নিজস্ব প্রতিবেদক: ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ইসুতে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির অস্থিরতা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। আর এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও নিচ্ছে বিভিন্ন পরিকল্পনা।
সরকারের নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামীকাল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা থেকে এক সপ্তাহ জোনভিত্তিক লোডশেডিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এতে যদি সাশ্রয় কম হয়, তাহলে আরো এক ঘণ্টা বাড়িয়ে দুই ঘন্টা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
সোমবার (১৮ জুলাই) বিকেলে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তবে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় তথা বাড়ানোর বিষয়ে নতুন করে কোন সিদ্ধান্তের কথা বল হয় নাই। এর আগে রাষ্ট্রীয় তেল আমদানি ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) প্রতিদিন ১শ কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন নসরুল হামিদ।
তবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতির দিকে রয়েছে। গত শনিবারের তথ্য অনুযায়ী সেখানে অপরিশোধিত তেলের (ব্রেন্ট ক্রুড) দাম বেশ কয়েক মাস পর প্রতি ব্যারেল ১শ ডলারের নিচে অর্থাৎ ৯৮ ডলারে বিক্রি হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাশ্রয়ের জন্য ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হবে। এছাড়া রাত ৮টার পর শপিং মলসহ দোকানপাট বন্ধ রাখা, উপাসনালয়ে প্রার্থনার সময় ছাড়া এসি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হবার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বৈঠকের পর মসজিদে এসি বন্ধের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু মসজিদ নয়, উপাসনালয়ে (মসজিদ, মন্দির ও গির্জা) সবখানে প্রচুর এসি লাগানো হয়েছে। প্রার্থনার সময় বা নামাজের সময় তারা যেন মিতব্যয়ী হয়ে এসিটি চালান। প্রার্থনা শেষ হলে তারা যেন এসি সময় মতো বন্ধ করেন, আমার সাজেশন এটাই থাকবে। আমাদের এভাবে আলোচনা হয়েছে।’
এ সময়ে বিশ্বে জ্বালানি সংকটের কথা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ নানা রকম সাশ্রয়ী নীতি গ্রহণ করেছে। কিছু কিছু দেশ দাম বৃদ্ধি করেছে। কেউ কেউ সাশ্রয়ী নীতি নিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘দেশে যে পরিমাণ ডিজেল আমদানি হয়, তার ১০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার হয়। আর বাকি ৯০ ভাগ ব্যবহার হয় অন্য খাতে। এখন যদি আমরা ১০ ভাগ বিদ্যুতে বন্ধ করার পর যদি অন্য খাত থেকে আরও ১০ ভাগ বাঁচাতে পারি। তাহলে আমাদের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।’
এ ছাড়াও ডিজেল চালিত বিদ্যুতের দামের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখন ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি উৎপাদন ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৪০ টাকা। কিন্তু আমরা বিক্রি করে এই অর্থ পাচ্ছি না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এখন গ্যাস প্রতি এমএমবিটিইউ ৩৯ ডলারে কিনে এনে ৭ টাকায় বিক্রি করছি।’
এর আগে গত ৭ জুলাই এক অডিও বার্তার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দেশেও দাম বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এ প্রতিমন্ত্রী।
তখন তিনি বলেছেন, ‘আমরা বেশ কয়েকদিন ধরেই লক্ষ্য করছি প্রায় ৬-৭ মাস যাবৎ তেলের মূল্য ঊর্ধ্বগতি প্রচণ্ডভাবে। যে তেল আমরা ৭০-৭১ ডলারে কিনতাম এখন তা ১৭১ ডলার হয়ে গেছে। এবং সেটা সবসময় বাড়তির দিকেই যাচ্ছে। আমরা বলে আসতেছি প্রথম থেকেই তেলের প্রাইসের ক্ষেত্রে অ্যাডজাস্টমেন্টে যাবো। আমরা নিজস্ব অর্থে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তারপরও আমার মনে হয় একটা সময় গিয়ে আমাদের অ্যাডজাস্টমেন্টে যেতে হবে প্রাইসে।’
জ্বালানী তেলের দাম বাড়ানো হবে কী না- এমন প্রশ্নে জ্বালানীর দাম নির্ধারণের দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সদস্য মোঃ আবু ফারুক ভোক্তাকণ্ঠকে বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের বিষয়ে এখনো আমাদের কাছে কোন প্রস্তাব আসে নাই। নিয়ম অনুযায়ী জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা বিইআরসির হাতে থাকলেও এখনো পর্যন্ত জ্বালানি বিভাগ নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে করে থাকে। হয়তো এতে বিপিসি প্রস্তাব দিয়ে থাকে। আর সেভাবেই সরকার করে থাকে।’
বিইআরসির গণশুনানির মাধ্যমে জ্বালানির দাম নির্ধারণের আইন থাকলেও তারা না মানায় কোন প্রদক্ষেপ নিয়েছেন কী না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিইআরসির প্রদক্ষেপের জন্য বেশ কিছু রেগুলেশনের প্রয়োজন আছে। আমরা সেই রেগুলেশন তৈরির পথে আছি। আর আমাদের প্রয়োজনীয় জনবলও নেই। যার কারণে একই সাথে সব বিষয়ে প্রদক্ষেপ নিতে পারছি না। তবে আমাদের এই খানে যে প্রস্তাব গুলো আসে, তা আইন অনুযায়ী করে থাকি।’
এক প্রশ্নের তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের আইনে রয়েছে, কোন লাইসেন্সী যদি আইন অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা না করে বা আইন উপেক্ষা করে। তাহলে বিইআরসির নিজস্ব বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বা পরিচালিত আইনের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া। কিন্তু ওই বিধি গুলো আমরা এখনো তৈরি করতে পারি নাই। কারণ এখানে অনেকই ফোজদারী বা ক্রিমিনাল অপরাধ করে থাকে।উদাহরণ স্বরূপ বলতে পারি, গণশুনানির মাধ্যমে আমরা গ্যাসের দাম নির্ধারন করে থাকি। কিন্তু অনেকেই মৌখিক অভিযোগ করে বলেন যে সেটা অনেক যায়গায় মানা হচ্ছে না। কিন্তু আমাদের কাছে লিখত অভিযোগ না করলেতো হবে না। যদি লিখিত অভিযোগ করে থাকেন তাহলে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে পারবো।’
এ বিষয়ে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) ডঃ মোঃ হেলাল উদ্দিন, এনডিসি ভোক্তাকণ্ঠকে বলেন, ‘ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এটা অপারেশন শাখার কাজ। তবে অপারেশন শাখার প্রধান এসএম জাকির হোসেনের (অতিরিক্ত সচিব) বক্তব্য পাওয়া যায়নি।