ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: দেশে মসলার বাজার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার। মসলার আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আবাদ বাড়াতে ১১৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দুই লাখ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন মসলা উৎপাদন বাড়বে।
আগামী মঙ্গলবার (২৮ জুন) একনেক সভায় প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। বছরব্যাপী মসলা জাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়ানো, আমদানি ব্যয় হ্রাস এবং মসলা জাতীয় ফসল চাষে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে গতিশীলতা আনতে ‘মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ’ শীর্ষক এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পটি জুলাই ২০২২ থেকে জুন ২০২৭ মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। দেশের ১১০টি উপজেলা ও ২৫টি হর্টিকালচার সেন্টারে এটা বাস্তবায়ন করা হবে। আধুনিক-টেকসই প্রযুক্তি ও উৎপাদন ব্যবস্থাপনা সম্প্রসারণের মাধ্যমে মসলা জাতীয় ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও বহুমুখীকরণ, মসলা ফসল সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে উৎপাদনোত্তর অপচয় হ্রাস এবং শস্য নিবিড়তা ২ থেকে ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হবে। মসলা প্রক্রিয়াজাতকরণ ও মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে কৃষকের আয় বৃদ্ধি এবং প্রতিকূল পরিবেশে অভিযোজন ক্ষমতাসম্পন্ন জাত প্রচলন করা হবে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম
প্রকল্পের মাধ্যমে দুই হাজার ৮৬৫টি মসলা প্রদর্শনী এবং চারা-কলম উৎপাদন ও আমদানি, ৩০২টি বিভিন্ন ধরনের কৃষি যন্ত্রপাতি কেনা, চার হাজার ২০০ রানিং মিটার সীমানা প্রাচীর ও ১৮৫টি পলি শেড-গার্ড শেড-লেবার শেড ও নার্সারি শেড নির্মাণ করা হবে। দুই হাজার ৬৫০ ব্যাচ কৃষক প্রশিক্ষণ, ৪৫ ব্যাচ এসএএও- সমমানের কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ, ২৯ ব্যাচ কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ ও ২ ব্যাচ বৈদেশিক প্রশিক্ষণ এবং ১৩৫ ব্যাচ কৃষক উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণ এবং এক হাজার ৬৫০টি কৃষক মাঠ দিবস আয়োজন করা হবে।
প্রকল্পের বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) শরিফা খান বলেন, আমরা বেশ কয়েকটি সংশোধনী দিয়েছিলাম। সেগুলো ঠিক করে প্রকল্পের ব্যয় কমিয়ে আনা হয়েছে। এখন প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, মসলার অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর বাজারমূল্য অন্যান্য ফসলের তুলনায় বেশি। দেশে প্রায় ৫০ ধরনের মসলা ব্যবহার করা হলেও মাত্র সাত ধরনের মসলা জাতীয় ফসল দেশে উৎপাদিত হয়। ফলে অভ্যন্তরীণ চাহিদার অধিকাংশই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়ে থাকে। আমদানি নির্ভরতা কমাতে স্থানীয়ভাবে মসলার উৎপাদন বাড়ানো প্রয়োজন। বাংলাদেশ মসলা গবেষণা কেন্দ্র এ পর্যন্ত ২২টি মসলা জাতীয় ফসলের ৪৭টি জাত উদ্ভাবন করেছে।
এছাড়া, মৃত্তিকা ও পানি ব্যবস্থাপনা, পোকামাকড় ও রোগবালাই ব্যবস্থাপনা, পোস্ট- হারভেন্ট প্রযুক্তিসহ ৬৬টি উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে। এসব জাত ও প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশে মসলার উৎপাদন ও কৃষকের আয় বৃদ্ধি এবং আমদানি নির্ভরতা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বিশ্ব বাজারে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মসলা উচ্চমূল্য এবং কম আয়তনিক জাতীয় পণ্য। উদ্ভিদের কুঁড়ি, ফল, বীজ, বাকল, রাইজম এবং কন্দ যা খাদ্যের রং, সুগন্ধি, সুম্বাদু এবং প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত হয়- সেগুলোই মশলা। সারা বিশ্বে ১০৯ প্রকার মসলাজাতীয় ফসল জন্মে, তার মধ্যে ৭টি গুরুত্বপূর্ণ প্রধান মসলাই বাংলাদেশে জন্মে। দেশে প্রায় ৫০ ধরনের মসলা ব্যবহার হয়ে থাকে। দীর্ঘদিন এসব মসলার চাহিদার বেশির ভাগটাই পূরণ করা হতো আমদানির মাধ্যমে। বেশ কিছু জাতের দামি মসলা এখনো বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আবার অবৈধ পথেও ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসছে নানা ধরনের মসলা। এক্ষেত্রে আমদানির ওপর নির্ভরতা কমানোর আরও সুযোগ থাকলেও যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। দেশে মসলার বাজার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার। এ ক্ষেত্রে আমদানি নির্ভরতা কমাতে স্থানীয়ভাবে মসলার উৎপাদন বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
মসলা গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত ২২টি মসলাজাতীয় ফসলের ওপর সর্বমোট ৪৭টি জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। তাছাড়া উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে উৎপাদন প্রযুক্তি, মৃত্তিকা ও পানি ব্যবস্থাপনা, পোকামাকড় ও রোগবালাই ব্যবস্থাপনা, পোস্ট – হারভেস্ট প্রযুক্তিসহ আরও ৬৬টি উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে। এসব জাত ও প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণ হলে একদিকে বাড়বে উৎপাদন অন্যদিকে কমবে সংগ্রহোত্তর ক্ষতির পরিমাণ। একইসঙ্গে মসলার আয়ুর্বেদিক, খাদ্য এবং শিল্পে ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে বহুগুণ।
প্রকল্পের ফোকাল পারসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. রাসেল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের পাশাপাশি বাড়ছে মসলার নানাবিধ চাহিদা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে মসলার আবাদ ৫ শতাংশ বাড়বে। পাশাপাশি দুই লাখ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন মসলা উৎপাদন বাড়বে। মানুষের মসলার ক্যালরির চাহিদা পূরণ হবে। অনেকটাই মসলার আমদানি নির্ভরতা কমবে।