ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: করোনা মহামারি পরবর্তী পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিভিন্ন আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক কারণে ডলারের দাম লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি শুরু হয়েছে। আর এই পরিস্থিতিকে আরও তীব্র করে তুলছে আন্তর্জাতিক অপরিশোধিত তেলের বাজার। রোববার ব্রেন্ট ক্রুড ও ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই)—অপরিশোধিত তেলের দুই বেঞ্চমার্কেরই দাম কমেছে ব্যারেলপ্রতি ১ ডলারের বেশি।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী রোববার ব্রেন্ট ক্রুডের দাম প্রতি ব্যারেলে ১ দশমিক ১০ ডলার কমে হয়েছে ৯৩ দশমিক ৫৭ ডলার; আর ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম প্র তি ব্যারেলে ১ দশমিক ০৭ ডলার কমে হয়েছে ৮৬ দশমিক ৮৩ ডলার। শতকরা হিসেবে উভয় ব্র্যান্ডের তেলের দাম কমেছে ১ দশমিক ২ শতাংশ।
ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আন্তর্জাতিক বাজারে হু হু করে বাড়ছিল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে চলে এই অবস্থা। গত মে মাসে ব্রেন্ট ক্রুড ও ডব্লিউটিআই প্রতি ব্যারেলের দাম বেড়েছিল যথাক্রমে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ৯ দশমিক ৩ শতাংশ।
কিন্তু এর মধ্যেই ডলারের মান বাড়তে থাকায় জুন মাস থেকেই পতন শুরু হয় জ্বালানি তেলের বাজারে। অপরিশোধিত তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা দেশ চীনের জিরো কোভিড নীতি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো নিজেদের ডলারের মজুত রক্ষায় তেল কেনা কমিয়ে দেওয়াও এই পতনের অন্যতম কারণ।
বাজার চাঙ্গা করতে গত সেপ্টেম্বরে জ্বালানি তেলের দৈনিক উত্তোলন শতকরা ২ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তেল উত্তলন ও রপ্তানিকারী দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাস; কিন্তু যে উদ্দেশ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা এখনও পূরণ হয়নি।
অপরিশোধিত তেলের বাজার বিশ্লেষণকারী সংস্থা এসপিআই অ্যাসেস ম্যানেজমেন্টের কর্মকর্তা স্টিফেন ইনস অবশ্য তেলের বাজারের এই টানা মন্দাভাবের জন্য চীন সরকারের নেওয়া ‘জিরো কোভিড’ নীতিকে প্রধানত দায়ী বলে মনে করেন। রয়টার্সকে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চীন বিশ্বের বৃহত্তম অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ক্রেতা। যতদিন পর্যন্ত সেখানে জিরো কোভিড নীতি মেনে চলা হবে, ততদিন তেলের বাজারেও এমন মন্দা পরিস্থিতি থাকবে।’
তবে সিএমসি মার্কেট অ্যানালিসস নামের অপর একটি বিশ্লেষক সংস্থার কর্মকর্তা লিওন লি মনে করেন, তেলের বাজারের এই পরিস্থিতির জন্য চীনের জিরো কোভিড নীতির পাশাপাশি ইউরোপের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটও দায়ী।
লি বলেন, ‘যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার জেরে বিশ্বের স্বাভাবিক সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে ইউরোপে নিত্য ব্যববহার্য জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, সেই সঙ্গে জনগণের আয়ও কমে গেছে।’
‘বাড়তি জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ইউরোপের জনগণ ভ্রমণ, বিলাসজাত কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় নয়— এমন সব খাতে অর্থ খরচ হ্রাস করছে। ফলে জ্বালানি তেলের চাহিদাও হ্রাস পেয়েছে এবং বাজারের মন্দাভাব কাটছে না।’