ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
রাজধানীর প্রায় সব এাকাতেই রয়েছে গ্যাসের সংকট। সকাল থেকে দুপুর অবধি চুলা জ্বলে না। কোনও এলাকায় দুপুর ছাড়িয়ে রাতও হয়। এলপিজি ব্যবহার করছেন যারা তাদের চিন্তা না থাকলেও মাসে চলে যাচ্ছে অন্তত দুই হাজার টাকা। সঙ্গে ৯৭৫ টাকার গ্যাস বিলও মাফ নেই। গ্যাস যদি না পাই তবে বিল দেবো কেন? এমন প্রশ্নও ছুড়ছেন তাদের কেউ কেউ। তবে এসব যাদের দেখার কথা সেই এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কর্তাদের কাজ যেন দাম বাড়ানো পর্যন্তই। গ্রাহকের চুলার খবর তারা রাখেন না।
এখন দেশে দিনে চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। বিপরীতে ২৭ জানুয়ারি সরবরাহ হয়েছে ২৭২৬ মিলিয়ন ঘনফুট। ১২৭৪ মিলিয়ন ঘাটতি নিয়েই পার হলো দিনটি।
এদিকে গ্যাস আমদানির জন্য দুটি টার্মিনালের একটি অচল বসে আছে মুরিং ছিঁড়ে যাওয়ায়। অপরটির সরবরাহ ক্ষমতা ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। সেটাও এ দিন সরবরাহ করেছে ৩৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট।
যেখানে দিনে ৬০০-৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আসতো সেখানে ২৭ তারিখে এসেছে ৪০০ মিলিয়ন। তাই সংকট ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্যাসের ঘাটতির কথা বললে পেট্রোবাংলার তরফ থেকে বলা হয় অনেক গ্যাস চুরি হচ্ছে। আমরা এলএনজি আনতে পারছি না। কিন্তু যে বৈধ গ্রাহকের সঙ্গে পেট্রোবাংলা এবং বিতরণ কোম্পানি চুক্তি করেছে তিনি কেন কোম্পানির ব্যর্থতার দায় নেবেন?
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর, রায়েরবাজার, রামপুরা, গোপীবাগ, শনির আখড়ার সহ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে গ্যাস সংকট। ভুক্তোভোগীরা জানান, রান্না নিয়ে সমস্যা হচ্ছে না। সিলিন্ডার ব্যবহার করছি একমাস ধরে। কারণ লাইনে আগুনই জ্বলে না। প্রতিমাসে ফাও বিল দিচ্ছি। তিতাসের কাছে তার প্রশ্ন—কেন প্রতিমাসে তার কাছ থেকে বিল নেওয়া হচ্ছে? সকাল ছয়টা থেকে রাত ১২টা এমনকি ১টা বাজেও গ্যাস থাকে না। মাঝে মাঝে বিকালে হালকা থাকে, তাতে পানিও গরম হয় না। সিলিন্ডার ছাড়া কোনোভাবেই চলা যাবে না।
হোটেল মালিক কবির জানান, ভোরে উঠেই রান্না শুরু করি। সকালের নাস্তাটা হয়ে যায়। কিন্তু দুপুরের রান্না করতে হয় সিলিন্ডার দিয়ে। হাজারিবাগের দেলোয়ার হোসেন, হাতিরপুলের হাসিনা বেগম ও ফার্মগেটের রুমানা করিম; সবার অভিযোগ একই। রুমানা ব্যাঙ্গ করে বললেন, দিনে গ্যাস থাকে না, বিকালে বেড়াতে আসে। আমরা তখন চা-নাশতা খাই। পারলে গ্যাসকেও একটু খাওয়াই।
এর মধ্যে বসুন্ধরা, পূর্ব ও পশ্চিম রামপুরা, উলন, বনশ্রী, মহানগর প্রজেক্ট, খিলগাঁও, গোড়ান, মিরপুরের পাইকপাড়া, মিরপুর দুই, আগারগাঁও, পুরান ঢাকাসহ পুরো শহরজুড়েই গ্যাসের হাহাকার চলছে। পুরান ঢাকায় সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না।
মিরপুর-২ থেকে নওরিন নিশি জানান, প্রতিদিনই ১১ থেকে ২টা পর্যন্ত চাপ কম থাকে। আদাবরের নূসরাত জাহান নিশা জানান, প্রি-পেইড মিটার ব্যবহার করছি। তারপরও গ্যাসের চাপ একেবারেই থাকে না আজকাল। রামপুরার মাসুদা জলি বলেন, সকাল ৭টা থেকে ৩টা পর্যন্ত গ্যাসের দেখা পাই না। বনশ্রীর মিশু আলাম বলেন, গ্যাসের এই সমস্যার কি সমাধান হবে না? না হলে আমাদের গ্যাস বিল কম নেওয়া হোক।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলেন, ‘সামিট জানিয়েছে টার্মিনালের যে মুরিংয়ের দড়ি ছিঁড়ে গিয়েছিল তা ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। উড়োজাহাজে করে আনিয়ে সেই দড়ি মহেশখালী পাঠানো হয়েছে। এখন পানির নিচে কাজের জন্য যে ডুবুরি প্রয়োজন তাদের কয়েকজন কোভিডের জন্য এসে পৌঁছাতে পারেনি। সামিট ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় চেয়েছে। আশা করছি ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’