নির্বাহী আদেশে তেল-গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিধান বাতিল

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: নির্বাহী আদেশে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিধান বাতিল হচ্ছে। এ জন্য ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর বিশেষ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) নয় সরকারকে ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণ, পুনর্নির্ধারণ ও সমন্বয়ের ক্ষমতা দিয়ে ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২২’ জারি করেন রাষ্ট্রপতি।

অধ্যাদেশে ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনর্নির্ধারণ বা সমন্বয়ে সরকারের ক্ষমতা শিরোনামে ৩৪(ক) ধারা যুক্ত করা হয়। ওই ধারায় বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, ভর্তুকি সমন্বয়ের লক্ষ্যে, জনস্বার্থে, কৃষি, শিল্প, সার, ব্যবসা-বাণিজ্য ও গৃহস্থালি কাজের চাহিদা অনুযায়ী এনার্জির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে উহাদের উৎপাদন বৃদ্ধি, সঞ্চালন, পরিবহন ও বিপণনের নিমিত্ত দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে বিদ্যুৎ উৎপাদন, এনার্জি সঞ্চালন, মজুতকরণ, বিপণন, সরবরাহ, বিতরণ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনর্নির্ধারণ বা সমন্বয় করিতে পারিবে।’

পরে সংসদ বসলে অধ্যাদেশটি আইনে পরিণত হয়। মন্ত্রণালয় থেকে দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছিল গ্যাস, বিদ্যুৎ ও তেলের দাম। এটি নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং গ্যাস সম্পদ ও পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থের ট্যারিফ/মূল্য নির্ধারণে গণশুনানির মাধ্যমে জনগণের অধিক সম্পৃক্ততা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুশাসন, জনপ্রত্যাশা এবং ভোক্তার স্বার্থ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ২০০৩’ এর ৩৪(ক) ধারা বিলুপ্ত করার লক্ষ্যে অধ্যাদেশ জারির বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদ-বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির দিনে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। ওইদিনই বিলুপ্ত হয় মন্ত্রিসভা।

এরপর গত ৮ আগস্ট শপথ নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছেন মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। গত রোববার (১৮ আগস্ট) তিনি প্রথম দিন অফিসে এসে জানান, নির্বাহী আদেশে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হবে না।

‘শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট’ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এ জন্য ‘শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের খসড়া অধ্যাদেশ অনুযায়ী নতুন নাম হবে ‘বাংলাদেশ জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট’।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশের সম্ভাবনাময় যুবদের প্রশিক্ষণ ও উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে ক্ষমতায়ন করা এবং দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নয়ন ও গঠনমূলক কর্মকাণ্ডে যুবদের নিয়োজিতকরণের নিমিত্ত গবেষণা, উচ্চ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান এবং এ সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার উদ্দেশ্যে একটি কেন্দ্রীয় ও আধুনিক মানসম্পন্ন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠাকল্পে ‘শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৮’ প্রণীত হয়। প্রতিষ্ঠানটির নামের ক্ষেত্রে ব্যক্তির নাম বিলুপ্ত করা হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এর গ্রহণযোগ্যতা এবং মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। এ লক্ষ্যে উক্ত প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট’ করার জন্য অধ্যাদেশ জারির বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

গত ১১ আগস্ট সচিবালয়ে প্রথম দিন অফিসে এসে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট রয়েছে। আমরা এটার নাম পরিবর্তন করতে চাই। যেহেতু বাংলাদেশে একটা ম্যাসাকারের সঙ্গে শেখ হাসিনার নাম জড়িত আছে। সহস্র-হাজার শিক্ষার্থী মারা গেছে, আমরা মনে করি তিনি এর সঙ্গে যুক্ত। আমরা শেখ হাসিনা জাতীয় যুব ইনস্টিটিউটের নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট করছি।

এছাড়া উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বাংলাদেশ সরকার ও কাতার সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত দ্বি-পাক্ষিক পুঁজি, বিনিয়োগ, উন্নয়ন ও সংরক্ষণ চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।