৩ বছরের মধ্যে দেশে বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম না বাড়াতে ক্যাবের আহ্বান

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: দেশের জ্বালানি খাতে দীর্ঘদিন ধরে চলা অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয় পরিহার করে ভোক্তাবান্ধব করে তোলার লক্ষ্যে আগামী ৩ বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানির দাম না বাড়ানোসহ ১১ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

রোববার দুপুরে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি কনফারেন্স হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানায় ভোক্তার অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনটি।

‘জ্বালানি খাত সংস্কার চাই: ক্যাব’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনের মূল প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম।

এতে মূল আলোচক ছিলেন ক্যাবের আইন উপদেষ্টা ও আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

ক্যাবের দাবিসমূহ হলো:

১. অন্যায় ও অযৌক্তিক ব্যয় রোধ করে ঘাটতি সমন্বয় ও পণ্য মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরোধ এবং সংকট মোকাবেলা করার লক্ষ্যে ৩ বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানির মূল্যহার বৃদ্ধি করা হবে না- সরকারের নিকট থেকে এমন ঘোষণা চাই।

২. সেই লক্ষ্যে বিইআরসির আওতায় ক্যাব প্রস্তাবিত বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি ২০২৪-এর আলোকে জ্বালানি খাত সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়নের জন্য একটি ‘জ্বালানি খাত সংস্কার কমিশন’ চাই। সংস্কার প্রস্তাবে বিদ্যুৎ, প্রাথমিক জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সরবরাহে লুণ্ঠনমূলক ব্যয় রোধ করে ঘাটতি সমন্বয় এবং ভোক্তার জ্বালানি অধিকার সংরক্ষণে জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিত করার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা চাই।

৩. বিইআরসির চেয়ারম্যান পরিবর্তন হয়েছে। সদস্যরা পদত্যাগ করেছেন। তাদের স্থলে অভিজ্ঞ, নিরপেক্ষ, দক্ষ, সৎ পেশাজীবীদের নিয়োগ সার্চ কমিটির মাধ্যমে চাই। অংশীজনের প্রস্তাবের ভিত্তিতে সার্চ কমিটি গঠন চাই।

৪. জ্বালানি অধিকার সুরক্ষায় জ্বালানি খাতের আওতাধীন বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালনা বোর্ড/সংস্থাসমূহে বিভিন্ন পদে পদস্থ ক্যাডার কর্মকর্তাদের অপসারণ চাই।

৫. একই সাথে পেট্রো বাংলা, বিপিসি, পিডিবি, আরইবি, স্রেডা, এবং বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানি খাতের বিভিন্ন কোম্পানির শীর্ষ পদসমূহের কর্মকর্তাদের পরিবর্তন চাই। বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি সম্পদ উভয় বিভাগেও অনুরূপ পরিবর্তন চাই। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত পরিচালনায় মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্বের অবসান চাই।

৬. বিইআরসির দ্বারা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে অংশীজনদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ চাই।

৭. বিইআরসিকে সক্ষম ও কার্যকর করার জন্য মন্ত্রণালয়কে কেবলমাত্র আপস্ট্রিম তথা পলিসি রেগুলেটরের দায়িত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে-দেখতে চাই।

৮. বিইআরসি আইনের সংশোধনী ৩৪ (ক) বাতিল হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০ বাতিল চাই। এবং প্রতিযোগিতাবিহীন বিনিয়োগ ও ক্রয়-বিক্রয় আইন দ্বারা নিষিদ্ধ দেখতে চাই।

৯. ২০১২ সালে বিইআরসি প্রস্তাবিত পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের (পেট্রোল, ডিজেল, ফার্নেসওয়েল, কেরোসিন ইত্যাদি) মূল্যহার নির্ধারণ সংক্রান্ত তিনটি প্রবিধানমালা কার্যকর দেখতে চাই।

১০. কস্ট প্লাস নয় কস্ট বেসিসে লুণ্ঠনমুক্ত মুনাফাবিহীন সরকারি জ্বালানি সেবা চাই।

১১. বিদ্যুৎ, প্রাথমিক জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সরবরাহের যেকোনো পর্যায়ের দুর্নীতি ও লুণ্ঠনে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশ এবং ‘জ্বালানি অপরাধী’ হিসেবে তাদের বিচার চাই।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ূন কবির ভূঁইয়া ও সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মিজানুর রহমানসহ আরও অনেকে।

-এসএম