ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: জ্বালানি কয়লার অভাবে এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন। তবে এ মাসে কেন্দ্রটিতে আর উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদনও যথা সময়ে হবে কি না- তা নিয়েও রয়েছে সংশয়।
এর আগে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর থেকে রামপাল কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিক ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। তবে উৎপাদন শুরুর মাত্র ২৭ দিনের মাথায় গত ১৪ জানুয়ারি সকালে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর বন্ধ রাখার জন্য জ্বালানি না থাকাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন সংশ্লিষ্টরা। দুই ইউনিট মিলে কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে প্রথম ইউনিটটির উৎপাদন ক্ষমতা ৬৬০ মেগাওয়াট।
চলতি বছরের জুনে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বাকি ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে কয়লা আমদানি না হলে এটিও চালু করা সম্ভব হবে না। আর ডলার সংকটে ঋণপত্র খুলতে না পারায় কয়লা আমদানি করাও অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
তবে উৎপাদন বন্ধ থাকলেও এই সময়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে রক্ষণাবেক্ষণ কাজে। কারণ চুক্তি অনুযায়ী রামপালের বিদ্যুৎ পিডিবিকে কিনতে হয়। তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ থাকলেও পিডিবিকে কেন্দ্রের সক্ষমতা ব্যয় বা ক্যাপাসিটি চার্জ (কেন্দ্র ভাড়া) দিতে হবে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান ভোক্তাকণ্ঠকে বলেন, ‘এলসি (ঋণপত্র) খুলতে না পারায় কয়লা আমদানি বন্ধ রয়েছে, যার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রও বন্ধ রয়েছে। তবে আগামী ৩০ জানুয়ারি এক জাহাজ কয়লা আসবে বলে জেনেছি। কয়লা এলেই উৎপাদনে যাবে।’
কয়লা আমদানির পূর্ব প্রস্তুতি ছিল কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা ফরেন কারেন্সির (বৈদেশিক মুদ্র) উপর নির্ভর করে। এখানে ইন্ডিয়ানরা জড়িত রয়েছে। তারা ডিটেইলস (বিস্তারিত) বলতে পারবে।’
তথ্যমতে, বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার পর থেকে নিয়মিত ৫৬০ থেকে ৫৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছিল রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটটি। উৎপাদিত বিদ্যুতের মধ্যে ৪৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে এবং ২০০ মেগাওয়াট খুলনা-বাগেরহাট অঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছিল। নিয়মিত এ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কেন্দ্রটিতে প্রায় পাঁচ হাজার টন কয়লা লাগত। এ কয়লা আমদানি করা হতো ইন্দোনেশিয়া থেকে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া পার্টনারশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) উপমহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার না দেওয়ায় কয়লা আমদানি করা যায়নি। ইন্দোনেশিয়ায় কয়লা বোঝাই একটি জাহাজ প্রস্তুত আছে। ঋণপত্র পেলে জাহাজটি বাংলাদেশের পথে রওনা হবে। আমরা চেষ্টা করছি, দ্রুত এই সংকট নিরসনের।’
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে ভারত ও বাংলাদেশ যৌথ ভাবে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং ভারতের এনটিপিসি লিমিটেডের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) নামে কোম্পানি গঠিত হয়। এই কোম্পানির অধীনে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল) নামে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ শুরু করা হয়।