নিজস্ব প্রতিবেদক:
খোলা অবস্থায় রাখা বাসী খাবার আর মেঝেতে তেলাপোকার দৌরাত্ম দেখে মনে হতে পারে এটি হয়তো ময়লার ভাগার। কিন্তু না এটি আসলে ভাগার নয়। রাজধানীর অভিযাত এলাকা ধানমন্ডির কে বি স্কয়াররের ওজং রেস্টুরেন্টের ভিতরের চিত্র এটি।
বাসী চিকেন, মেয়াদোত্তীর্ণ রুটি, খোলা অবস্থায় রাখা খাবার, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রঙের প্যাকেট এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সহ নানান অনিয়মের চিত্র দেখা গেছে এই ভবনের রেস্টুরেন্টগুলোতে।
হরহামেশায় রেস্টুরেন্টগুলো যা ইচ্ছে তাই খাওয়াচ্ছে ভোক্তাদের। নিয়মিত জরিমানার পরেও অনেকের ভেতর কাঙ্খিত শুদ্ধতা আসছে না। এসব বাসী খাবার খাওয়ানোর অধিকার কে দিয়েছে? এমন প্রশ্নের সদুত্তর পাচ্ছে না ভোক্তা কর্মকর্তারা।
রবিবার ধানমন্ডির ১৫ নম্বরে কে বি স্কয়ারে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এই ভবনের বেশিরভাগ তলাতেই রয়েছে রেস্টুরেন্ট।
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, সহকারী পরিচালক, ঢাকা জেলা অফিস প্রধান মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল ও মাহমুদা আক্তার।
অভিযানের শুরুতেই ভবনের তিন তলায় ওজং রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখা যায়, খোলা অবস্থায় রাখা হয়েছে বাসী খাবার। মেঝেতে আধিপত্ত বিস্তার করে রেখেছে তেলাপোকা। রান্নাঘরে পাওয়া যায় ক্ষতিকর রঙের প্যাকেট। এসব অপরাধে রেস্টুরেন্টটিকে সতর্ক করার পাশাপাশি মাত্র পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
পরের ধাপে ভবনের চতুর্থ তলায় অবস্থিত ম্যাড শেফ রেস্টুরেন্টের রান্না ঘরে মেয়াদোত্তীর্ণ ১৩ প্যাকেট বার্গার বানানোর রুটি পাওয়া যায়। যাতে এতোমধ্যেই ফাঙ্গাস পড়েছে। এছাড়া রান্না করা বাসি গ্রীল ও চিকেন ফ্রাই পাওয়ায় এই রেস্টুরেন্টকেও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এবার চতুর্থ তলা থেকে সরাসরি অষ্টম তলায় আর্ট অব ফুড নামের আরেকটি রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখা যায়, রান্নাঘর অস্বাস্থ্যকর। মাত্র দুই হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে দায় মুক্তি পান রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ।
অভিযানের বিষয়ে মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, আজ আমরা তিনটি রেস্টুরেন্টকে ১২ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। পাশাপাশি তাদেরকে প্রাথমিকভাবে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভোক্তারা নিজের পকেটের টাকা খরচ করে রেস্টুরেন্টে খেতে আসেন। অথচ রেস্টুরেন্টগুলো ভোক্তার কথা চিন্তা না করেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি করছে, মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার পরিবেশন করছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এসব বাসী খাবার খাওয়ানোর অধিকার তাদের কে দিয়েছে?
অভিযান শেষে মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ ছিল দুই দিন আগে কে বি স্কয়ারের একটি রেস্টুরেন্টে ইফতার খাওয়ার ফলে পাঁচজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে রেস্টুন্টেগুলোতে অভিযান চালানো হয়।
তিনি বলেন, ধানমন্ডির কে বি স্কয়ারের এই খাবার রেস্টুরেন্টগুলোতে আমরা আগেও তদারকি করেছি। তাদেরকে আমাদের অফিসের মিটিংয়ে ডেকেছি। কিন্তু তারপরও আজকে তদারকির করার সময় কয়েকটি রেস্টুরেন্টে মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার দেখেছি। পাউরুটির মধ্যে ফাঙ্গাস পড়া দেখেছি। এই চিত্র সাধারণ মানুষ দেখতে চায় না।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, আমরা ভোক্তা অধিকার আইনে এতোদিন শুধু জরিমানা করেছি। কিন্তু দুঃখজনক, জরিমানার পরও অনেকের ভেতর কাঙ্খিত শুদ্ধতা আসেনি। ঈদের পর থেকে শুধু জরিমানা নয়, মামলা করা হবে।
আরইউ