।। বিশেষ প্রতিনিধি ।।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও মার্কিন ডলারের দর ক্রমশ বেড়েই চলেছে। বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, এক বছরের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে তেল, গ্যাস ও কয়লার মতো জ্বালানির দর গড়ে ৩৩ ভাগ বেড়েছে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৭২ ডলারে পৌঁছেছে এ বছর। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামী বছরও দর বাড়তির দিকেই থাকবে। এটা ৭৪ ডলার পর্যন্ত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
এদিকে বিশ্ববাজারে ডলারের দামও বাড়তি। গত আড়াই মাসের মধ্যে ৩০ অক্টোবর ২০১৮ ডলারের দাম সর্বোচ্চ হয়েছে। আন্তর্জাতিক শীর্ষ মুদ্রাগুলোর বিপরীতে ক্রমশ চড়া হচ্ছে ডলারের বাজার। ডলারের বিপরীতে দাম পড়েছে ইউরো, ইয়েন ও ইউয়ানের। চীনা মুদ্রা ইউয়ানের দর ২০০৮ সালের মে মাসের পর সর্বনিম্নে ঠেকেছে। ৩০ অক্টোবর প্রতি ডলার ৬ দশমিক ৯৬ ইউয়ানের লেনদেন হতে দেখা যায়।
প্রতি তিন মাস অন্তর বিশ্বব্যাংক প্রকাশ করে বিশ্ববাণিজ্য বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদন ‘কমোডিটি মার্কেট আউটলুক’। অক্টোবরের শেষে প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এপ্রিলে বিশ্বব্যাংক তেলের দাম বৃদ্ধির যে প্রাক্কলন করেছিল, বাজার পরিস্থিতির কারণে তাতে পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। এপ্রিলের প্রতিবেদনে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির যে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল সেটি আরও ১৩ শতাংশ বাড়িয়ে এবারের প্রতিবেদন হালনাগাদ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন হ্রাস পাওয়া এবং ইরানে নতুন করে মার্কিন অবরোধের ফলে সাম্প্রতিক তেলের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। অন্যদিকে এশিয়া ও ইউরোপে কয়লা ও গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্ববাজারে কয়লা ও গ্যাসের দামও বেড়েছে। বিশ্বব্যাংক আশঙ্কা করছে, আগামী বছর সমস্ত কৃষিপণ্যের দাম গড়ে ২ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে সারের দামও ২ শতাংশ বাড়তে পারে।
এদিকে ডলারের দাম বৃদ্ধির নেপথ্যে কাজ করছে চীন-মার্কিন বাণিজ্য উত্তেজনা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টিভি চ্যানেল সিএনএন বলছে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ট্যাক্স আরোপের বাণিজ্য যুদ্ধ, মার্কিন সুদের বিষয়সহ বেশ কয়েকটি ইস্যুতে গত জানুয়ারির পর ডলারের বিপরীতে ইউয়ানের মান এ পর্যন্ত ৯ শতাংশের বেশি পড়েছে। ডলারের বিপরীতে ইউয়ানের মান আর কত তলানিতে নামবে তা নিয়ে বিনিয়োগকারীরা অনিশ্চয়তায় ভুগছে বলে জানিয়েছে সিএনএন।
রয়টার্স জানায়, ৩০ অক্টোবর আন্তর্জাতিক মুদ্রাগুলোর বিপরীতে ডলারের দর ০.২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৯৬.৮০৬, যা আড়াই মাসে সর্বোচ্চ। ইউরোর দাম কমে হয় ১.১৩৬৯ ডলার। জাপানি মুদ্রা ইয়েনের দরও ০.৪ শতাংশ কমে ডলারের বিপরীতে ১১২.৮৫৫ হয়েছে। চীনা মুদ্রা ইউয়ানের দর কমে প্রতি ডলার হয় ৬.৯৬ ইউয়ান।
বাণিজ্য ও অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বরাবরই দাবি করে থাকেন যে, পরিবহন ব্যয়, পণ্য উৎপাদন ব্যয়সহ সব কিছুর ওপরই জ্বালানি তেলের দর বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে। বেড়ে যাবে প্রত্যেক নাগরিকের জীবনযাত্রার ব্যয়। ডলারের দাম বাড়লে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য বাড়বে। যদিও রপ্তানিতে কিছু সুবিধা বাড়ে, কিন্তু আমদানিপ্রধান হওয়ায় বাংলাদেশের অর্থনীতি এর ফলে চাপেই পড়বে।
বাংলাদেশে এমনিতেই নির্বাচনী মৌসুমে ব্যবসা বাণিজ্যের ধারা নেতিবাচক দেখা যায়। তার সঙ্গে বিশ্ব বাণিজ্যের এই প্রবণতা যুক্ত হওয়াটা সাধারণ মানুষের জন্য আশঙ্কার।