নেত্রকোনা জেলা প্রতিনিধি
নেত্রকোনায় নদ-নদীসহ হাওরাঞ্চলে ফের পানি বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় রোববার (১৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ধনু নদের পানি খালিয়াজুরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে আগাম পূর্বাভাসের কারণে হাওরে ৬০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জেলার কৃষি বিভাগ। জেলা প্রশাসন, কৃষি বিভাগ ও পাউবো পৃথকভাবে বিভিন্ন উপায়ে কৃষকদের দ্রুত পাকা ধান কাটার পরামর্শ দিচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার ১০ উপজেলায় ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮৩ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। এরমধ্যে হাওরে অর্ধেক জমি রয়েছে। প্রথম দফায় ২ এপ্রিল সন্ধ্যায় হঠাৎ করে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে খালিয়াজুরির ধনু নদের পানি ৭ থেকে ৮ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমায় পৌঁছে যায়। খালিয়াজুরী ও মদন উপজেলার বিভিন্ন হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধগুলোতে পানির চাপ বেড়ে যায়। ৩ ও ৪ এপ্রিল মদনের খালিয়াজুরীর কীর্তনখোলা হাওর, ফতেপুর হাওর, লক্ষ্মীপুর হাওরসহ কয়েকটি হাওরের বেড়িবাঁধের বাইরের অংশ তলিয়ে যায়। এতে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমির কাঁচা বোরো ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়।
এছাড়া লেপসাই হাওর, চৈতারা হাওরসহ বিভিন্ন হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের অন্তত ২০টি স্থানে ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বাঁধের অনেক অংশে ধস ও ফাটল দেখা দেয়। পাউবো ও উপজেলা প্রশাসন কৃষকদের নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলো সংস্কার করে। এজন্য নেত্রকোনায় এখন পর্যন্ত কোনো বাঁধ ভেঙে ফসলহানির ঘটনা ঘটেনি।
বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) থেকে বৃষ্টিপাতসহ উজান থেকে নেমে আসা পানিতে নতুন করে বোরো ধানের ক্ষতি হতে পারে এই আশঙ্কায় দ্রুত ধান কাটতে শুরু করেন হাওরপাড়ের চাষিরা।
খালিয়াজুরী সদরের অনিমেশ চন্দ্র সরকার ও কৃষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান শামীম মোড়ল বলেন, আগাম বন্যার ভয়ে কিছুটা কম পাকা ধান কাটা হচ্ছে। এ কারণে ধানের উৎপাদন কমে গেছে। অন্যদিকে ধানের ন্যায্যমূল্য না থাকায় খরচের হিসাবের সঙ্গে উৎপাদন খরচ মিলছে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এফ এম মোবারক আলী বলেন, এ বছর নেত্রকোনায় ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮৩ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। এরমধ্যে হাওরাঞ্চলে ৪০ হাজার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ করা হয়েছে। শনিবার বিকেল পর্যন্ত হাওরের প্রায় ৬০ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল রোববার সকালে বলেন, দ্বিতীয় দফায় ধনু নদের পানি বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আমরা হাওরাঞ্চলের কৃষকদের দ্রুত ধান কাটতে পরামর্শ দিচ্ছি। উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে মাঝারি থেকে প্রবল বৃষ্টিপাত হওয়ায় নদ-নদীর পানি বাড়ছে। হাওরে পাকা ধান কেটে দ্রুত ঘরে তোলার জন্য বলা হচ্ছে। অন্যদিকে পানি বাড়লে বাঁধ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রেখেছি। আমরা রাতদিন বাঁধে অবস্থান করে বাঁধ ও ফসল রক্ষার চেষ্টা করছি।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান বলেন, নেত্রকোনার হাওরে বাঁধগুলো রক্ষায় পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাকা ধান কাটতে আধুনিক পদ্ধতিতে ধান কাটা-মাড়াইয়ের প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে। কৃষি বিভাগের ব্যবস্থাপনায় জেলায় নতুন পুরাতন মিলিয়ে প্রায় ১৪৫টি হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা চলছে। নতুন করে আরো ১১০টি হারভেস্টার মেশিন দেওয়া হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত হাওরে প্রায় ৫৮ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে।