ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: করোনাভাইরাস মহামারি আর ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে তৈরি হওয়া বৈশ্বিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বিশ্ববাজারে তেলের দাম গত ১৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছানোর একদিন পর ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, মঙ্গলবার বিশ্ববাজারে তেলের দাম গতকালের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে।
সুইজারল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেডিট সুইস ব্যাংক বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং জ্বালানির চাহিদায় এর প্রভাব পড়তে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। তবে বৈশ্বিক ব্যাংকিং খাতের এই ঝুঁকি নিয়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল, ক্রেডিট সুইস ব্যাংক বিক্রির সিদ্ধান্তে তা কিছুটা কমেছে।
দেশটির আরেক বৃহত্তম ব্যাংকের ইউবিএস ক্রেডিট সুইসকে অধিগ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপ ও আমেরিকার প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো বলেছে, তারা বাজারে তারল্য বাড়াবে এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সমর্থন করবে। প্রাথমিকভাবে ক্রেডিট সুইসের সাথে ইউবিএসের চুক্তির পর বৈশ্বিক আর্থিক বাজার কিছুটা চাঙা হয়েছে।
রয়টার্স বলছে, মঙ্গলবার অপরিশোধিত ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৫২ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেল ৭৪ দশমিক ৩১ ডলার হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দামও ৫২ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেল ৬৮ দশমিক ১৬ ডলারে বিক্রি হয়েছে।
তেলের বাণিজ্য করা প্রতিষ্ঠান পিভিএমের স্টিফেন ব্রেনক বলেছেন, ব্যাংকিং খাতের এই উত্থান-পতন এখনই শেষ হচ্ছে না। আপাতদৃষ্টিতে তাৎক্ষণিক সংকট এড়ানো গেছে বলে মনে হলেও এর প্রভাবে তেলের বিক্রি কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়া ব্যাংকের পণ্য গবেষণা বিভাগের প্রধান ব্যাডেন মুর বলেছেন, বাজারের মনোযোগ এখন ব্যাংক খাতের অস্থিরতা এবং মার্কিন ফেডারেল ব্যাংকের সুদ হার বৃদ্ধির সম্ভাবনার দিকে রয়েছে।
রয়টার্সের জরিপে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদের মতে, সাম্প্রতিক ব্যাংক খাতের অস্থিরতা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক আগামী ২২ মার্চ সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার বিশ্ববাজারের প্রথম সেশনে ডলারের দাম পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্নে পৌঁছানোর পর ফের বৃদ্ধি পেয়েছে। ডলার দাম বৃদ্ধি বা শক্তিশালী অবস্থান অন্যান্য মুদ্রার ধারকদের কাছে তেলকে আরও ব্যয়বহুল করে তোলে।
এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কিছু ব্যাংকের নির্বাহীরা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আপাতত আর্থিক নীতির কঠোর প্রয়োগ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে পরবর্তীতে সুদ হার বৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এদিকে, বিশ্বের শীর্ষ জ্বালানি রপ্তানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেক ও এর মিত্র উৎপাদনকারী যারা ওপেক প্লাস নামে পরিচিত, তাদের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে আগামী ৩ এপ্রিল। এর আগে, গত অক্টোবরে এই জোটের সদস্যরা চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত তেল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রতিদিন ২ মিলিয়ন ব্যারেল কমানোর ব্যাপারে রাজি হয়েছিল।