ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: চট্টগ্রামে তৈরি হয়েছে গ্যাস সংকট। শনিবার নগরের বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ গ্যাস সংকট দেখা দেয়। এতে বিপাকে পড়েন হাজারো গ্রাহক। হঠাৎ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রান্না হয়নি অনেক বাসা বাড়িতে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই গ্যাস সংকট আরও এক মাস থাকবে।
চট্টগ্রামে গ্যাস সাপ্লাই দেয় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। দুটি টার্মিনাল থেকে গ্যাস নেয় তারা। এর মধ্যে সামিটের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় প্রায় ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাচ্ছে না তারা। এরই মধ্যে একটি লাইন বন্ধ হয়ে যায়। তাই চট্টগ্রামে তৈরি হয়েছে গ্যাস সংকট।
মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লেখেন, ‘বিনা নোটিশে গ্যাস চলে যাওয়া কষ্টের বিষয়। নোটিশ দিয়ে জানালে আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতাম। ভোরেই রান্নাবান্না সারতাম।’
গ্যাস না থাকায় চকবাজার, বহদ্দারহাট, নাসিরাবাদ, নিউমুরিং, দেওয়ানবাজার, জামালখান, বাকলিয়া, ডিসি রোড, চন্দনপুরা, আসকারদিঘীর পাড়, হালিশহর, রহমতগঞ্জ, আগ্রাবাদ, অলঙ্কার, বন্দর এলাকা, বিবিরহাট, দুই নম্বর গেট, পাঁচলাইশ, মুরাদপুর, খুলশি, অক্সিজেন, বালুচরাসহ নগরের বিভিন্ন এলাকার বেশির ভাগ বাসা-বাড়িতে জ্বলেনি চুলা। তবে যেসব বাসায় তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) আছে-সেখানে রান্নার সমস্যা হয়নি। শনিবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা- এই ৪ ঘণ্টা ধরে চলে গ্যাস সংকট। বিকেল ৩টার পর একটু একটু করে আসতে শুরু করে গ্যাস।
গ্যাস না পেয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন গ্রাহকরা। কেউ কেউ বৈদ্যুতিক চুলায় রান্নাবান্না করছেন, আবার কেউ নতুন করে সিলিন্ডার কিনে রান্না সেরেছেন। আর বস্তিবাসীরা বেছে নেন মাটির চুলা।
গ্যাস সংকটে রোববার দুপুরের রান্না করতে পারেননি বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা আকরাম হোসেন। তিনি বলেন, হঠাৎ করে গ্যাস সংকট দেখা দেয়। বেলা ১১টা থেকে চেষ্টা করেও দুপুরের রান্না করা সম্ভব হয়নি। একটু করে আসে আবার চলে যায়৷ পরে হোটেল থেকে খাবার এনে খেতে হয়েছে।
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মোট গ্রাহক ও সংযোগ আছে ৬ লাখ ১ হাজার ৯১৪টি। এর মধ্যে গৃহস্থালি সংযোগ ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৫৬১টি। চট্টগ্রামে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩২৫ মিলিয়ন ঘনফুট। মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল থেকে পাওয়া যায় ২৭০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বাকি গ্যাস পাওয়া যেত আরেকটি টার্মিনাল থেকে। কিন্তু এখন ওই টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে সংকট তৈরি হয়েছে। যে গ্যাস পাচ্ছে তার অর্ধেক চলে যায় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সার এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রে। বাকি গ্যাস দিয়েই আবাসিকসহ অন্যান্য জায়গায় চাহিদা মেটাতে হচ্ছে। এক মাস ধরে এই সংকট থাকবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) আমিনুর রহমান বলেন, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড দুটি টার্মিনাল থেকে গ্যাস পেয়ে থাকে। এর মধ্যে সামিটের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় প্রায় ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমরা এখন পাচ্ছি না। একটা লাইন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মূলত গ্যাস সংকট শুরু হয়েছে। ধারণা করছি, এক মাস ধরে এই সংকট চলমান থাকবে।
তিনি আরও বলেন, দিনের বেলায় যেহেতু শিল্প কারখানা চলে, তাই এই সময়ে একটু সমস্যা থাকবে। তবে রাতে তেমন একটা সংকট থাকবে না।