ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আবারও করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এবার ছড়াচ্ছে ওমিক্রনের নতুন ধরন ‘বিএফ.৭’, যা অতি সংক্রামক ও শনাক্ত করা কঠিন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আশঙ্কা করা হচ্ছে, চীনে নতুন করে ২৫ কোটিরও বেশি মানুষ করোনা সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে ভারতসহ বাংলাদেশেও সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউ মোকাবিলায় সরকারের কোভিডবিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটি ৪ দফা সুপারিশ জানিয়েছে।
রোববার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত বিশ্বে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে বাংলাদেশের করণীয় শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সভায় এসব তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির।
তিনি জানান, চীন-ভারতসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে আবারও করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ছে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু আছে। অসংখ্য মানুষ প্রতিনিয়ত আসা যাওয়া করছে। এই অবস্থায় করণীয় ঠিক করতে শনিবার জাতীয় কারিগরি কমিটির বৈঠক ছিল। কমিটি চারটি বিষয়ে আমাদের পরামর্শ দিয়েছে।
আহমেদুল কবির বলেন, করোনা সংক্রমণের নতুন ভ্যারিয়েন্টে সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের জন্য এটির ভয়াবহতা অনেক বেশি। তাই যারা টিকা নেয়নি তাদের দ্রুত নিয়ে নেওয়ার জন্য কারিগরি কমিটি সুপারিশ করেছে। এছাড়া সেকেন্ড বুস্টার ডোজের (চতুর্থ ডোজ) প্রচার প্রচারণা বৃদ্ধির বিষয়েও বলেছে কমিটি। যারা ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার, প্রেগন্যান্ট নারী ও ষাটোর্ধ যারা আছেন, তাদেরকে দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ দ্রুততম সময়ে নিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
‘দ্বিতীয় সুপারিশ হলো যাদের কোমরবিড কন্ডিশন রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রটেকটিভ কেয়ার যেমন- মাস্ক ব্যবহার করা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করা এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকার বিষয়ে কারিগরি কমিটি থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, কারিগরি কমিটির সভায় তৃতীয়ত যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা হলো বিমানবন্দর, স্থলবন্দরসহ সব পোর্টগুলোতে পরীক্ষা জোরদার করা। রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পোর্টগুলোতে চিঠি দিয়েছেন, বিমানবন্দর, স্থলবন্দর থেকে শুরু করে সমস্ত জায়গায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের অ্যান্টিজেন টেস্ট করে তাদের আইসোলেট করা বা তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া। এছাড়াও যেসব দেশে করে করোনা আক্রান্ত হচ্ছে, সেসব সন্দেহভাজন দেশ থেকে যারা আসবেন, তাদের মধ্যে উপসর্গ থাকলে দ্রুত পরীক্ষার আওতায় এনে যেকোনো ভাবে এটিকে রিস্ট্রিক্ট করা, যাতে নতুন ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাবটি আমাদের দেশে না ঢুকতে পারে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা আইইডিসিআরকে নির্দেশনা দিয়েছি, যদিও দেশে বর্তমানে আক্রান্ত সংখ্যা বেশি হচ্ছে না, তারপরও আমরা বলেছি যাদেরই সংক্রমণ পজিটিভ আসবে, তাদের যেন জেনেটিক সিকোয়েন্স করে সংক্রমণের নতুন ভ্যারিয়েন্ট আছে কিনা সেটি যেন পরীক্ষা করা হয়।
আহমেদুল কবির আরও বলেন, কারিগরি কমিটির সভায় বলা হয়েছে, দ্বিতীয় বুস্টার ডোজে ফাইজারের যে টিকা দেওয়া হচ্ছে, সেটির মেয়াদ ফাইজার কোম্পানিই এক্সটেনশন করেছে। এ বিষয়ে ডিজিডিএ অ্যাপ্রোভাল দিয়েছে, জাতীয় কারিগরি কমিটিও বলেছে সেই ভ্যাকসিনটি দ্রুত দিয়ে দেওয়ার জন্য। একই সঙ্গে এটি নিয়ে যেনকোনো কনফিউশান তৈরি না হয়, সে বিষয়েও কারিগরি কমিটি নির্দেশনা দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে কারিগরি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, কোভিড সংক্রমণের নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আমাদের সতর্ক হতে হবে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। মানুষের মধ্যে সতর্কতা নেই বললে চলে।
তিনি বলেন, মানুষ একদম স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে ভুলে গেছে। যেহেতু সংক্রমণ বাড়ছে আবারও পাবলিক প্লেসে মাস্ক পরা, দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি। আবারও সচেতনতা বাড়াতে হবে। বুস্টার ডোজ যারা নেয়নি, তাদের দ্রুত টিকা নিয়ে নিতে হবে।
এ সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশিদ আলম বলেন, টিকার মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে একটি ভুল বুঝাবুঝি তৈরি হয়েছে। টিকা নিয়ে কনফিউশানের কারণ নেই। টিকা মেনুফ্যাকশন কমিটি টিকা নিয়ে কাজ করে। তাদের সঙ্গে কথা বলেই টিকার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এটা নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই।
তিনি বলেন, সারাবিশ্বে কোভিড মহামারি বেড়ে গেছে। চীনে অসংখ্য মানুষ আবারও আক্রান্ত হচ্ছে। টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের জন্য ভয় বেশি। তাই সবাইকে টিকা নিয়ে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।
সংক্রমণ আবারও বাড়লে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সতর্ক রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ডিএনসিসিসহ কোভিড হাসপাতাল যেগুলো রয়েছে, তাদের সঙ্গে আমরা মিটিং করছি। তাদের প্রস্তুত থাকতে বলেছি। আইসোলেশন ইউনিটগুলোকে প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। অধিদপ্তর সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে সতর্ক এবং প্রস্তুত আছে।