করোনা মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পদচারণা নেই। পাঠদান কার্যক্রম বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ রয়েছে খেলাধুলাও। এই কারণে প্রভাবশালীরা সুযোগ নিয়ে গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে গোচারণভূমি আর চাতাল হিসাবে ব্যবহার শুরু করেছেন। গত ১৪ মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এমন চিত্র ফুটে উঠেছে। অথচ শিক্ষা প্রশাসন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার বার্তা দেয়া হলেও তা শুধুই ‘মুখের কথা’ হিসেবেই রয়ে গেছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের স্ব স্ব স্কুলে যাওয়ার কথা থাকলেও তারা শুধু বেতন-ভাতা তোলার জন্য উপজেলা সদরে গিয়েছেন। কিন্তু স্কুলমুখো হননি। খোলার আগে যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মেরামত বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করা হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগে পড়তে হবে।
নারায়ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের বারান্দায় বেঁধে রাখা হয়েছে গরু-ছাগল। তাদের বিষ্ঠায় কালো প্রলেপ পড়েছে পাকা মেঝেতে। বিদ্যালয়ের মাঠজুড়ে ধানের খড়ের স্তূপ। শ্রীমঙ্গলের বৌলাশীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের সামনের মাঠজুড়ে ঘাসের জঙ্গল। লতাপাতা জাতীয় উদ্ভিদ বিদ্যালয়ের পাকা দেয়াল বেয়ে ছাদ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। দীর্ঘদিন মানুষের পা না পড়ায় এমন দশা হয়েছে ওই স্কুলের। হবিগঞ্জের মাধবপুরের হরিতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনের রুমে রুমে ধানের খড় রাখা হয়েছে। রাজশাহীর চারঘাটের ভায়ালক্ষ্মীপুর বুধিরহাট কলেজ মাঠে বড় বড় গাছ কেটে রাখা হয়েছে। একই উপজেলার পিরোজপুর ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের সামনে শিশু-কিশোরদের খেলারসামগ্রী ভেঙে পড়ে আছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালানোর জন্য একটি গাইডলাইন দেয়া আছে। সেই গাইডলাইন মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা কাজ করবেন। প্রসঙ্গত, ওই গাইডলাইনে বলা আছে- পরিকল্পনামাফিক প্রয়োজনীয় জীবাণুনাশক প্রয়োগসহ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের দায়িত্ব বণ্টন, নির্দিষ্ট সময় পর পর হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ কিছু বিষয় লিখে দৃশ্যমান স্থানে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। কিন্তু কোথাও এমন দৃশ্য চোখে পড়েনি সরেজমিনে। তবে এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি মহাপরিচালক।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. মিজানুর রহমান বলেন, মাঝেমাধ্যে পরিষ্কার করে আবার করে না। এই নিয়েই চলছে। তিনি পাল্টা প্রশ্নে বলেন, আগে মানুষের জীবন, তারপর অন্য কিছু। তারপরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়। সবমিলিয়ে সমস্যা আছে আবার সমাধানও আছে। আগামী ১৩ জুন স্কুল খুলবে এরকমটা ধরে নিয়ে স্কুল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য আবার নির্দেশনা দেয়া হবে বলে জানান মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে এবং অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনা বালু, কাঠ ব্যবসায়ীরা গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করছেন। এর ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশও দূষিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে চারঘাট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, উপজেলায় অধিকাংশই বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এগুলোর দেখভালের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদের। কিন্তু তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন না। সরেজমিনে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, স্কুলগুলোতে বিরাজ করছে বেহাল দশা। শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে গ্রামাঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলোরই করুণ অবস্থা। গত ২৯ মে উপজেলার বেশ কয়েকটি স্কুল ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দরজা-জানালা খোলা এবং ভাঙা। প্রতিষ্ঠানের ভেতরে গরু-ছাগলের গোবর-বিষ্ঠা। প্রতিষ্ঠানের বারান্দায় বাঁধা রয়েছে গরু, ছাগল আর মহিষ। মাঠে চড়ছে ভেড়ারদল। সেই সঙ্গে গৃহিণীরা করছেন ধান শুকানোর কাজ। দূর থেকে দেখে চেনার উপায় নেই- সেগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না বাসাবাড়ির আঙ্গিনা।শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন গরু- ছাগলের দখলে