তেলের দাম নতুন মাইলফলক ছুঁয়েছে। ২০১৪ সালের পর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম এই প্রথম প্রতি ব্যারেল ৮৫ ডলার ছাড়াল। ইউএস অয়েলের দাম উঠেছে ৮৫ দশমিক শূন্য ৭ ডলারে।
গত বছরের এপ্রিল মাসে জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ‘শূন্য’ ডলারের নিচে নেমে যায়। সেই অবস্থা থেকে ঘুরে অপরিশোধিত তেলের দাম চলতি বছরের শেষে ৯০ ডলারে উঠতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে করোনার টিকাদান দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ফলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই সংক্রমণের হার ২ শতাংশের নিচে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিকভাবেই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল হচ্ছে আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জ্বালানির চাহিদা। চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে দাম। তৈরি হচ্ছে সংকট।
প্রায় দেড় বছর কম দামে বিক্রির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তেল উত্তোলনকারী দেশগুলো দাম বাড়ানোর কৌশল হিসেবে দৈনিক তেল উত্তোলনের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সব ধরনের জ্বালানির দাম আরও কিছুদিন ঊর্ধ্বমুখী থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট লোকজন।
চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সরবরাহ সংকট। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঢেউ প্রশমিত হওয়ার পর হঠাৎ চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। মানুষ দীর্ঘদিনের অপূর্ণ চাহিদা মেটাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সিংহভাগই সম্পন্ন হয় জাহাজের মাধ্যমে। কিন্তু সেই জাহাজের সংখ্যা বাড়েনি। ফলে তৈরি হচ্ছে পণ্যজট।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল আমদানি করে চীন। এরপর ভারত। এই দুই দেশই গত কয়েক মাস টানা তেল আমদানি বাড়িয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা ব্যবহার কমানোর ঘোষণা দিয়েছে চীন। বিদ্যুৎ উৎপাদনে তারা তেলের ব্যবহার বাড়াচ্ছে। এ ছাড়া আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে চীনে শীতকালীন অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হবে। সে জন্য বেইজিংয়ের দূষণ কমাতে কয়লার ব্যবহার কমানো হচ্ছে। করোনার পর ভারতেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়েছে। তাই বেড়েছে তেলের ব্যবহার।
আন্তর্জাতিক বাজারে এ বছরের জানুয়ারি মাসে জ্বালানি তেলের দাম ছিল গড়ে প্রতি ব্যারেল ৪৯ ডলার। ফেব্রুয়ারি মাসে ৫৩ ডলার, মার্চে ৬০, এপ্রিলে ৬৫, মে মাসে ৬৪, জুনে ৬৬ ডলার, জুলাইয়ে ৭৩ ডলার এবং আগস্টে গড়ে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল ৭৪ ডলার। চলতি মাসে এই দাম ৮৫ ডলার ছাড়িয়ে গেল। ধারণা করা হচ্ছে, শিগগিরই তা ১০০ ডলার হয়ে যাবে।
বাড়ছে কয়লার দামও
কয়লার মূল্য ঘোষণাকারী এজেন্সি অর্গাস মিডিয়ার ধারণা, চলতি বছর ইউরোপে কয়লার চাহিদা বাড়তে পারে। জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন ও যুক্তরাজ্যের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো যদি আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত ৮০ শতাংশ সক্ষমতায়ও পরিচালিত হয়, তাহলে চাহিদার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। যদিও এসব দেশ কার্বন নিঃসরণ কমাতে কয়লার ব্যবহার কমাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
একই সঙ্গে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ইউরোপে। ইউরোপে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম আরও কিছুদিন বাড়তি থাকবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালিতে জ্বালানির দাম বেড়েছে। জার্মানিতে আগামী বছরের জন্য বিদ্যুতের দাম ১৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ফ্রান্সে বাড়ানো হয়েছে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। এ মাসে নেদারল্যান্ডসে ডাচ প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম আগের চেয়ে ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে।