কঠোর লকডাউনে দুধ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের খামারিরা। লকডাউনের কারণে দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো খামারিদের কাছ থেকে দুধ কেনা কমিয়ে দিয়েছে। ফলে চাহিদা না থাকাই উৎপাদিত দুধ এখন পানির দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন খামারিরা।
এদিকে লকডাউনের কারণে স্থানীয় চকবাজারগুলিতেও ক্রেতার উপস্থিতি কমে গেছে ফলে দুধের খুচরা বিক্রিও কমে গেছে অনেকাংশে। বাধ্য হয়ে অনেক খামারিই এখন উৎপাদিত দুধ ভ্যানে তুলে ২৫ থেকে ৩০ টাকা লিটার দরে ফেরি করে বিক্রি করছেন। অন্যদিকে গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খামারিদের লোকসান আরো বেড়ে গেছে।
নয়া দিগন্ত থেকে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ এলাকার ৪৩০টির মতো খামারে প্রতিদিন ৩০ হাজার লিটারেরও বেশি গরুর দুধ উৎপাদিত হয়। এছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনেক গৃহস্থ পরিবারও গাভী পালন করে। এতে আরো হাজার হাজার লিটার দুধ উৎপাদিত হয়ে থাকে। প্রচুর দুধ উৎপাদিত হওয়ায় এ এলাকা থেকে দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটা তরল দুধ সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করে মার্কেটিং করে থাকে। বাকি দুধ স্থানীয় ঘোষ বা দুধ ব্যবসায়ীরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠিয়ে থাকেন। এ ছাড়া স্থানীয় ঘি, ছানা ও মিষ্টিজাত কারখানাগুলোতেও প্রচুর দুধ প্রয়োজন হয়।
কিন্তু কঠোর লকডাউনের ফলে মিল্কভিটা তাদের দুধ সংগ্রহ দুই তৃতীয়াংশ কমিয়ে দিয়েছে। কারখানা ও মিষ্টির দোকানগুলো বন্ধ থাকায় ঘোষেরাও খুব বেশী দুধ নিচ্ছে না। এ অবস্থায় দুধ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারি ও গাভী পালনকারিরা। এতে করে ৫০ টাকা লিটারের দুধ বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা লিটার দরে। বাজারে চাহিদা না থাকায় কোনো কোনো খামারি ভ্যানে করে দুধ নিয়ে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করছেন। খামারিরা জানান, এ দামে দুধ বিক্রি করে তাদের লিটারে ২০ থেকে ২৫ টাকা লোকসান হচ্ছে।
আশুগঞ্জ ডেইরি ফার্ম এসোসিয়েশনের সভাপতি ও আড়াইসিধা ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম মিয়া জানান, গত এপ্রিলের শুরুতে করোনাকালীন বিধিনিষেধ শুরু হলেও খামারিরা ভালো দামেই দুধ বিক্রি করে আসছিলেন। এর মধ্যে পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে ও পরে খামারিরা সর্বোচ্চ চড়া দামে দুধ বিক্রি করেছেন। কিন্তু গত ১ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন শুরু হওয়ার সপ্তাহখানেক আগে থেকেই দুধের দাম পড়তে শুরু করে। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, ওই সময় থেকে দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটা দুধ সংগ্রহ কমাতে শুরু করে।
জানা যায়, উপজেলার সবচেয়ে বেশী দুগ্ধ খামাড় আড়াইসিধা ইউনিয়নে অবস্থিত। প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে আড়াইসিধা বাজারে খামাড়িয়া ড্রামে করে হাজার হাজার লিটার দুধ নিয়ে আসছে। কিন্তু খোলাবাজারে এত পরিমান দুধ বিক্রি সম্ভব না হওয়ায় অধিকাংশই অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে।