ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট : কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর ঢাকা বিভাগীয় সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে এ সেমিনারের আয়োজন করে ক্যাব।
ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি জামিল চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম ও ভোক্তা অধিদপ্তরের পরিচালক ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্যাব কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজু। সমাপনী বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া।
সেমিনার সঞ্চালনা করেন ভোক্তা অধিদপ্তরের উপপরিচালক আতিয়া সুলতানা।
ক্যাব কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজু বলেন, খারাপ মানুষ সমাজ ধ্বংস করতে পারে না। সমাজ ধ্বংস হয় তথাকথিত ভালো মানুষের দ্বারা। আজকে যারা ক্যাবের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন, তারাই পারে পুরো দেশের ভোক্তা অধিকার রক্ষার প্রধান কারিগর। কারণ কেন্দ্র হচ্ছে যেকোন উত্থান পতনের কারিগর। মেধাবীরা দেশকে বেশি ঠকাচ্ছে।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন বলেন, নাগরিকের অধিকার সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত। ১৯৭২ সালের সংবিধান আমাদের সেই অধিকার দিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সৃষ্টি হয়েছে। ক্যাব ভোক্তা-অধিকার রক্ষায় দীর্ঘ আন্দোলন চালাচ্ছে এবং তার প্রতিদান স্বরূপ এই অধিদপ্তর। আপনারা ভোক্তার জন্য কাজ করছেন, আমরাও ভোক্তার জন্য কাজ করছি। তাই আমাদের উদ্দেশ্য এক। তাই সরকার আপনাদের চাওয়াকে গুরুত্ব দিয়ে আরও স্প্রিটে কাজ করছেন। আমাদের চাওয়া আপনারা এখান থেকে গিয়ে আরও গতিতে কাজ করবেন।
তিনি বলেন, আবেগ দিয়ে নয়, আইন দিয়ে যে কাজ করার কথা বলা হয়েছে, আমরা সেই কাজগুলো বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করবো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, মানুষ নিজে থেকে সচেতন না হলে তিনি ঠকবেন। কারণ বিপুল জনসংখ্যার দেশে সরকারি কর্মকর্তা খুবই কম। তাই তাদের পাশাপাশি নিজেদেরকেও সচেতন হতে হবে। ভোক্তা অধিদপ্তর যদি প্রতিটি মার্কেটে ছোট্ট করে ভোক্তা-আইন বা ভোক্তা অভিযোগ নাম্বারটা লিখে দেয় তাহলে ভোক্তা সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারবে। সরকারি বেসরকারি যে প্রতিষ্ঠানেই কাজ করুন না কেন সৎ থাকার চেষ্টা করুন।
মানিকগঞ্জ ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ক্যাবের কার্যক্রম দেশব্যাপী শক্তিশালী করা দরকার। আমাদের জেলা পর্যায়ে কাজ করা কঠিন হয়ে যায়। কারণ ডিসিরা অনেক ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু আমাদের জেলা পর্যায়ে ক্যাবের কোন অফিস নাই। কমিটির সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয় নিজস্ব অর্থায়নে। তাই সরকারি ভাবে জেলা কমিটিতে যদি কোনো অনুদান থাকতো তাহলে ভালো হতো।
ক্যাব ফরিদপুর জেলা কমিটির সভাপতি শেখ ফয়েজ আহমেদ বলেন, ক্যাবের সাথে প্রায় দুই যুগ ধরে কাজ করছি। ২ যুগ আগে আমরা যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, ভোক্তা অধিদপ্তর গঠনের মাধ্যমে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়। আর এটা মন্ত্রণালয়ে পরিণতি হলে আরো ভালো লাগবে। ভোক্তা-অধিকার প্রতিষ্ঠায় শুধু অধিদপ্তর থেকে নয়, আগামী বাজেটে কনজুমার মুভমেন্টের জন্য একটি বাজেট থাকবে, এমনটা আমাদের চাওয়া। এটা বিভিন্ন দেশে রয়েছে, বাংলাদেশে করারও আহ্বান জানাচ্ছি।
কিশোরগঞ্জ জেলা ক্যাবের সভাপতি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ক্যাবের সাথে ভোক্তা অধিদপ্তর কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ভেজালবিরোধীসহ নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে আমরা যে কার্যক্রম নিয়েছিলাম। তা অনেকটা কার্যকর হয়েছে। কিন্তু গত ৩/৪ বছর ধরে পণ্যের দাম যে হারে বেড়েছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। ক্যাবকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। এ জন্য ভোক্তা অধিদপ্তরকে পৃথক মন্ত্রণালয় বা বিভাগ করতে হবে।
কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, জেলা পর্যায়ে কাজ করতে গেলে অনেক অপরাধীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করতে হয়।
মুন্সীগঞ্জ জেলা ক্যাবের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জাহাঙ্গীর সরকার বলেন, শ্রমিক থেকে রাষ্ট্রপতি সবাই ভোক্তা। জেলা পর্যায়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের জনবল খুবই কম। তাদের লোকবল বাড়াতে হবে। ভোক্তা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার পর আমরা অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছিলাম। কারণ আমরা মনে করেছিলাম এখন সব কাজ অধিদপ্তরের। কিন্তু আমাদের কার্যক্রম আরও বাড়াতে হবে। আমাদের শক্তিশালী করার জন্য আজ যে কার্যক্রম করা হয়েছে। কিন্তু এর জন্য কেন্দ্র থেকে কোনো ফান্ড নেই। আমি নিজের অর্থে অফিস খরচ বহন করছি। আমাদের পুনরায় আবারও শক্তিশালী হতে হবে।
সাধারণ সম্পাদক ক্যাব গাজীপুর বলেন, আমরা ভোক্তারা পণ্য কিনি। কিন্তু পণ্যের দাম বাড়ানো বা কমানোর সময় আমাদের রাখা হয় না। তাই আমাদের চাওয়া, পণ্যমূল্য নির্ধারণের সময় ক্যাবের পক্ষ থেকে ভোক্তা প্রতিনিধি থাকতে হবে।
ক্যাব আড়াইহাজার কমিটির নেতৃবৃন্দ বলেন, শিশুখাদ্যসহ অনেক ভেজাল পণ্যে সয়লাব হয়ে গেছে মফস্বল এলাকা। এগুলোর বিষয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। আবার অভিযানে আমাদেরকে যুক্ত করা হয় না। এর প্রতিউত্তরে ভোক্তার ডিজি বলেন, এই অনিয়মের বিষয়ে আপনি কেনো আমার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জানাননি।
তারা বলেন, ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ করা না গেলে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব নয়। তাই তাদের অধিকার রক্ষায় আমাদের আরও শক্তিশালী হতে হবে। কিন্তু আমাদের জেলা পর্যায়ের অনেক সদস্য জানেই না তাদের কাজটা কি। আমরা চেষ্টা করছি সবাইকে সতর্ক করতে। আগামি কিছুদিনের মধ্যেই আমরা দেশব্যাপী একটা জোরালো পদক্ষেপ নিতে পারবো।
তারা আরও বলেন, দেশটা আমাদের তাই এই দেশটার জন্য আমাদেরই কাজ করতে হবে। আমরা শুধু ডিসি অফিসে গেলাম আর আসলাম। এতে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ হবে না। ভোক্তা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমাদের আন্দোলন সফল হয়েছে। কিন্তু এখন দেশব্যাপী এই সুফল ছড়িয়ে দিতে হবে।