ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: প্রতি বছর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকার জ্বালানি আমদানি করা হয়। এর একটা বড় অংশ চলে যায় এলএনজি আমদানিতে। চালু থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের ঘাটতি থাকার পরও গত চার বছরে সরকার ১১টি এলএনজি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দিয়েছে। এর চারটি নির্মাণাধীন ও সাতটি নির্মাণ কাজ শুরু করার অপেক্ষায় আছে।
রোববার কক্সবাজারের হোটেল সৈকতের হালদা কনফারেন্স হলে আইএসডিই- বাংলাদেশ, উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন) ও বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনা বিষয়ক কর্মজোটের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।
আসভায় আরও বলা হয়, গ্যাসের ঘাটতি পূরণের জন্য সরকার ২০১৮ সাল থেকে তরলীকৃত গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু করে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দুটি বেসরকারি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হয় যার সার্ভিস চার্জ বাবদ প্রতিদিন সাড়ে চার লাখ ডলার দিতে হচ্ছে। এছাড়া, প্রতি ঘনমিটার এলএনজি আমদানিতে ৭৯ দশমিক ৩৩ টাকা ব্যয় হলেও বিদ্যুৎখাতে বিক্রি করা হচ্ছে ১৪ দশমিক ৭৫ টাকায়। ফলে প্রতি ঘনমিটারে লোকসান হচ্ছে ৬৪ দশমিক ৫৮ টাকা। এলএনজি সরবরাহ না করতে পারলে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অলস বসে থাকবে। বিদ্যুৎ না পেলেও সরকারকে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হবে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদেরকে ১৭ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে। অলস বিদ্যুৎকেন্দ্র বৃদ্ধি পাবার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাপাসিটি চার্জও হু হু করে বাড়ছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্যে ভূরাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হওয়ার পর এলএনজি ও পেট্রোলিয়ামের সরবরাহ ক্রমশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় নতুন এলএনজি টার্মিনাল ও এলএনজি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করলে তা দেশের অর্থনীতির গলার কাঁটা হয়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি প্রতি বছর প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার জ্বালানি আমদানির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপরেও অসহনীয় চাপ তৈরি হচ্ছে। জাতীয় বাজেটের ওপর জ্বালানি আমদানি ও ক্যাপাসিটি চার্জের চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষি, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও শিক্ষার মতো অতি জরুরি খাতে বরাদ্দ কমছে যা সামগ্রিক ভাবে জনকল্যাণ ও মানবসম্পদ উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
উৎপাদন, পরিবহন ও ব্যবহার প্রক্রিয়ায় এলএনজি দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড়ে ৯৫০ গ্রাম কার্বন ডাই অক্সাইড বাতাসে নির্গত হয়, যা প্রায় কয়লার কাছাকাছি। অপরদিকে, সৌর বা বায়ুশক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে নির্গমন হয় না বললেই চলে। এছাড়া, সৌর বা বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন করার জন্য কোনো জ্বালানি দরকার হয় না, যা প্রতি বছর কমপক্ষে দুই বিলিয়ন বৈদশিক ডলার সাশ্রয় করতে পারে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হয় না বিধায় বিদেশে পাচারের সম্ভাবনাও শূন্যের কোঠায় নেমে আসতে পারে।
আইএসডিই বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ও ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় মূল সহায়ক ছিলেন বিডাব্লজিইডি সদস্য সচিব হাসান মেহেদী, ক্লীন কর্মসূচি সমন্বয়কারী মাহবুবুল আলম প্রিন্স ও ক্যাম্পেইন সমন্বয়কারী শেখ বাহলুল আলম।
আলোচনায় অংশ নেন নারী নেত্রী ও এডাব চট্টগ্রামের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর আবিদা আজাদ, সিআরসিডির নির্বাহী পরিচালক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, বনফুলের নির্বাহী পরিচালক রেজিয়া বেগম, দৃষ্টির হেলাল উদ্দীন মাহবুব, উপকূল সমাজ উন্নয়ন সংস্থা, তাড়না ট্রাস্ট পটিয়ার নির্বাহী পরিচালক মো. সোলাইমান, পিসিডিএস শম্পা চৌধুরী, পল্লী গ্রগতি সংস্থা (পিপিএস) চন্দনাইশের নির্বাহী পরিচালক নুরুল হক চৌধুরী, ইলমার ফোরকান মাহমুদ, নারী ঐক্য বাংলাদেশের জান্নাতুল ফেরদৌস, সমতা নারী উন্নয়ন সংস্থা কর্নফুলীর মোমেনা আক্তার, শৈলী সীতাকুণ্ডের প্রধান নির্বাহী নাসির উদ্দীন অনিক, স্যুট এর জেবুন্নেছা চৌধুরী, ইশিকা ফাউন্ডেশনের জহুরুল ইসলাম, সিএসডিএফর প্রকল্প সমন্বয়কারী শম্পা কে নাহার, ক্যাব যুব গ্রুপের সভাপতি আবু হানিফ নোমানসহ আরও অনেকে।