রংপুর প্রতিনিধি
ন্যায্যমূল্য পাওয়ার পাট চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। এখন পাটচাষে প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হচ্ছে ১৫ হাজার টাকা। আর বাজারে বিঘা প্রতি ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে পাট। সঙ্গে রফতানি প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় বেড়েছে পাটজাত পণ্যের চাহিদা।
কৃষি বিভাগ বলছে, সোনালি আঁশখ্যাত পাটকে ঘিরে সোনালি স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা। কদর বেড়েছে সোনালী আঁশের রুপার কাঠিরও। গ্রামের পাশাপাশি এখন শহরেও ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে পাটকাঠি। সঙ্গে পাটজাত পণ্যের চাহিদাকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে শিল্পোদ্যোক্তা।
গেল কয়েক বছরে জেলায় গড়ে উঠেছে নতুন আরও সাতটি পাটকল। সেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে হাজারও নারী-পুরুষের। আগামী মৌসুমে পাটচাষ দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কার্যালয় সূত্র বলছে, চলতি বছর রংপুরে ৯ হাজার ১৯৮ হেক্টর জমিতে পাটচাষ হয়েছে। সেখান থেকে ২০ হাজার ৫০৯ মেট্রিন টন পাট উৎপাদিত হয়েছে।
গত বছর পাটচাষ হয়েছিল ৮ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে। এ বছর ৮৫২ হেক্টর বেশি জমিতে পাটচাষ হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাটের ভালো ফলনের সঙ্গে ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় খুশি চাষিরা। দুই বছর ধরে পাটের বাজার ভালো যাচ্ছে। তবে গত বছরের চেয়ে এবার দাম বেশি মিলছে। গত বছর যে পাট ২ হাজার আড়াই হাজারে বিক্রি করেছেন, এবার তা ৩ হাজার ১০০ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
চাষিরা বলছেন, বর্তমানে কীটনাশক, বীজ ও অন্যান্য খরচসহ প্রতি বিঘা জমিতে পাটচাষে তাদের সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। আর বিঘা প্রতি জমিতে পাট উৎপাদন ১০ মণ ছাড়িয়েছে।
বর্তমান বাজারে সর্বনিম্ন ৩ হাজার টাকা মণ ধরলে প্রতি বিঘা পাট বিক্রি করে হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এ হিসেবে পাটে প্রতি বিঘায় লাভ হচ্ছে ১৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া পাটকাঠি থেকে হচ্ছে বাড়তি আয়।
বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা পাট বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ কেউ আবার পাটকাঠি নিয়ে ব্যস্ত। বিভিন্ন হাটে পাটের ক্রেতারা নগদে বাকিতে চাষিদের কাছ থেকে পাট কিনছেন। বেশির ভাগ এলাকায় পাট বিক্রি শেষের পথে। অনেকে আবার বেশি দামের আশায় সংরক্ষণ করে রাখছেন। তবে গ্রামের পথে মাঠে পাটকাঠি শুকানোর লম্বা সারি চোখে পড়ছে।
বীজ সংকট, নিম্নমানের বীজ, অসময়ে ঝড়বৃষ্টি, পানির অভাব এবং উৎপাদিত পাটের ন্যায্যমূল্য না পাওয়াসহ নানা কারণে জেলায় পাটের চাষাবাদ কমে এসেছিল। তবে গত দুই বছর থেকে পাটের বাজার ঊর্ধ্বমুখি হওয়ায় চাষিরা আবার পাট উৎপাদনে ঝুঁকছেন। এ ছাড়া পাটচাষে চাষিদের আগ্রহ বাড়াতে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বিভিন্ন কর্মসূচিও বাস্তবায়ন করছে।
কাউনিয়া উপজেলার গদাই গ্রামের পাট চাষি আল-আমিন মিয়া বলেন, চার মণ পাট বিক্রি করে প্রায় ১৩ হাজার টাকা পেয়েছেন। গত বছর একই জমির পাট সাড়ে ১১ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছিল। এবার ফলন বেশ ভালো হয়েছে। পাটকাঠিরও দাম বেড়েছে। গ্রাম থেকে অনেকেই পানের বরজ, পার্টিকেল বোর্ড ও জ্বালানি খড়ি হিসেবে পাটকাঠি কিনে নিচ্ছেন। আগের তুলনায় পাটের পাশাপাশি পাটকাঠির ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে।
গেল কয়েক বছর জেলার পাটকলগুলোতে বিভিন্ন ধরনের পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বেড়েছে। উৎপাদিত সুতলি বিভিন্ন হস্তজাত শিল্পপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে। সেখানে সুতলি দিয়ে কারুপণ্য তৈরি হচ্ছে। আবার পাটকলে উৎপাদিত বস্তাও দেশের বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। পাশাপাশি রংপুর থেকে বিভিন্ন পাটজাত পণ্যসামগ্রী দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বাইরেও রফতানি করছেন উদ্যোক্তারা।
নর্থ বেঙ্গল জুট মিলের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, স্থানীয়ভাবে পাটকল গড়ে উঠায় কৃষকরা পাটের ভালো দাম পাচ্ছেন। পাটচাষে মানুষের চাহিদাও বেড়েছে। নতুন নতুন পাটকল ঘিরে হাজারও মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পলিথিনের ব্যবহার রোধে সরকারের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা গেলে পাটজাত পণ্যের চাহিদা আরও বাড়বে।
পাট অধিদফতর রংপুর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ মো. সোলায়মান আলী বলেন, পাটচাষে মানুষের মধ্যে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। সরকারিভাবেও তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। তা ছাড়া মাঠ পর্যায়ে চাষিদের পাটের ভালো ফলনে করণীয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।