ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
দেশে এক দিনে করোনাভাইরাস শনাক্তের হার আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। বাড়ছে নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ। এ পরিস্থিতিতে সারাদেশের অনেক ঘরই যেন জ্বর-সর্দিতে ‘হাসপাতালে’ পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়মিত করোনা আক্রান্তের যে সংখ্যা জানাচ্ছে, বাস্তব পরিস্থিতি তার চেয়েও বেশি ভয়াবহ। করোনা পরীক্ষায় মানুষের অনাগ্রহ এবং সংক্রমিতদের কোনো ব্যবস্থাপনায় না রাখাকে লাগামহীন সংক্রমণের কারণ হিসেবে দায়ী করছেন তারা।
বহ্নি শিখা রায় (৩৫) রাজধানীর কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা। টিকার দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন করেছেন দুই মাস আগে। চার দিন ধরে সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত। সঙ্গে কাশি থাকায় গলার স্বরও অনেকটা ভেঙে গেছে। শুধু নিজেই অসুস্থ নন, পরিবারের বাকি তিন সদস্যও পর্যায়ক্রমে জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানান।
রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত হাসপাতাল সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। নতুন বছরের শুরু থেকেই এ হাসপাতালে জ্বর-সর্দিসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. খলিলুর রহমান বলেন, সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী হাসপাতালে আসছেন। তাদের মধ্য থেকে কোভিড পরীক্ষায় অনেকেরই পজিটিভ আসছে। কিন্তু জটিলতা কম থাকায় হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা খুবই কম। বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৪ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজন নতুন, বাকিরা আগে থেকেই ভর্তি ছিলেন।
প্রতিদিনই আমাদের হাসপাতালের আউটডোর রোগীতে ঠাসা থাকে। সংখ্যায় যদি বলি, প্রতিদিন এক থেকে দেড়শ রোগী আসেন সর্দি-জ্বর নিয়ে। তাদের অনেকেই করোনা পরীক্ষা করাতে চান না। যারা পরীক্ষা করান, তাদের মধ্যে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৪৫ জনের মতো করোনা পজিটিভ আসে।
দেশে সংক্রমণ বাড়ার কারণ হিসেবে জনগণের পরীক্ষায় অনাগ্রহ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের যথাযথ সিদ্ধান্তহীনতাকে দায়ী করছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন। তিনি বলেন, আমরা দেখছি হঠাৎ করেই দেশে শনাক্তের হার কীভাবে বেড়ে গেছে। শনাক্ত ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শঙ্কার বিষয় হলো অনেকে আক্রান্ত হলেও পরীক্ষা করাতে আসছেন না। তাদের করোনা পরীক্ষায় উৎসাহিত করা দরকার। এখন পরীক্ষা না করার কারণে পরবর্তী সময়ে তাদের করোনায় কোনো শারীরিক জটিলতা হলে তার সঠিক কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিশেষত নিজের এবং পরিবারের সচেতনতার জন্য হলেও পরীক্ষা করা দরকার।
সংক্রমণের লাগাম কীভাবে টেনে ধরা সম্ভব— জানতে চাইলে আইইডিসিআর উপদেষ্টা বলেন, আমরা সবসময়ই বলছি মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কিন্তু আসলে এসবে কোনো কাজ হচ্ছে না। আমরা দেখছি, সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে; কিন্তু সে অনুযায়ী পরীক্ষা হচ্ছে না। এ মুহূর্তে সরকারকেই দায়িত্ব নিয়ে করোনা পরীক্ষা জোরদার করতে হবে। সারাদেশে এখন বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার। এছাড়া যেখানেই মানুষ ভিড় করছে, সেখানেই সরকার চাইলে করোনা পরীক্ষার জন্য আহ্বান জানাতে পারে।