নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা:
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছে একটি আবেদন দিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব। আবেদনে প্রেক্ষাপটে ভাড়া বৃদ্ধির দাবি জানানো হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) দেওয়া সেই আবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম মহানগরীসহ দূরপাল্লার রুটে ছয় থেকে সাত বছর ধরে বাস ভাড়া বৃদ্ধি হয়নি। করোনাকালেও তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সম্প্রতি ডিজেলের মূল্য লিটার প্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা বাস ভাড়া বৃদ্ধির জন্য আবেদনটি করেন।
পরিবহন মালিকদের আবেদন বিবেচনায় নিয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বৈঠকে বসেছে বিআরটিএ। বৈঠকের কার্যপত্রে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির আবেদন বিবেচনায় নিয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সভার আয়োজন করা হয়েছে।
আবেদন দেওয়ার পরদিন শুক্রবার থেকে ধর্মঘটে যান পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। এতে অচল হয়ে পড়েছে দেশের পরিবহন ব্যবস্থা। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে। এই অচলাবস্থা কাটাতে ধর্মঘটের তৃতীয় দিনে নতুন ভাড়া নির্ধারণের জন্য বৈঠক শুরু হলো।
বৈঠকের কার্যপত্রে মালিক সমিতির আবেদনের কথা ছাড়াও আরও পাঁচটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে সবশেষ ভাড়া বাড়ানোর বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। আগে নির্ধারিত ভাড়ার বর্ণনা করে কার্যপত্রে বলা হয়, ২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি ডিজেল চালিত আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লা রুটে চলাচলকারী ডিজেল চালিত বাস ও মিনিবাসের সর্বোচ্চ ভাড়া (ঢাকা মহানগর ও এর পাশ্ববর্তী এলাকা এবং চট্টগ্রাম মহানগর ছাড়া) প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৪৫ পয়সা নির্ধারণ করে গেজেট জারি করা হয়। ২০১৬ সালের ৪ মে ডিজেলের মূল্য ৬৮ টাকা থেকে কমিয়ে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হলে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লা বাসের ভাড়া ১ টাকা ৪৫ পয়সার পরিবর্তে ১ টাকা ৪২ পয়সা পুনর্নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
আর ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলরত বাস ও মিনিবাসের সর্বোচ্চ ভাড়া প্রতি কিলোমিটার যথাক্রমে ১ টাকা ৭০ পয়সা ও ১ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় ২০১৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। এছাড়া ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন অথরিটির (ডিটিসিএ) আওতাধীন জেলাগুলোর (নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলা) অভ্যন্তরে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে ভাড়ার হার নির্ধারণ করা হয় কিলোমিটার প্রতি ১ টাকা ৬০ পয়সা। এক্ষেত্রে বাস ও মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা ৭ টাকা ও ৫ টাকা।
এরপর ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বাস ভাড়া পুনঃনির্ধারণ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ঢাকা এবং চট্টগ্রাম মহানগর এলাকাভুক্ত এবং দূরপাল্লা রুটে চলাচলকারি বাস ও মিনিবাসের ভাড়া পুনর্নির্ধারণের জন্য ব্যয় বিশ্লেষণ করা হয়। ব্যয় বিশ্লেষণে দূরপাল্লা রুটে চালকসহ ৫২ আসন বিশিষ্ট ডিজেল চালিত বাসের প্রতি যাত্রী প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ২ টাকা ৭ পয়সা এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় চলাচলকারী ডিজেল চালিত বাস ও মিনিবাসের ভাড়া প্রতি যাত্রী প্রতি কিলোমিটার ২ টাকা ২১ পয়সা করার সুপারিশ করা হয়। ওই ব্যয় বিশ্লেষণে ডিজেলের মূল্য ব্যতীত ব্যয়ের সকল আইটেম অপরিবর্তিত রেখে শধু ডিজেলের মূল্য ৬৫ টাকার পরিবর্তে ৮০ টাকা পুনর্স্থাপন করা হলে দূরপাল্লা ও মহানগর এলাকায় চলাচলকারী ডিজেল চালিত বাস ভাড়া দাঁড়ায় যথাক্রমে ২ টাকা ৯ পয়সা এবং ২ টাকা ৪৯ পয়সা।
রবিবারের সভায় আলোচনার বিআরটিএর সর্বশেষ ব্যয় বিশ্লেষণ অনুযায়ী সম্ভাব্য ভাড়া ঠিক করেছে কমিটি। তাতে বলা হয়েছে, ‘সবশেষ ব্যয় বিশ্লেষণ অনুযায়ী ভাড়া হতে পারে দূরপাল্লা ও মহানগরী এলাকায় যথাক্রমে ১ টাকা ৮২ পয়সা ও ২ টাকা ১০ পয়সা। তবে বর্তমান বাস ভাড়ার সঙ্গে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির হার ২৩ দশমিক ০৮ শতাংশ সমন্বয় করে বাস ভাড়া পুনর্নির্ধারণের বিষয়টি আলোচনা হতে পারে।
২০১৯ সালের ব্যয়বিশ্লেষণ ‘বাস্তবতার নিরিখে’ পুনর্বিশ্লেষণ ও বিআরটিএর সর্বশেষ ব্যয় বিশ্লেষণ পর্যালোচনাপূর্বক ‘সার্বিক বিবেচনায়’ ভাড়া পুনর্নির্ধারণের বিষয়টি সভায় চূড়ান্ত করা যেতে পারে বলেও মনে করে কমিটি।