ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: সঠিক সময়ে টিকা প্রয়োগ করতে না পেরে ফাইজারের টিকা মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার সময় তিন মাস বাড়িয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সরকারি এ সংস্থাটির দাবি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও টিকাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটির অনুমোদনে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
দেশে ১২ বছরের বেশি বয়সীদের এখন ফাইজারের টিকা দেওয়া হচ্ছে। এই টিকার ভায়ালে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ লেখা আছে ৩০ নভেম্বর ২০২২। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দেশের কোথাও মেয়াদোত্তীর্ণ করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে না। এই টিকা ২০২৩-এর ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে।
এদিকে সারাদেশে করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে ২০ ডিসেম্বর থেকে। চতুর্থ ডোজ হিসেবে মূলত ফাইজারের টিকাই দেওয়া হচ্ছে। দেশের কয়েকটি জায়গায় মেয়াদোত্তীর্ণ টিকা দেওয়া হচ্ছে বলে সাধারণ মানুষ অভিযোগ করেছেন। এই কারণে অনেকে কেন্দ্রে এসে টিকা না নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সদ্যবিদায়ী করোনা টিকা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, এই টিকার মেয়াদের ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন আছে। এ বিষয়ে সারাদেশের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়েছে। যেসব টিকার ভায়ালে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর লেখা, সেগুলো আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। এতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে তাদের তৈরি করোনার টিকার মেয়াদোত্তীর্ণের সময়সীমা বাড়ানোর কথা জানিয়েছিল। তাতে তারা বলেছিল, তৈরির ১২ মাসের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার কথা এমন টিকা ১৫ মাস পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। আবার তৈরির ৯ মাসের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার কথা এমন টিকা ১২ মাস পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং করোনা টিকার সংগ্রহ ও বিতরণের বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স বিষয়টি সদস্য দেশগুলোকে অবহিত করেছে।
ফাইজারের টিকার মেয়াদোত্তীর্ণের বিষয় নিয়ে টিকাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটি ৫ সেপ্টেম্বর সভা করে। সভার কার্যবিবরণীতে টিকার মেয়াদ তিন মাস বৃদ্ধির অনুমোদন দেওয়া হয়। এদিকে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ১১ নভেম্বর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে লেখা চিঠিতে জানায়, ফাইজারের টিকার মেয়াদকাল ১২ মাস।
ডব্লিউএইচওর এক সাবেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এখনও কোনো দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ টিকা প্রয়োগের নজির নেই। করোনার মতো ভয়ংকর ভাইরাসের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তিনটি কমিটি থাকে, তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে, তারপর এটি কতটা গ্রহণযোগ্য, সে বিষয়ে প্রতিবেদন দেয়। এসব প্রক্রিয়া শেষ করতে দীর্ঘ সময় লাগে। কিন্তু এত অল্প সময়ে কীভাবে অনুমোদন পেয়েছে, আমাদের জানা নেই।’
ডব্লিউএইচওর সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মো. মুজাহেরুল হক বলেন, ‘সাম্প্র্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (এফডিএ) যেসব টিকার মেয়াদ ফুরিয়েছে, তার বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। এতে তারা দেখেছে, মেয়াদ শেষ হওয়া টিকাগুলো আরও ৩ থেকে ৯ মাস পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। তাতে কোনো ধরনের ক্ষতি হবে না।