ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: দেশে ডিজেলের সংকট কাটাতে বিকল্প উৎস হিসেবে রাশিয়ার ক্রুড অয়েল আমদানির চেষ্টা চালাচ্ছিল বাংলাদেশ। রাশিয়ার প্রস্তাব লুফে নিয়ে চলছিল পরীক্ষা-নিরীক্ষা। মঙ্গলবার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) সেই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনে (বিপিসি)।
প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে, আরব দেশগুলো থেকে আনা ক্রুডের চেয়ে রাশিয়ার ক্রুডে ডিজেলের পরিমাণ কম। ক্রুড থেকে পাওয়া ন্যাপতার মানও পেট্রোল তৈরির উপযোগী নয়। তাই কম দামে পেলেও রাশিয়ার ক্রুড অয়েল আমদানি অলাভজনক হবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
রাশিয়া থেকে পাঠানোর ৫০ লিটার ক্রুডের নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়। ২৪ অগাস্ট এসব অপরিশোধিত তেলের নমুনা ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জারুবেঝজনেফ জেএসসি ৫০ লিটারের অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের নমুনা বিমানের ফ্লাইটে ঢাকা পাঠায়।
পরবর্তী সময়ে রাশিয়ার জ্বালানি তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জারুবেঝনেফ জেএসসির বাংলাদেশি এজেন্ট ন্যাশনাল ইলেকট্রিক বিডি লিমিটেডের প্রতিনিধিরা গত ০১ সেপ্টেম্বর অপরিশোধিত তেলের ৫০ লিটার ওজনের নমুনা পাঁচটি প্লাস্টিক জারে করে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ লোকমানের কাছে হস্তান্তর করেন। ইআরএলের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন অ্যান্ড প্লাানিং) রায়হান আহম্মদকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ইআরএলের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা সম্পন্ন করেন ওই কমিটি। নমুনা পরীক্ষায় যাবতীয় বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করে পাঁচ সদস্যের কমিটির সবার স্বাক্ষরে প্রতিবেদন তৈরি হয়। প্রতিবেদনটি বিপিসিতে জমা দেওয়া হয় মঙ্গলবার সকালে। তবে প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সম্পর্কে অফিসিয়ালি কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি।
ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. লোকমান বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে রাশিয়ার ক্রুডের নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন বিপিসিতে জমা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি যেহেতু দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের এবং স্পর্শকাতর, সেহেতু আমরা এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করবো না। প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিপিসি এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত দেবে।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, নমুনায় ডিজেলের পরিমাণ কম। বিপিসি মারবান ক্রুড ও অ্যারাবিয়ান লাইট ক্রুড (এএলসি) আমদানি করে। মারবান ও এএলসিতে ৪১-৪২ শতাংশের বেশি ডিজেল পাই। রাশিয়ান ক্রুডে পাওয়া গেছে ৩৩ শতাংশ। ‘টপ কাট’-এ ন্যাপথার পরিমাণও কম হবে। এতে পেট্রোলও কম পাওয়া যাবে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা তৈরি করবে ‘বটম কাট’। এখানে ৫০ শতাংশ হবে বটম কাট। এটা প্রসেস করা খুবই কষ্টসাধ্য। এতে প্ল্যান্টে পাম্পসহ কিছু যন্ত্রপাতিতে মডিফিকেশনের প্রয়োজন হতে পারে। এটা খুবই কষ্টসাধ্য।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে ডিজেলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ডিজেলকে টার্গেট করেই মারবান ও এএলসি আমদানি করে বিপিসি। সেই অনুপাতে রাশিয়ার নমুনা পরীক্ষায় ডিজেল ও পেট্রোলের পরিমাণ কম। তাই আনুপাতিকহারে আর্থিক ভাবে আমরা লাভবান হবো না।’
বিপিসি সূত্রে জানা যায়, দেশে বছরে কমবেশি ৬০ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেলের চাহিদা থাকে। এর মধ্যে ১৫ লাখ মেট্রিক টন ক্রুড আমদানি করে পরিশোধন করা হয়। অবশিষ্ট ৪৫ লাখ টন পরিশোধিত জ্বালানি আমদানি করে বিপিসি। বাংলাদেশ সাধারণত সৌদি আরব, কুয়েতসহ আরব আমিরাতের দেশগুলো থেকে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে। চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডে অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করে ডিজেল, পেট্রোল, অকটেনসহ বিভিন্ন রকম জ্বালানি তেল উৎপাদন করে। বছরে ১৫ লাখ টন তেল শোধনের সক্ষমতা আছে তাদের। দেশে মোট জ্বালানি চাহিদার প্রায় ৭৫ শতাংশই ডিজেল। গত বছর ডিজেলের চাহিদা আরও বেড়েছে।
বিপিসির পরিচালক (অপারেশন্স ও পরিকল্পনা) ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব খালিদ আহম্মেদ বলেন, ‘ইস্টার্ন রিফাইনারি থেকে রাশিয়ান ক্রুডের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। তবে রিপোর্টটি এখনো পর্যালোচনা করা হয়নি। বুধবার এ বিষয়ে আমরা বলতে পারবো।’