঁপার পেছনে অন্য কারণও থাকতে পারে। পিত্তথলীর সমস্যা বা পাকস্থলীর ক্যানসার থাকতে পারে। তাই শুধু গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়াটা সমাধান হতে পারে না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, শুধু জীবাণু সংক্রমণ নয়, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীরা যদি সেবনবিধি না মানেন তবে অনেক ওষুধ ওই ব্যক্তির ক্ষেত্রে কার্যকারিতা হারাবে।
ইস্কাটনের লাজ ফার্মেসির এক ওষুধ বিক্রেতা বলেন, ব্যথা ও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ মানুষ বেশি খাচ্ছে প্রেসক্রিপশন ছাড়া। গতবছরের তুলনায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ এই ওষুধ বেশি কিনছে।
এছাড়া করোনার চিকিৎসা নিয়েও দেখা দিচ্ছে আরেক সমস্যা। করোনা ধরা পড়ার পর অতি সাবধানতা দেখাতে গিয়ে দুই চিকিৎসকের কাছ থেকে দুটো প্রেসক্রিপশন নিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। দুই চিকিৎসক একই গ্রুপের ওষুধ লিখলেন, তবে দুই কোম্পানির। যে ওষুধের দিনে সর্বোচ্চ ডোজ ৪০০ মিলিগ্রাম, সেটাহালিম সাহেব দুটো প্রেসক্রিপশন অনুসরণ করে খেয়ে ফেললেন ৮০০ মিলিগ্রাম। খাওয়ার পরে তার মনে হলো তিনি বুঝি ওষুধ খেয়েই মারাই যাচ্ছেন। করোনার এই সময়ে এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে।